রহস্যজনক বিড়ম্বনায় বিডিনিউজ

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ও সংবাদমাধ্যমটির প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী সম্প্রতি যে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন তার নেপথ্যে কি সরকার সমর্থক এক প্রভাবশালী ব্যবসায়ী কলকাঠি নাড়ছেন?

রহস্যজনক বিড়ম্বনায় বিডিনিউজ
তৌফিক ইমরোজ খালিদী, প্রধান সম্পাদক, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম 

গত বছর ১৩ অক্টোবর বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় নিউজ পোর্টাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম একটি প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানায় যে তারা এলআর গ্লোবাল নামে একটি “শীর্ষস্থানীয় তহবিল ব্যবস্থাপনা কোম্পানি” থেকে ৫০ কোটি টাকার বিনিয়োগ পেয়েছে। বিডিনিউজের প্রধান সম্পাদক ও অন্যতম মালিক তৌফিক ইমরোজ খালিদীকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “গত ১৩ বছরে আমরা যেই ধারার সাংবাদিকতা অনুসরণ করেছি, এই বিনিয়োগ তার খুবই উৎসাহব্যাঞ্জক এক স্বীকৃতি।’’ এলআর গ্লোবালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রিয়াজ ইসলাম বলেন, “৩০ বছর ধরে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে পারি, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের মতো সম্ভাবনাময় প্রতিষ্ঠান আমি খুব কমই দেখেছি।” তিনি আরো বলেন, “বিডিনিউজের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের রয়েছে অপার সম্ভাবনা।”

বিডিনিউজের এই উদ্দীপনাময় সময় স্থায়ী হয়েছিল বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) এক জরুরী বৈঠক অবদি। ওইদিনই বৈঠকটি শেষে কমিশন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় যে বিএসইসির মিউচুয়াল ফান্ড সম্পর্কিত বিধিমালা লঙ্ঘন করায় ওই বিনিয়োগ চুক্তিটি স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে।

এরকম একটি সিদ্ধান্ত যদি ডেইলি স্টার বা প্রথম আলোর বিরুদ্ধে নেওয়া হত, তাহলে ধারণা করা যেতো যে এটি একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। কারণ স্বাধীন পত্রিকা দুটি দীর্ঘদিন ধরেই সরকারের গলার কাঁটা হয়ে বিঁধে আছে। সেজন্য সংবাদপত্র দুটিকে বেশ আঘাতও সইতে হয়েছে।

কিন্তু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এই দুটি সংবাদপত্র থেকে অনেকখানি আলাদা। যদিও সংবাদমাধ্যমটি কখনো খোলামেলাভাবে দলীয় লেজুড়বৃত্তি করেনি এবং এখনো বাংলাদেশে এটি বিশ্বাসযোগ্য সংবাদসূত্র হিসেবে পরিচিত, তবুও ২০০৯ সাল থেকে ক্রমেই একে আওয়ামী লীগ সরকারের চিয়ারলিডার হিসেবে দেখা শুরু হয়। মনে করা হয় যে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রীর জন্য সহায়ক হয় এমন প্রতিবেদন প্রচার করে থাকে (যদিও সম্পাদক খালিদী এ কথা অস্বীকার করবেন)। এমনকি, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে খালিদী এডিটরস গিল্ড প্রতিষ্ঠা করেন, যেটি অধিকতর স্বাধীন এডিটর্স কাউন্সিলের সরকারবান্ধব সংস্করণ।

এসকল কারণেই এমনটি ভাবা যায় না যে আওয়ামী লীগ সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের মতো সরকারবান্ধব সংবাদমাধ্যমকে শাস্তি দিতে বিনিয়োগ চুক্তি স্হগিত করে দেবে। ফলে মনে হয় যে এটি বিএসইসির স্বাধীন ও নিরপেক্ষ সিদ্ধান্ত হলেও হয়ে থাকতে পারে।

কিন্তু, মাত্র দুই সপ্তাহ পরেই বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠে। গত বছর ৪ নভেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তৌফিক ইমরোজ খালিদীকে নোটিশ দিয়ে দুর্নীতির কিছু অভিযোগের বিষয়ে তথ্য জানতে চায়। দুদকের একজন মুখপাত্র ওই সময় বলেন, জ্ঞাত উৎসের বাইরে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে খালিদীর সম্পদ অর্জনের বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখছেন। এরপর খালিদীর ব্যাংক একাউন্টগুলো জব্দ করা হয়। হঠাৎ করেই তার নিউজ পোর্টাল বিডিনিউজ বিপদে পড়ে যায়।

