ওরা ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলার যত সমস্যা

ফেসবুকে লেখালেখি করায় বাংলাদেশে ১১ ব্যক্তির বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে, তা শুধু বাকস্বাধীনতার মারাত্মক লঙ্ঘনই নয়, ফৌজদারী আইনের হাস্যকর ব্যবহারের নমুনাও বটে।

ওরা ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলার যত সমস্যা

ফেসবুকে পোস্ট করা ও শেয়ার দেওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘণের অভিযোগ এনে ১১ ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৫ মে একটি ফৌজদারি মামলা দায়ের করেন র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) এক কর্মকর্তা। এদের চার জন — কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, লেখক মুশতাক আহমেদ, নাগরিক সংগঠন রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য দিদারুল ইসলাম ভূঁইয়া এবং বিএলই সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের শেয়ারহোল্ডার-পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন — ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছেন। জামিন আবেদন প্রত্যাখান করে ম্যাজিস্ট্রেট তাদেরকে জেলে বা পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছেন। অভিযুক্ত অপর সাত জন হলেন সুইডিশ-বাংলাদেশী সাংবাদিক তাসনিম খলিল (নেত্র নিউজের এডিটর-ইন-চিফ), যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত সাংবাদিক শাহেদ আলম, জার্মানিতে নির্বাসিত ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন, শায়ের জুলকারনাইন, আশিক ইমরান, স্বপন ওয়াহিদ ও ফিলিপ শুমাখার। তারাও গ্রেফতারের ঝুঁকিতে রয়েছেন, যদি পুলিশ তাদের নাগাল পায়।

এদের সবাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা, জাতীয় সঙ্গীত অথবা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে অপপ্রচার-প্রচারণা চালানোর অভিযোগে অভিযুক্ত। তাদের বিরুদ্ধে করা অভিযোগের মধ্যে আরও রয়েছে “রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা” অথবা “বিভ্রান্তি ছড়ানোর” উদ্দেশ্যে তথ্য প্রকাশ ও অপপ্রচার করা; এমন তথ্য প্রকাশ বা সম্প্রচার করা “যা জনগণের মধ্যে ঘৃনা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করবে অথবা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করবে বা বিভ্রান্তি, অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে বা আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাবে বা ঘটানোর হুমকি তৈরি করবে” (বিস্তারিত জানতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দেখুন)।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই মামলা ও গ্রেফতারকে বাকস্বাধীনতার মতো মৌলিক মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন বলে ব্যাপক নিন্দা জানিয়েছে। অভিযুক্তদের অনেকেই সরকারের বেশ সুপরিচিত সমালোচক। তাই এই মামলার মাধ্যমে রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে সরকারের দমন-পীড়নের চেষ্টার তীব্রতাই বৃদ্ধি হয়েছে বলে মনে হয়।

ডিজিটাল মাধ্যমে করা মন্তব্যকে অপরাধ হিসেবে আমলে নিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে অভিযোগ গঠনের ক্ষেত্রে প্রধান সমালোচনা হচ্ছে যে ফৌজদারি অপরাধের ধরণ। গণতান্ত্রিক দেশে গ্রহণযোগ্য সীমার মধ্যে বিবেচিত অনেক মন্তব্য, সমালোচনা, ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপকেও বেশ অস্পষ্ট ও স্থূল এই আইনের আওতায় ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সে কারণেই অনেকে যুক্তি দেখান যে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন থেকে হয় সংশ্লিষ্ট ধারাগুলো বাদ দেয়া হোক অথবা অন্তত আইনটি ব্যাপকভাবে সংশোধন করা হোক।

এই আইন নিয়ে আরেকটি উদ্বেগের কারণ হলো এর প্রয়োগের ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাচারিতা ও রাজনীতিকরণ। লোকজনের বিরুদ্ধে ফেসবুকে বা অন্য কোন ডিজিটাল মাধ্যমে প্রায়ই এমন সব বিষয় পোস্ট করার কারণে অভিযোগ গঠন করা হয়, যা এই আইনের সবচেয়ে দূরতম সংজ্ঞার আওতায়ও পড়ে না। তার মানে হচ্ছে, সরকার, রাজনীতিবিদ ও রাজনৈতিকভাবে যোগাযোগ আছে এমন ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা যাদেরকে কোন ধরণের হুমকি বা সমস্যাজনক মনে করেন, মূলত তাদেরকে গ্রেফতার, হয়রানি, ভয়-ভীতি প্রদর্শন করতে এই আইন ব্যবহার করা হয়।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের ও গ্রেফতারের পক্ষে যথাযথ যৌক্তিকতা যে থাকে না, তা প্রায়ই দৃশ্যমান হয়ে ওঠে মামলার এজাহার ও নথিপত্র বিশ্লেষণ করলে। এজাহার হলো থানায় দায়েরকৃত নথি, যেখানে বর্ণনা করা হয় কেন অভিযুক্ত ব্যক্তি(রা) অপরাধ করেছেন এবং কেনইবা তাদেরকে আটক করা উচিৎ। ৫ মে ১১ জন ব্যক্তির বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার এজাহারটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োগে স্বেচ্ছাচারিতা ও রাজনীতিকরণের একটি উৎকৃষ্ট উদাহরন।

