নির্বাচন কমিশনের ড্যাশবোর্ড বলছে ভোটের হার ২৮%
বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিকট অতীতের যে কোন নির্বাচনের মধ্যে সর্বনিম্ন ভোট পড়েছে বলে দেখা যাচ্ছে নির্বাচন কমিশনের মনিটরিং ড্যাশবোর্ডে। ঢাকায় কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে ৭ই জানুয়ারী ভোট শেষ হওয়ার পাঁচ ঘণ্টা পর বাংলাদেশ সময় রাত নয়টায় নেত্র নিউজ যে তথ্য দেখতে পেয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে নির্বাচনে ভোটের হার ছিল ২৮%।
ড্যাশবোর্ড অনুসারে, তুলনামূলক বেশি ভোটার উপস্থিতি দেখা গেছে খুলনায়, যেখানে মোট ভোটারের ৩২% ভোট দিয়েছেন। এরপরে আছে বরিশাল (৩১%), ময়মনসিংহ (৩০%), চট্টগ্রাম (২৮%), রংপুর (২৭%) এবং রাজশাহী (২৭%)। ঢাকা এবং সিলেট বিভাগে ভোটার উপস্থিতি ছিল সবচেয়ে কম — যথাক্রমে ২৬% এবং ২৩%।
সারাদেশে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের পাঠানো প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিভাগ-ভিত্তিক পরিসংখ্যানগুলো সারাদিন ধরে রেকর্ড করা হয়। নির্বাচনী কর্মকর্তারা “কপোত” নামক একটি বিশেষ অ্যাপ ব্যবহার করে প্রতি দুই ঘন্টা পর পর কেন্দ্রভিত্তিক ভোটের তথ্য নির্বাচন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে পাঠান।
বাংলাদেশে ভোটের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণের জন্য প্রথমবারের মত নির্বাচন কমিশন এই অ্যাপটি ব্যবহার করেছিল। একজন নির্বাচনী কর্মকর্তা নেত্র নিউজকে জানিয়েছেন কমিশন নির্বাচনের দিন সকাল দশটায় প্রথম ভোট সংক্রান্ত তথ্য পায় এবং এভাবে দুই ঘন্টা পর পর তথ্য পাঠানো হয়। সর্বশেষ তথ্য পাঠানো হয় সন্ধ্যা ছয়টার দিকে।
ভোটের হার নিয়ে বিভ্রান্তি
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল প্রাথমিকভাবে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন ভোটার উপস্থিতির হার ছিল প্রায় ২৮%, “পার্সেন্টেজের ব্যাপারে আপনাদেরকে একটা তথ্য দেয়া হয়েছে, কত পার্সেন্ট ভোট হয়েছে। আমি এই ব্যাপারে আপনাদেরকে বলবো। এখনো নিশ্চিত করে পার্সেন্টেজের ব্যাপারটা বলা যাবে না। এমনিতে যেটা আমরা পেয়েছি ২৮ পার্সেন্টের মত, ন্যাশনাল অ্যাভারেজ (জাতীয় গড়)।”
এই তথ্যটি দেয়ার সাথে সাথে তাকে নির্বাচন কমিশনের কিছু কর্মকর্তা — কমিশনের সরকার-নিযুক্ত সচিবসহ — বলতে থাকেন ৪০%-এর বেশি ভোটার উপস্থিতি হয়েছে এমনটা বলতে। বাংলাদেশের বহু স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেলে সংবাদ সম্মেলনটি সরাসরি সম্প্রচার করায় ঘটনাটি তাদের ক্যামেরায় ধরা পড়ে।
কিছুটা বিভ্রান্ত সিইসি তখন দাবি করেন যে ভোটার উপস্থিতি ৪০%-এর মত। তিনি আরও দাবি করেন যে তারা তখনও তাদের ড্যাশবোর্ডে পুরো তথ্য পাননি। পরে, তিনি স্বীকার করেন যে তিনি নিজে ভোটার উপস্থিতির অংকটি ঠিক বোঝেন না তবে মনে করেন ৪০% ভোটার উপস্থিতির তথ্যটি “নির্ভরযোগ্য”।
নিকট অতীতে সর্বনিম্ন ভোটের হার
বিভিন্ন আসনে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও মাত্র ২৮% ভোটার উপস্থিতি নিয়ে ২০২৪ সালের নির্বাচন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ও তার জোটসঙ্গীদের বর্জন করা ১৫ ফেব্রুয়ারির একতরফা নির্বাচনের পর থেকে আজ পর্যন্ত হওয়া সব নির্বাচনের মধ্যে সবচেয়ে কম ভোটারের উপস্থিতি দেখলো। এই সংখ্যাটি আওয়ামী লীগের যে ৫০% ভোটার আনার নির্বাচনী লক্ষ্য ছিল তার চেয়ে অনেক কম।
—
সাংবাদিক রেদওয়ান আহমেদ এই প্রতিবেদনে সহায়তা করেছেন।