লেডি ব্র্যাকনেলের (অস্কার ওয়াইল্ডের নাটক দ্য ইম্পর্ট্যান্স অব বিইং আর্নেস্ট-এর চরিত্র) কথা ধার করে বলা যায়, আপনার বিপক্ষে নিয়ন্ত্রক সংস্থার একটি সিদ্ধান্ত হয়তো অসতর্কতার ইঙ্গিত বহণ করে, কিন্ত বাংলাদেশে অল্প কয়েকদিনের মধ্যে পর পর দুটি সিদ্ধান্ত আপনার বিরুদ্ধে যাওয়া হয়রানির লক্ষণ।

হঠাৎ করেই সবকিছু যেন খুবই ভিন্ন মনে হতে শুরু করে। তাহলে কি নির্যাতিত বাংলাদেশি সম্পাদক ও সংবাদমাধ্যম মালিকদের ক্রমবর্ধমান তালিকায় তৌফিক ইমরোজ খালিদীর নামও যুক্ত করা উচিত? তিনি কি একুশে টেলিভিশনের প্রাক্তন মালিক আবদুস সালাম, যিনি ২০১৫ সালে পর্নোগ্রাফির আইনে কারাবরণ করেছিলেন, তার মতো ভাগ্য বরণ করতে যাচ্ছেন? কিংবা ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনামের মতো, যিনি ২০১৬ সালে ১৭টি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার সম্মুখীন হয়েছিলেন? নাকি প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের মতো, যিনি এখন তার পত্রিকার আয়োজিত অনুষ্ঠানে দুর্ঘটনায় এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর জন্য ফৌজদারি মামলার মুখোমুখি?

আবদুস সালাম, মাহফুজ আনাম, মতিউর রহমান এবং অন্য কয়েকজন মালিক ও সম্পাদকদের বিরুদ্ধে মামলাগুলো করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার নিজে, অথবা সরকারের পক্ষ হয়ে কেউ। কিন্তু খালিদীর দুর্দশা অন্য কিছুর ইঙ্গিতবাহী। সেটি হলো, বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা শুধু সরাসরি রাষ্ট্রীয় দমনপীডন ও সেন্সরশিপের ঝুঁকিতেই থাকে না, বরং ক্ষমতাশালী ব্যবসায়ীদের হুমকিতেও থাকে, যারা ব্যক্তিগত স্বার্থরক্ষায় রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সংস্থায় থাকা নিজেদের প্রভাবও ব্যবহার করে।

বিএসইসি ও দুদক কীভাবে বিডিনিউজের বিরুদ্ধে ওই সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছিল, তাসম্পর্কে এখনও অনেক কিছুই জানা যায়নি। তবে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এলআর গ্লোবাল চুক্তি সম্পর্কে ওয়াকবিহল এমন বেশ কয়েকজন নিশ্চিভাবেই মনে করেন যে এই চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্তের পেছনে চৌধুরী নাফিজ সারাফাতের হাত থাকতে পারে। সারাফাত হচ্ছেন বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় মিউচুয়াল ফান্ড ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান রেইস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রধান শেয়ারধারীদের একজন।

সারাফাত সাধারণ মানুষের কাছে তেমন পরিচিত নন, কিন্তু তিনি বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী সরকারপন্থী ব্যবসায়ীদের মধ্যে একজন। তার বাড়ি প্রধানমন্ত্রীর জন্মস্থান গোপালগঞ্জে। এখন তিনি পদ্মা ব্যাংকের (আগের ফার্মার্স ব্যাংক) চেয়ারম্যান। পদ্মা ব্যাংক রেইস অ্যাসেট ম্যনেজমেন্টের মিউচুয়াল ফান্ড থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বিনিয়োগ পেয়েছে। বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের ভেতরকার খবর রাখেন, কিন্তু বিডিনিউজের চুক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন, এমন একজন সারাফাত সম্পর্কে বলেন, শেয়ারবাজার জগতে তার (সারাফাত) বিশাল প্রভাব। এই খাতের সবাই “মনে হয় তাকে নিয়ে আতঙ্কিত।” আরেকজন পর্যবেক্ষক বলেন, “সারাফাত খুবই ক্ষমতাশালী। তিনি নাম্বার ওয়ান, অর্থ্যাৎ প্রধানমন্ত্রীর খুবই ঘনিষ্ঠ। তার সাথে সরাসরি যোগাযোগ আছে।”

