করোনাভাইরাসের পূর্বাভাষ রিপোর্ট তৈরি করে বিপাকে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক
আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মডেলিং পদ্ধতিতে কোভিড-১৯ নিয়ে একটি পূর্বাভাষমূলক গবেষণায় সম্পৃক্ত থাকায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জৈষ্ঠ্য গবেষকের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে একটি পূর্বাভাষ রিপোর্ট তৈরিতে অংশগ্রহণ করায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ তাদের সবচেয়ে প্রথিতযশা গবেষকদের একজন মলয় কান্তি মৃধার বিরুদ্ধে তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছে। রিপোর্টটিতে বাংলাদেশে কোভিড-১৯ ভাইরাসের সম্ভাব্য সংক্রমণ, চিকিৎসা ব্যবস্থায় এর চাপ এবং সম্ভাব্য মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে পূর্বাভাষ ছিল। মৃধার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই জন জনস্বাস্থ্য গবেষক এই প্রতিবেদন তৈরিতে যুক্ত ছিলেন। মৃধা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার অব এক্সেলেন্স ফর নন-কমিউনিকেবল ডিজিজেস এন্ড নিউট্রেশানের পরিচালক। রিপোর্টটির লেখদের মধ্যে আরো ছিলেন ব্র্যাক জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথের একজন সাবেক পরামর্শক এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষক।
কোভিদ-১৯ নিয়ে পূর্বাভাষমূলক প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, মে মাসের ২৮ তারিখের মধ্যে কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে কোনো উদ্যোগ নেওয়া না হলে, বাংলাদেশে ১৩ কোটি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এর মধ্য ৫ লাখেরও বেশি মানুষ মারা যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে রিপোর্টে। এই রিপোর্ট বাংলাদেশ সরকারের জ্যেষ্ঠ নীতি নির্ধারকদেরও দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাজ্যের ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের গবেষকদের উদ্ভাবিত মডেলিং পদ্ধতি ব্যবহার করে এই রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। একই মডেল ব্যবহার করে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতেও এই রোগের সম্ভাব্য সংক্রমণের হার ও মৃত্যুর সংখ্যা অনুমান করা হয়েছে।
নেত্র নিউজ এই রিপোর্টটির ভিত্তিতে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশের একদিন পর জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথের ডীন সাবিনা রশিদ ২২ মার্চ এক বিবৃতিতে বলেন, “জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল বা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে কোন গবেষনা করেনি, প্রকাশ করেনি, কাউকে দায়িত্বও দেয়নি।”
বিবৃতিটি প্রতিষ্ঠানটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজেও প্রকাশ করা হয়। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, যদি কোন গবেষক ডীনকে না জানিয়ে এবং অনুমতি ছাড়া কোন গবেষণাপত্র প্রকাশ করে থাকেন, তাহলে প্রতিষ্ঠানের নাম এতে জড়ানো যাবে না, “আমরা এই বিষয় নিয়ে একটি প্রাতিষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করেছি। যদি প্রমানিত হয় যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এই প্রতিষ্ঠানের গবেষণা ও প্রকাশনা নীতিমালা লঙ্ঘন করেছেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ বিভাগীয় শাস্তি গ্রহণ করা হবে।”
জনস্বাস্থ্য সংকটের মধ্যে মহামারী বিষয়ক এই পূর্বাভাষ তৈরি করায় একজন জৈষ্ঠ্য গবেষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার এই হুমকির নিন্দা জানিয়েছেন বাংলাদেশে একাডেমিক স্বাধীনতার পক্ষের অ্যাক্টিভিস্টরা। একাডেমিক স্বাধীনতার পক্ষে একজন সক্রিয় অ্যাক্টিভিস্ট ও মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটির একজন সদস্য রেজাউর রহমান লেনিন নেত্র নিউজকে বলেন, “ড. মলয় কান্তি মৃধার বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক তদন্তের উদ্যোগ ও বিভাগীয় শাস্তির হুমকিকে অবশ্যই তার একাডেমিক স্বাধীনতায় ও মৌলিক অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। এটি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক স্বাধীনতা ও মুক্ত সমাজ তৈরির সাম্প্রতিক অঙ্গীকারের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।”
তিনি বলেন, সকল একাডেমিকের উচিৎ মৃধার সমর্থনে এগিয়ে আসা, যেন প্রত্যেক একাডেমিক মত প্রকাশের স্বাধীনতা পান।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি বৈশ্বিক নেটওয়ার্কে যোগ দিয়েছে যারা “মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও বিশ্বাসের বৈচিত্র্য সহ উন্মুক্ত সমাজের মূল্যবোধকে” সমুন্নত রাখতে চায়।
প্রসঙ্গত, ২২ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার কোবিড-১৯ রোগে ২৭ জন আক্রান্ত ও দুইজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে।●