এজাহারটির প্রথম সমস্যা হচ্ছে, মিনহাজ মান্নান ইমন, দিদারুল ইসলাম ভূঁইয়া, আসিফ মহিউদ্দিন ও শাহেদ আলমের বিরুদ্ধে করা অভিযোগের অংশবিশেষ। এজাহারে অভিযুক্ত ১১ জনের সকলের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ হচ্ছে, “আই এ্যাম বাংলাদেশী” ফেসবুক পেজ বা নিজেদের ফেসবুক প্রোফাইল ব্যবহার করে “তারা অনেক দিন ধরে জাতির জনক, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও করোনাভাইরাস মহামারি নিয়ে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বা সুনাম ক্ষুণ্ণ করতে বা জনগণের মধ্যে অস্থিরতা, বিভ্রান্তি, বিশৃঙ্খলা ছড়ানোর উদ্দেশে অপপ্রচার বা গুজব ছড়াচ্ছেন।”

কিন্তু, মিনহাজ, দিদারুল, আসিফ ও শাহেদ আলম কীভাবে “আই এ্যাম বাংলাদেশী” পেজের সাথে সংশ্লিষ্ট, বা তাদের নিজেদের ফেসবুক প্রোফাইলে কখন, কীভাবে বা কোন পোস্টে তারা অপপ্রচার ছড়িয়েছেন, এসব কোনো কিছুই এজাহারে উল্লেখ করা হয়নি।

দ্বিতীয় সমস্যা হচ্ছে, ফেসবুক মেসেঞ্জারে ও হোয়াটসঅ্যাপে “রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক চ্যাটিং”। এজাহারের দাবি অনুযায়ী তাসনিম খলিল, শায়ের জুলকারনাইন, শাহেদ আলম ও আসিফ মহিউদ্দিনের সাথে আহমেদ কিশোর এই ধরণের আলাপ-আলোচনা করেছেন। পাশাপাশি, মুশতাক আহমেদ একই ধরণের চ্যাটিং করেছেন মিনহাজ মান্নান ইমন ও দিদারুল ইসলাম ভূঁইয়ার সাথে। এই অস্পষ্ট ও অনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া, এজাহারে অভিযোগের পক্ষে কোন সারবত্তা নেই।

অভিযুক্তরা যদি ব্যক্তিগত কথোপকথনে সেই ধরণের আলোচনা করেও থাকেন, তাহলেও প্রশ্ন থেকে যায় যে, ব্যক্তিগত আলাপচারিতা কী করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অপরাধ হতে পারে? এজাহারে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যেই দুই ধারায় — ২৫(১-খ) ও ৩১ — “রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বা সুনাম ক্ষুণ্ণ” ও “বিভ্রান্তি অথবা বিশৃঙ্খলা” ছড়ানোর অভিযোগ আনা হয়েছে, সেই অভিযোগ প্রমাণের জন্য সেই তথ্য আগে “প্রকাশ অথবা প্রচার” অথবা “প্রকাশ অথবা সম্প্রচার” হতে হবে। এই ব্যক্তিবর্গ ব্যক্তিগত পর্যায়ে যে আলাপ-আলোচনাই করে থাকুন না কেন, তা যেহেতু, “প্রকাশ”, “প্রচার” অথবা সম্প্রচারই হয়নি, তাহলে তা কোনভাবেই এই আইনে অপরাধ নয়।

এই বিষয়টি বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক মিনহাজ মান্নান ইমন, দিদারুল ইসলাম ভূঁইয়া, আসিফ মহিউদ্দিন ও শাহেদ আলমের ক্ষেত্রে, যেহেতু তাদের বিরুদ্ধে এজাহারে ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় ষড়যন্ত্রমূলক বার্তা আদানপ্রদানের অভিযোগ আনা হয়েছে। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, এদের মধ্যে মিনহাজ ও দিদারুল এখন আটক অবস্থায় আছেন।