সারাফাতের প্রভাবের একটি উদাহরণ প্রায়শই আর্থিক খাতের সাংবাদিক ও বিশ্লেষকরা দিয়ে থাকেন। সেটি হলো, ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্বালে অর্থমন্ত্রীর ওপর প্রভাব খাটিয়ে তার কাছ থেকে রেইস অ্যাসেট ম্যনেজমেন্ট মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও “ক্লোজড এন্ড মিউচুয়াল ফান্ড” পরিচালনা অব্যাহত রাখার অনুমতি আদায় করে নেয়। এই সিদ্ধান্তের কারণে সারাফাতের কোম্পানির বিশাল লাভ হয়েছে। কেননা, তহবিলের মেয়াদ শেষ হয়ে এলে ক্লোজড এন্ড মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগকারীদের অর্থ ফেরত দেবার ক্ষেত্রে কোম্পানিটির সমস্যায় পড়ার শঙ্কা ছিল। কিন্তু এখন সেই ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়া ছাড়াও, উল্টো অব্যাহত কমিশন প্রাপ্তি নিশ্চিত হয়েছে। এই বিষয়ে একটি মামলা এখন হাইকোর্টে চলমান রয়েছে। রেইস ও বিএসইসি উভয়েই সেই মামলার বিবাদী।

বলা হচ্ছে, সারাফাতের এই প্রভাবের কারণেই বিডিনিউজ ও এর প্রধান সম্পাদককে এই সঙ্কটের মুখে পড়তে হয়েছে। রেইসের অন্যতম প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী এলআর গ্লোবাল, যেটি বিডিনিউজের অংশ কিনে নিতে চেয়েছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিনিয়োগ ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত চর্চা নিয়ে প্রতিষ্ঠান দুটির মধ্যে মারাত্মক দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। ইমেইলের মাধ্যমে সারাফাতের কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিডিনিউজের এবং এল আর গ্লোবালের চুক্তির ব্যাপারে বিএসইসির সিদ্ধান্তে কোনো ধরণের প্রভাব থাকার কথা পুরোপুরি অস্বীকার করেন। কিন্তু এই চুক্তির ব্যাপারে ওয়াকবিহল অনেকেই বলেছেন, সারাফাত বেশ উদ্বিগ্ন ছিলেন যে এলআর গ্লোবাল বিডিনিউজকে ব্যবহার করে তার ও তার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করতে পারে।

সারাফাতের উদ্বেগের কিছুটা ভিত্তিও অবশ্য আছে। ২০১৯ সালের জুন মাসে (চুক্তি সই হওয়ার চার মাস আগে) বিডিনিউজ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের চেয়ারপারসন হিসেবে সারাফাত কীভাবে নিজের বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য পূর্বাচলে একটি জমির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন, যেটি মূলত একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। বিডিনিউজ ও এলআরগ্লোবাল এর মধ্যকার চুক্তিতে বিএসইসির হস্তক্ষেপের পরপরই বিডিনিউজ সারাফাত ও তার কোম্পানির বিরুদ্ধে পরপর আরও তিনটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছিলো ২১ অক্টোবর। প্রতিবেদনটিতে প্রশ্ন তোলা হয় সেই কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি নিয়ে। প্রতিবেদনে বলা হয় যে বিশ্ববিদ্যালয়টি সরকারী নিয়মনীতির বিরুদ্ধে গিয়ে রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত একটি আবাসিক এলাকার মধ্যে ২৪ তলা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের অনুমতি পেয়েছে। অন্য দুইটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয় ২২ ও ২৭ অক্টোবরে। সেই প্রতিবেদন দুটিতে বলা হয় যে রেইস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের ১০টি মিউচুয়াল ফান্ডের অবস্থা খারাপের দিকে ও এগুলোর মুল্য অর্ধেকে নেমে এসেছে। একটি প্রতিবেদনে বলা হয় যে রেইস তাদের মিউচুয়াল অ্যাসেটের ৩৫% খুবই ঝুকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেছে, যা কোম্পাটিটির ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সাথে একপ্রকার প্রতারণার শামিল।

এই প্রতিবেদনগুলোর মাধ্যমে বিডিনিউজ সারাফাতের পরিচালিত এসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিটির গ্রহণযোগ্যতা ও সততা নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তোলে। প্রতিবেদনগুলো দেখে মনে হয় যে এগুলো ভালোভাবে গবেষণা করেই প্রস্তুত করা হয়েছে এবং যৌক্তিক সাংবাদিকতাই করা হয়েছে। ঠিক এ ধরণের প্রতিবেদন হতে পারে আশঙ্কায় সারাফাত বিডিনিউজ-এলআর গ্লোবাল চুক্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। প্রতিবেদনগুলো প্রকাশের এক সপ্তাহের মধ্যেই দুদক খালিদীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে।

