যুক্তরাজ্যের নির্বাচনে টিউলিপের অসততা ও আওয়ামী লীগের সহায়তা

যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির নেতা স্যার কিয়ার স্টারমার নির্বাচনে বিদেশী হস্তক্ষেপের বিরোধী। দেশটির নির্বাচনে রাশিয়ান প্রভাব নিয়ে সেখানে এক ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে দেরি হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের তীব্র সমালোচনা করেছেন কিয়ার স্টারমার। তাহলে সেই তিনিই কেন তার পাশের আসনের এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের বিষয়ে কিছু বলার বা করার প্রয়োজন বোধ করেন না? হ্যাম্পস্টেড ও কিলবার্ন আসনে লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ সিদ্দিক। তিনি তার ২০১৯ এর নির্বাচনী প্রচারণায় বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের টানা সহযোগিতা পেয়েছেন। মাত্র দেড় বছর আগের এ ঘটনা প্রথম প্রকাশিত হয় চ্যানেল ফোর নিউজে

এটা ঠিক যে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা চলে না। যুক্তরাজ্যের নির্বাচনে রাশিয়ার প্রভাব দেশটির নিরাপত্তার জন্য যতটা চিন্তার বিষয় হবে, এর কিয়দাংশও হবে না বাংলাদেশের ক্ষেত্রে। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষুদ্র এই দেশ স্বৈরশাসনের ক্ষেত্রে খুব সম্ভবত এই প্রাক্তন বিশ্বশক্তিকে টপকে গিয়েছে — বিরোধী দল দমন, বিরুদ্ধ মত স্তব্ধ করা, বিচারবহিৰ্ভূত হত্যা, গুম এবং ভুয়া নির্বাচন; কী ঘটছে না কর্তৃত্ববাদি আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে? এই কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী লীগ তার শক্তি, সামর্থ কীভাবে শেখ পরিবারের স্বার্থ হাসিলে ব্যয় করছে, তা বুঝতেই যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে টিউলিপের উত্থান বিষয়ক আলাপটা জরুরী।     

যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ হলো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একটি সাংগঠনিক শাখা। দলটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বিদেশী শাখাগুলো বাংলাদেশের জেলা শাখার সমগোত্রীয়। কাগজে-কলমে যুক্তরাজ্য শাখা নিজেদের নেতৃবৃন্দ নির্বাচনের এখতিয়ার রাখলেও প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের নেতারাই এই নির্বাচন করে দেন। ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই লন্ডনের হিলটন হোটেলে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতৃবৃন্দের নাম ও পদবী ঘোষণা করেন।      

আওয়ামী লীগ যে কারণে টিউলিপকে সহযোগিতা করতে চায়, তা খুবই খোলামেলা।  বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টিউলিপের আপন খালা, আপন চাচা হলেন তারেক আহমেদ সিদ্দিক। খালাতো ভাই সজীব ওয়াজেদ প্রধানন্ত্রীর উপদেষ্টা, ভাই রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রধান প্রচারক এবং টিউলিপের মা শেখ রেহানাকে তো হাসিনার একজন সম্ভাব্য উত্তরসূরি বলে মনে করা হয়। 

যুক্তরাজ্যে কাউন্সিলর এবং সংসদ সদস্য হবার আগে টিউলিপ নিজেই আওয়ামী লীগের মুখপাত্র হিসেবে ভূমিকা পালন করেছেন। ফলে আওয়ামী লীগ এবং টিউলিপ সিদ্দিকের মধ্যকার নিবিড় সম্পর্ক নিয়ে কোনো সন্দেহের সুযোগ নেই।   

টিউলিপ সিদ্দিকের ওয়েব সাইট থেকে স্ক্রিন শট। এখানে যা দেখা যাচ্ছে, তা পরবর্তীতে সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
টিউলিপ সিদ্দিকের ওয়েব সাইট থেকে স্ক্রিন শট। এখানে যা দেখা যাচ্ছে, তা পরবর্তীতে সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

তবে ২০১৫ সালে এমপি হবার পর টিউলিপ বলতে শুরু করেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার এখন আর কোনো সম্পর্ক নেই। এমনকি এও দাবি করেন, তিনি নাকি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে রাজনীতি নিয়ে কোনো কথাই বলেন না। কিন্তু চ্যানেল ফোর নিউজ আওয়ামী লীগের সমাবেশে টিউলিপের বক্তৃতার দু’টি ভিডিও খুঁজে পেলে তার এ দাবির সত্যতা প্রশ্নের সম্মুখীন হয়। ওই সমাবেশ দুটির একটিতে শেখ হাসিনা নিজে উপস্থিত ছিলেন।  