তৃতীয় সমস্যা হচ্ছে, “আই এ্যাম বাংলাদেশী” ফেসবুক পেজ। ছয়জন অভিযুক্ত অর্থাৎ, শায়ের জুলকারনাইন, আশিক ইমরান, আহমেদ কবির কিশোর, স্বপন ওয়াহিদ, মুশতাক আহমেদ ও ফিলিপ শুমাখারের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ যে, তারা এই অবৈধ বিষয়বস্তু সম্বলিত ফেসবুক পেজটি পরিচালনা করেন বা সম্পাদনা করেন।

যে কেউ এরপর আশা করবেন যে, পেজে কোন পোস্টটি প্রকাশ করায় এই আইনে অপরাধ হয়েছে, তা নিশ্চয়ই এজাহারে উল্লেখ থাকবে। কিন্তু সেখানে পেজের কেবল একটিমাত্র পোস্টের হাইপারলিঙ্ক যুক্ত করা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, “মুজিব বর্ষের ইস্পিশাল ইফতার মেহফিল কবে এবং কোথায় হবে?” এ পোস্ট নিয়ে হয়তো অনেক কিছুই বলা যায়, কিন্তু একে বিকৃত করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় অপরাধ হিসেবে প্রদর্শন করাটা অত্যন্ত কঠিন ব্যাপার।

চতুর্থ সমস্যা হচ্ছে আহমেদ কবির কিশোর, মুশতাক আহমেদ ও তাসনিম খলিলের ফেসবুক প্রোফাইলের বিরুদ্ধে অভিযোগ। বাংলাদেশী সংবাদপত্র দ্য ডেইলি স্টারের এক প্রতিবেদনে যেমনটা বলা হয়েছে, এটা বোঝা কঠিন কীভাবে এজাহারে উদ্ধৃত করা পোস্টগুলো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে। কিশোরের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের পক্ষে এজাহারে তিনটি হাইপারলিঙ্ক উদ্ধৃত করা হয়েছে, যার মধ্যে একটি আবার অকার্যকর। আরেকটি হাইপারলিঙ্কে ২৬ এপ্রিলের একটি পোস্ট দেয়া হয়েছে। সেখানে “করোনার কালে জীবন যেমন” শিরোনামে দুটো কার্টুনের সিরিজ দেওয়া আছে। কার্টুনের উপরে লেখা আছে, “যে জীবন করোনার, তার সাথে মানুষের হোক নাকো দেখা”।

প্রথম কার্টুনে দুইজন মানুষকে দেখা যায়। একজন লম্বা সাদা চুলওয়ালা, হাতে ইনজেকশন আকৃতির একটি রাইফেল। তিনি সম্ভবত মুক্তিযোদ্ধা, স্বাস্থ্য অধিকার কর্মী, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। জাফরুল্লাহ চৌধুরী গত কয়েক সপ্তাহ ধরে একটি অলাভজনক করোনা টেস্ট কিট তৈরি ও সরকারের কাছ থেকে সেটির অনুমোদন পাওয়া নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছিলেন। দ্বিতীয় মানুষটি সম্ভবত সালমান এফ রহমান, যিনি ব্যক্তিগত খাতের একটি ওষুধ কোম্পানির মালিক ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যবসা-বাণিজ্য বিষয়ক উপদেষ্টা। কার্টুনে সালমান এফ রহমানকে বলতে দেখা যায়, “আরে হালা গণ জাফর, আমরা কব্বে আসমানের করোনা সাইজ করার কিট বানাইছি… আর তুই তো আছস জমিনেরটা লইয়া!”

পরের কার্টুনটি সম্প্রতি নিখোঁজ ও পরে গ্রেফতার দেখানো ফটো সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলকে নিয়ে, যার শিরোনাম হচ্ছে, “কাজল কাজোল”। এখানে দেখা যাচ্ছে বিখ্যাত লেখক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের সাক্ষাৎকার নেয়া হচ্ছে। সাংবাদিক জাফর ইকবালকে প্রশ্ন করছেন, “স্যার, সব বুদ্ধিজীবি যখন জিহ্বায় মাস্ক লাগিয়ে আছে তখন আপনি ব্যাকুল হয়ে নিখোঁজ সাংবাদিক কাজলকে খুঁজছেন, ইউ আর এ বেরেভ হার্ট”। জাফর ইকবাল তখন উত্তর দিচ্ছেন, “আরে বেকুব, তুমি কি জানো না, আমার ভাইয়ের ডাক নাম কাজল? আমি তাকে মনে করেছিলাম আর কি!’