দুদকের তদন্তের ঘোষণার কয়েকদিন পরে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় খালিদী স্পষ্টতই ইঙ্গিত দেন কারা এর পিছনে আছেন, যদিও তিনি কারও নাম প্রকাশ করেননি, “আমরা এমন সব প্রতিবেদন করেছিলাম যা প্রভাবশালী একটি মহলকে আঘাত করেছিলো। আমার সহকর্মীদের করা সেই সৎ ও আদর্শ প্রতিবেদনগুলোর মাশুল এখন আমাদের দিতে হচ্ছে। যদি তারা আমাদের প্রতিবেদনে কোনো ভুল বের করতে পারতো, তাহলে তো তারা মামলা করতে পারতো। তারা কেন মামলা করেনি? তারা কেন এই পথ অবলম্বন করেছে?”

সারাফাত দাবি করেছেন যে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে এলআর গ্লোবালের বিনিয়োগ বন্ধ করার বিষয়ে বিএসইসির সিদ্ধান্ত, কিংবা পরবর্তীতে খালিদীর ব্যাপারে তদন্তের বিষয়ে দুদকের সিদ্ধান্ত, কোনোটির সঙ্গেই তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন না। তিনি বলেন, তাকে যে প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে দাবি করা হয় তা “অপ্রমাণসিদ্ধ ও যাচাই-অযোগ্য শোনা কথা।” তার যে ক্ষমতার কথা বলা হয় তা “ভিত্তিহীন” ও “অমূলক”। মেয়াদোত্তীর্ণ মিউচুয়াল ফান্ড চলমান রাখার বিষয়ে অর্থ মন্ত্রনালয়কে প্রভাবিত করার ব্যাপারে তিনি তিনি মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। তবে তিনি দাবি করেন, শেয়ারবাজারে বৃহত্তর স্বার্থ রক্ষার জন্যই সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছিলো।

বিএসইসির সিদ্ধান্তের ব্যাপারে সারাফাত বলেন, “[এটি] বিএসইসি করেছিলো এবং আমার পক্ষ থেকে এখানে কোনও প্রভাব ছিল না।” ২০১৫ সালে এলআর গ্লোবালের ওপর আরোপিত বিএসইসির জরিমানার দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, বিডিনিউজে এলআর গ্লোবালের ওই বিনিয়োগ নিয়ে বিএসইসির তদন্ত করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

দুদকের তদন্তের বিষয়ে তিনি বলেন, তিনি খালিদীর বিপক্ষে কোনো অভিযোগ দাখিল করেননি। খালিদীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে তার নিজেরই কার্যকলাপের কারণে। বিডিনউজে প্রকাশিত তার বিরুদ্ধে করা প্রতিবেদনগুলোর ব্যাপারে সারাফাত বলেন, সেগুলো নিয়ে বিডিনিউজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চাইলে, তিনি আইনি সুরক্ষার আশ্রয় নিতে পারতেন।

সারাফাত অস্বীকার করলেও, বিডিনিউজ ও খালিদীর ক্ষেত্রে যা ঘটেছে তা কালানুক্রমিকভাবে খেয়াল করলেও তার দিকে সন্দেহের আঙ্গুল উঠে। সম্প্রতি, একটি অনুষ্ঠানেও সারাফাতকে বিডিনিউজের দুর্দশা নিয়ে বেশ আত্মতুষ্টি প্রকাশ করতে দেখা গেছে।

বিডিনিউজের এই ঘটনা বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের লাগামছাড়া শক্তিমত্তার বিপদের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। বেসরকারি খাতের এই প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা কথিত স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে পর্যন্ত নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করার ক্ষমতা রাখে। এই অধ্যায় থেকে বোঝা যায়, কীভাবে এই ক্ষমতা দেশের সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপরেও প্রভাব ফেলতে পারে। এই ঘটনা প্রমাণ করে যে খালিদীর মত মানুষেরা ক্ষমতার যতই কাছে থাকুক না কেন, সব সময় তাদের চেয়েও ক্ষমতাশালী কেউ না কেউ থাকবেই। সুতরাং, সীমা অতিক্রম করা মানে নিজেরই বিপদ ডেকে আনা।●

ডেভিড বার্গম্যান নেত্র নিউজের ইংরেজী বিভাগের সম্পাদক।