আওয়ামী লীগের সঙ্গে টিউলিপের যোগসাজস গোপনের চেষ্টা ব্যর্থ করে দেয়া ছাড়াও আরেকটি গুরুত্বপূর্ন কাজ করেছে এই ভিডিওগুলো। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে টিউলিপের পেছনে যে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ সুসংবদ্ধ ও সুপরিকল্পিতভাবে সহায়তা দিয়েছে, তা প্রতিষ্ঠা করতে এ ভিডিওগুলো অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।

আওয়ামী লীগের যে দুটি সমাবেশে টিউলিপের বক্তৃতার ভিডিও প্রকাশ হয়েছে, এর মধ্যে একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৫ সালের জুন মাসে। এটা ছিল নির্বাচনের ঠিক পরপর। আর এ বছরই টিউলিপ প্রথমবার যুক্তরাজ্যে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বক্তৃতায় টিউলিপ সমাবেশে উপস্থিত আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আপনাদের সাহায্য ছাড়া আমি কখনোই ব্রিটিশ এমপি হিসেবে এখানে দাঁড়াতে পারতাম না।” এরপর ২০১৭ সালে দ্বিতীয় জাতীয় নির্বাচনের পর, টিউলিপ আরেকটি আওয়ামী লীগ সমাবেশে বলেন, “আর এই জন্য আপনাদের ধন্যবাদ জানাতে চাই। আপনাদের সাপোর্ট ছাড়া আমি কিন্তু আমার নির্বাচনে জিততে পারতাম না।”       

এ দুই নির্বাচনে টিউলিপকে যে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ সহযোগিতা করেছে, তার আরও প্রমাণ মেলে নির্বাচন দুটিতে টিউলিপের দেয়া বিজয় বক্তব্যে (দেখুন ২০১৫ এবং ২০১৭ সালের যুক্তরাজ্য নির্বাচন)। বক্তব্যে টিউলিপ সুনির্দিষ্টভাবে জেষ্ঠ্য আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে কৃতজ্ঞতা জানান এবং “আনোয়ার মামা” বলে সম্বোধন করেন। এই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ বেশ তাৎপর্যপূর্ণ; কেননা আনোয়ারুজ্জামান যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক। তিনি দুটি নির্বাচনেই টিউলিপের পক্ষে সমর্থন জোগানোর দায়িত্বে ছিলেন বলে জানা যায়।

টিউলিপকে জেতাতে আওয়ামী লীগের তরফ থেকে যে ধরনের সহযোগিতার ব্যবস্থা করা হয়েছিল, সে বিষয়ে বিস্তারিত তেমন কিছু জানা না গেলেও সেই ভিডিও ও কিছু ছবি থেকে অনেক কিছুই পরিষ্কার হয়ে যায়। ২০১৭ সালের নির্বাচনে তোলা ছবি থেকে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা “রুচি” নামক রেস্তোরাঁয় সমবেত হয়ে টিউলিপের লিফলেট বিলি-বন্টনের কাজ করছেন। পরে টিউলিপ তার বক্তব্যে এই রেস্তোরাঁকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। এই রেস্তোরাঁর মালিক ছিলেন আওয়ামী লীগের একজন সমর্থক। এদিকে ২০১৫ ও ২০১৭ সালের আগের নির্বাচন বিষয়ে তেমন কিছু জানা না গেলেও সর্বশেষ নির্বাচনে টিউলিপকে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের টানা সহযোগিতার বিষয়ে বেশকিছু তথ্য জানা যায়।

২০১৯ সালের ৫ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হবার আগের দিন কিছু আওয়ামী লীগ নেতা একটি রেস্তোরাঁয় মিলিত হন।

“আসন্ন ব্রিটিশ পার্লামেন্ট নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোটবোন শেখ রেহানা আপার বড় মেয়ে তৃতীয়বারের মতো লেবার পার্টির মনোনয়ন নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায়!”, একজন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ কর্মী তার ফেসবুকে লেখেন, সাথে সংযুক্ত ছিল বৈঠকের একটি ছবি। “প্রতিবারের মতো এবারও তাকে বিজয়ী করার জন্য যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সম্মানিত সভাপতি সুলতান শরীফ ভাইয়ের দিক নির্দেশনায় ও শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক আ স ম মিসবাহ ভাইয়ের নেতৃত্বে মাঠ পর্যায়ে কর্মকৌশল নির্ধারণ সভায় উপস্থিত সকল শুভাকাঙ্ক্ষী বৃন্দ! ইনশাআল্লাহ জয় হবেই!”