এই কার্টুনগুলোতে এমন কিছুই নেই যা কার্টুনিস্টের বিরুদ্ধে আনা অপরাধের অভিযোগের মধ্যে পড়ে।

মুশতাক আহমেদের বিরুদ্ধে এজাহারে দুটি হাইপারলিঙ্ক উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি ফেসবুকে মাইকেল কুমির ঠাকুর নামে একটি পেজ চালান। প্রথম লিঙ্কে গেলে দেখা যায়, তিনি ৩ মে প্রথম আলোর একটি নিউজের লিঙ্ক শেয়ার করেন, যেখানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী গার্মেন্ট কারখানা খোলা নিয়ে একটি মন্তব্য রয়েছে। মুশতাক ওই সংবাদের বিপরীতে মন্তব্য করেন যে, “এই ধরণের সংবাদ দেখার পর যদি আপনি ভেতরে রাগ অনুভব না করেন, তাহলে বুঝবেন যে আপনি সাধারণ মানুষ থেকে অসাধারণ মানুষে পরিণত হয়েছেন। তেলাপোকাও একটা পাখি, আর এই লোকটাও একটা স্বাস্থ্যমন্ত্রী।” শেষ বাক্যটি বহুল প্রচলিত একটি বাংলা প্রবাদকে ভিন্নভাবে লেখা।

দ্বিতীয় লিঙ্কে থাকা পোস্টটি ১ মের, যখন একজন এমপি কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন বলে কয়েকটি সংবাদপত্র রিপোর্ট হয়েছে, কিন্তু তার পরিচয় কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। ফেসবুক পোস্টে মুশতাক ওই বিষয়ে মন্তব্য করেন যে, “করোনা কি যৌন রোগ যে এতে সামাজিক মর্যাদা ক্ষুন্ন হয়? একজন এমপি কোভিড-১৯ পজিটিভ। এই কারণেই সাধারণ রোগীরা তথ্য লুকায়।”

ফের বলতে হচ্ছে, কী করে এসব মন্তব্যের কারণে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা যায়, তা বোঝা দুষ্কর।

তাসনিম খলিলের (নেত্র নিউজের এডিটর-ইন-চিফ) বিরুদ্ধে তিনটি লিঙ্ক জমা দেয়া হয়েছে। তিনি ২০০৭ সালে বাংলাদেশ থেকে সুইডেন যান ও তারপর থেকে সেখানেই আছেন। প্রথম লিঙ্কের পোস্টটি এমন: “বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধটি কিন্তু হয়েছিল তাজউদ্দিন আহমেদদের নেতৃত্বে। মুজিবের একটা সিম্বলিক নেতৃত্ব ছিল অবশ্যই, কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে বসে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেওয়াটা তার পক্ষেতো সম্ভব ছিলনা। যুদ্ধের একজিকিউটিভ নেতৃত্ব দিয়েছেন তাজউদ্দিন আর সৈয়দ নজরুল ইসলাম। মুজিবনগর দিবসে এই ইতিহাসটা স্মরণ করা যেতে পারে।” এটি ঐতিহাসিকভাবেই একটি সঠিক মন্তব্য।

আরেকটি লিঙ্ক হলো বেনার নিউজ নামে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের আর্টিকেলসহ করা পোস্ট। উল্লেখ্য, বেনার নিউজের ওয়েবসাইট বাংলাদেশ থেকে ব্লক করা হয়েছে। ওই আর্টিকেলের শিরোনাম ছিল, “ফাঁস হওয়া জাতিসংঘ নথি: করোনাভাইরাসে মারা যেতে পারেন ২০ লাখ বাংলাদেশি”। মূল নিবন্ধে ফাঁস হওয়া জাতিসংঘের একটি নথি নিয়ে নেত্র নিউজে পূর্বে প্রকাশিত আর্টিকেলের কথা উল্লেখ করা হয়। বেনার নিউজের ওই নিবন্ধে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্ধৃতিও আছে, যেখানে তিনি স্বীকার করেছেন, তিনি নিজেই জাতিসংঘের নথিটি দেখেছেন।

এজাহারের উপর ভিত্তি করে এটা বলা কঠিন কী কারণে চারজন মানুষকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করা হলো বা গ্রেফতারের যৌক্তিকতা কী। অতএব, এটা ধরে নেয়া যৌক্তিক হবে, যে কারণেই হোক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এই ১১ জনকে গ্রেফতার ও ভয় দেখানোর অজুহাত তৈরি করে দিয়েছে। এটা গভীর উদ্বেগের ব্যাপার যে, ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এসব বিবেচনায় নেননি ও সাথে সাথেই আটককৃতদের জামিন দেননি। একটি স্বাধীন বিচার বিভাগ দেখতে পেতো যে, এই এজাহারটি একদল ভিন্নমতাবলম্বীদের শায়েস্তা করার মাধ্যম মাত্র। আর এটি এমন অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা হয়েছে, যেই অপরাধ অভিযুক্তরা করেনইনি।●

ডেভিড বার্গম্যান নেত্র নিউজের ইংরেজি বিভাগের সম্পাদক।