একটি ফেসবুক পোস্টার স্ক্রিনশট। আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর আগেরদিন যুক্তরাজ্য আওমী লীগের নেতা-সমর্থকেরা একটি বৈঠকে মিলিত হন। আলোচনার বিষয় ছিল, নির্বাচনে টিউলিপ সিদ্দিকীকে আরও সুসংগঠিতভাবে সহায়তা করা। 

পরের দিন কিলবার্নের একটি সুপার মার্কেটের বেসমেন্ট থেকে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা টিউলিপের পক্ষে প্রচারণা শুরু করেন। দেখা যায়, ওই স্থান কিছুদিন আগেই নির্বাচনী কাজের জন্য ভাড়া নেয়া হয়েছে। প্রচারণার প্রথমদিনে তোলা ফেসবুকে প্রকাশিত একটি ছবিতে বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতাকে দেখা যায়। এদের মধ্যে ছিলেন সৈয়দ সাজেদুর রহমান ফারুক (সাধারণ সম্পাদক), আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী (যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক), মিসবাহ সাদাত (শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক), ফকরুল ইসলাম মধু (যুবলীগ প্রেসিডেন্ট), শাহ শামিম আহমেদ (দফতর সম্পাদক) এবং জামাল খান (যুবলীগের সহকারী সাধারণ সম্পাদক)। 

নির্বাচনী প্রচারণার প্রথমদিনে প্রকাশিত ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিন শট। এখানে অন্তত ছয়জন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতাকে দেখা যাচ্ছে।

পরের ৪৫ দিন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের কর্মীদের এখানে জড়ো হতে দেখা যায়, যাদের বেশির ভাগ টিউলিপের আসন হ্যাম্পস্টেড ও কিলবার্নের অধিবাসী নন। জড়ো হবার পর টিউলিপের প্রচারণা টিম তাদের হাতে লিফলেট ও নির্বাচনী পোস্টার তুলে দেয় বিলি করার জন্য।  

এদের মাঝে কেউ কেউ লেবার পার্টির সদস্য হলেও নিজেদের আসন বাদ দিয়ে  টিউলিপের আসনে কাজ করতে এসেছিলেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের উদ্যোগেই। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ তার গুরুত্বপূর্ণ ১০ নেতাকে নিযুক্ত করে কর্মীদের কিলবার্ন অফিসে জমায়েত করার জন্য।

ফাঁস হওয়া এক টেলিফোন আলাপে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট সুলতান শরিফকে  সেখানে বসবাসরত এক বাংলাদেশিকে বলতে শোনা যায়, “[কিলবার্নে] দশটা টিম করা হয়েছে। এর কোনো একটা টিমে আপনাকে ঢুকতে হবে। কোনো নেতার সঙ্গে যোগাযোগ আছে?” ওই বাংলাদেশি প্রচারণায়  অংশ নেয়ার ইচ্ছা জানাতে সুলতান শরিফের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। এই টেলিফোন আলাপচারিতার রেকর্ড নেত্র নিউজের হাতে রয়েছে। এই আলাপচারিতায় আরও শোনা যায়, সুলতান শরিফ বলছেন: “দশটা টিম আছে, হরমুজের একটা টিম, মিসবাহর একটা টিম, আনোয়ারুজ্জামানের একটা টিম। যুবলীগের সেলিম খানের একটা টিম, হুমম… এরকম আরকি। এদের কাউকে চিনেন?” যাদের কথা শরিফ উল্লেখ করেছেন তারা সবাই যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের পদধারী নেতা। মিসবাহ হলেন মিসবাহ সাদাত (তিনি আ স ম মিসবাহ নামেও পরিচিত) এবং ৫ নভেম্বরের ফেসবুক পোস্টে একজন প্রধান সংগঠক হিসেবেও তার নাম উল্লেখ রয়েছে। আনোয়ারুজ্জামান যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা, যাকে টিউলিপ “আনোয়ার মামা” সম্বোধন করেছেন। সেলিম খান যুক্তরাজ্য যুবলীগের প্রধান।

যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের এই কার্যক্রম গোপন রাখার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল। শুধুমাত্র নেতারা যাদের নিজস্ব লোক হিসেবে চেনে তারাই প্রচারণা কাজে অংশ নিতে পেরেছে। “আপনার সঙ্গে  আমার ঠিক মতো কথা বলতে হবে। এগুলা সেনসিটিভ বিষয়, বুঝতে পেরেছেন?” শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক মিসবাহ ওই একই প্রচারণায় যোগদানে ইচ্ছুক ব্যক্তিকে ফোনে বলেন। “ভালোমতো কথা বলে বুঝতে হবে, আমরা আপনাকে নিব কিনা। মানুষ ঠাণ্ডায় বের হতে চাচ্ছে না আর আপনি ফোন দিয়ে কাজ খুঁজছেন, সন্দেহজনক তো বিষয়টা। […] নির্বাচনের এগুলোতে অনেক সেনসিটিভ বিষয় আছে। বুঝেছেন তো?” 

এসব আলাপচারিতার বিষয়ে সুলতান শরিফ এবং মিসবাহ সাদাত এর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা কোন সাড়া দেননি।

টিউলিপের নির্বাচনি প্রচারণায় যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সরাসরি অংশগ্রহণ বিভিন্ন ফেসবুক পোস্ট থেকে তাৎক্ষনিক দেখা গিয়েছে। এসব পোস্টে দেখা যায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা কিলবার্ন অফিসের ভেতরে ও বাইরে জড়ো হয়েছে। এই অফিসের বাইরে চ্যানেল ফোরের ধারণ করা ভিডিও থেকেও দেখা যায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাই সেখানে উপস্থিত, সাধারণ লেবার সমর্থকদের সেখানে আপাতদৃষ্টিতে দেখা যায়নি।

এদিকে কিলবার্ন অফিসে উপস্থিত লোকজন যে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণেই সেখানে এসেছিলেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায় তাদের ফেসবুক পোস্টগুলো থেকে। ৯ নভেম্বরের একটি ছবি সম্বলিত পোস্টে একজন লেখেন, “টিউলিপ সিদ্দিক এমপির জন্য যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ ও অন্যান্যদের সঙ্গে ক্যাম্পেইন করছি!”

যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের কিলবার্নে টিউলিপ সিদ্দিকের লেবার পার্টি কার্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। লেবার পার্টির স্থানীয় কোন সদস্যকে সচরাচর দেখা যায়নি সেখানে।

১ ডিসেম্বর আরেকজন কর্মী ছোট একটি দলের প্রচারণার ছবি পোস্ট করেন। “১২ ডিসেম্বর ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনে নর্থ লন্ডনের হ্যামষ্টেড-কিলবার্ন আসনে লেবার দলের প্রার্থী টিউলিপ সিদ্দিককে পুনরায় বিপুল ভোটে নির্বাচিত করার লক্ষ্য নিয়ে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা তার নির্বাচনী এলাকার ভোটারদের মধ্যে গত কয়েক সাপ্তাহ ধরে প্রতিদিন ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে ৩০ নভেম্বর শনিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ওই নির্বাচনী আসনের দায়িত্ব প্রাপ্ত এলাকায় প্রচারণায় আমরা কয়েকজন।”

যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের লিফলেট বিলি করতে দেখা যাচ্ছে।

উল্লেখ্য, টিউলিপ সিদ্দিকের দলীয় প্রচারণা পরিকল্পনা নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে লেবার পার্টি স্বেচ্ছাসেবীদের কাছে পাঠানো হয়। তাতে কিলবার্ন অফিসের কোনো কার্যক্রমের উল্লেখ নেই। এতে স্পষ্ট হয়, সে অফিস শুধুমাত্র বা প্রধানত যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের কর্মীদের দ্বারা ব্যবহৃত হয়েছে।

যখন চ্যানেল ফোর টিউলিপের প্রচারণায় আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের বিষয়টি প্রকাশ করে, তখন লেবার পার্টি ও টিউলিপ উভয়ই জানায়, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ যে তাদের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছে এ বিষয়টি তারা “ওয়াকিবহাল” নন। কিন্তু কথা হচ্ছে, লেবার পার্টির কেন্দ্রীয় পর্যায়ে বিষয়টি অজানা থাকার যথেষ্ট কারণ থাকলেও টিউলিপ এবং তার সিনিয়র ক্যাম্পেইন কর্মকর্তা কীভাবে এ বিষয়ে কিছু জানেন না, তা বোঝা মুশকিল।

এই লেখায় উল্লেখিত বিষয়গুলো নিয়ে ইমেইলে টিউলিপ সিদ্দিক এমপির মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি সাড়া দেননি।  

টিউলিপ সিদ্দিক যে নির্বাচনে জিততে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে নির্দ্বিধায় বড় ধরনের সহযোগিতা নিয়েছেন, তা তার ২০১৫ ও ২০১৭ সালের বক্তব্যেই স্পষ্ট। আর পরবর্তীতে তা অস্বীকার করায় টিউলিপের স্বচ্ছতা ও সততা প্রশ্নবিদ্ধ।●

* এই কলামটি ১১ জানুয়ারী  ইংরেজিতে প্রথম প্রকাশিত

ডেভিড বার্গম্যান, ব্রিটেন-ভিত্তিক সাংবাদিক — নেত্র নিউজের ইংরেজি বিভাগের সম্পাদক।