কোভিড-১৯: স্বাস্থ্যমন্ত্রীর প্রতারণা ও প্রধানমন্ত্রীর হয়রানি-প্রণোদনা
বাংলাদেশে এই করোনাকালে শেখ হাসিনা আর জাহিদ মালেকের উপর আস্থা রাখা যায় কি?
![কোভিড-১৯: স্বাস্থ্যমন্ত্রীর প্রতারণা ও প্রধানমন্ত্রীর হয়রানি-প্রণোদনা](/content/images/size/w2000/wordpress/2020/04/SH-ZM.png)
মহামারী কাকে বলে ও কতটা ভয়-আতঙ্কের, সেটা বিশ্ব অর্থনীতির এক নম্বর দেশ যুক্তরাষ্ট্রের দিকে চোখ মেলে তাকালেই মন দিয়ে বোঝা যায়। ইউরোপের বাঘা বাঘা দেশ ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, জার্মানি, ব্রিটেন, নেদারল্যান্ডসে সারি-সারি মৃত্যু আর কাতারে-কাতারে আক্রান্তের খবর বিপন্নতা ছড়িয়ে দিচ্ছে এক মহাদেশ থেকে আরেক মহাদেশে, দেশে-দেশে, জেলায়-জেলায়, ঘরে-ঘরে। অদৃশ্য ঘাতক করোনাভাইরাস দৃশ্যমান করে তুলছে সরকারগুলোর সিস্টেম-ব্যবস্থাপনার অব্যবস্থাপনা। হুমায়ুন আজাদের শব্দমালার মতো “সব কিছু ভেঙ্গে পড়ে”। পড়ছে। পড়বে।
রোগে শরীরের মৃত্যুর ভয়াবহতার মতোই হাজির হতে যাচ্ছে মহা-অভাব, দুর্ভিক্ষ — যুদ্ধ বিধ্বস্ত স্বাধীন বাংলাদেশ যেটা প্রত্যক্ষ করেছিল ১৯৭৪ সালে। বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের লেখা সত্যজিৎ রায়ের “অশনি সংকেত” চলচ্চিত্রে যেমন দেখা যায় ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের ভয়ালতা। মারী ও মন্বন্তরে, মৃত্যু ও খাবারের অভাবে অদৃশ্যমান হয়ে যায় না ক্ষমতাসীন ও দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারের দরকারি লোকদের দায়িত্বহীনতা, মিথ্যা আশ্বাসে বিশ্বাস করানোর মাস্তানি অথবা সাধারণ মানুষকে লাগাতার হয়রানি করার আয়োজন। না, যায় না। যাচ্ছে না। যাবেও না।
কেমন?
যেমন ১: আছে-আছে বনাম নাই-নাই
প্রতিদিনকার খবর খুঁড়েই খবর বের করা যাক “আছে-আছে” আর পাশাপাশি “নাই-নাই”র তথ্য। এখনতো রোজই সংবাদমাধ্যমগুলো দেশ-বিদেশের করোনাভাইরাসের খবর দিয়ে যাচ্ছে। প্রথম আলোর ৯ এপ্রিলের খবর অনুযায়ী, ৮ এপ্রিল ২৪ ঘন্টায় করোনাভাইরাসে নতুন ১১২ জন আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন ১ জন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রচারিত তথ্য অনুযায়ী, মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৩৩০ জন আর মারা গেছেন ২১ জন। সুস্থ্য হয়ে ঘরে ফিরেছেন ৩৩ জন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এইসব তথ্যের বাইরে থেকে যাচ্ছে “জ্বর-কাশি-শ্বাসকষ্টে” মারা যাওয়াদের একটা বড় সংখ্যা, যাদের মৃত্যু অস্বীকার করে প্রশাসন মৃতদের পরিবার ও তার আশপাশের বাড়িঘর লকডাউন করে রাখছেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরের ভিত্তিতে সেইসব অ-তালিকাভুক্তদের তালিকা-ভুক্ত করে বিডিকরোনাইনফো নামক একটি আনঅফিসিয়াল ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট জানাচ্ছে, ৮ এপ্রিল পর্যন্ত (৯ এপ্রিলের তথ্য যুক্ত হয় নাই তখনো) করোনাভাইরাসে বেসরকারি হিসাবে ১০৭ জন ও সরকারি হিসাবে ২০ জন সহ মোট মারা গেছেন ১২৭ জন। আর আক্রান্ত হয়েছেন ২১৮ জন। ২ এপ্রিলে ভয়েস অফ আমেরিকা জানাচ্ছে, ১৮ মার্চ (প্রথম করোনাভাইরাসে মৃতের খবর প্রকাশের তারিখ) থেকে সে পর্যন্ত জ্বর-সর্দি-কাশি-গলাব্যাথায় মারা গেছেন ৫৮ জন।
এইসব তথ্য একটা বিষয় স্পষ্ট করছে যে, মৃতের সংখ্যা নিয়ে গোলমাল ব্যাপক; যেই গোলমাল ২০১৪ ও ২০১৮-র ভোটারবিহীন নামকাওয়াস্তা নির্বাচনে “নির্বাচিত” হওয়া শাসকদের বেসামাল শাসন-পরিস্থিতিই নির্দেশ করছে। এই গোলমাল আর বেসামাল পরিস্থিতি আরো প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে আক্রান্তদের চিকিৎসায় যে ব্যবস্থা আছে, তার বাস্তবতায়।
করোনাভাইরাস আর ইনফ্লুয়েঞ্জার মধ্যকার অনেক মিল সত্ত্বেও, পার্থক্যের বড় জায়গা হলো, এই ভাইরাসটি জ্বর, খুসখুসে শুকনা কাশি উপসর্গের পাশাপাশি ফুসফুস আক্রান্ত করে ভয়াবহভাবে। প্রথম আলোর ৩১ মার্চের একটি প্রতিবেদন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানাচ্ছে, গত বছরের মার্চের তুলনায় এই বছরের মার্চে শ্বাসতন্ত্রে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ১৪ গুন। এ বছরের মার্চ মাসের শেষ দিনটি পর্যন্ত আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১১ হাজার ৯৩০ জন, যেটা আগের বছরের একই মাসে ছিল মাত্র ৮২০ জন।
শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা হলে অন্যান্য অনেক প্রতিকার-প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার পাশাপাশি হাসপাতালস্থ হলে একটি যান্ত্রিক সাপোর্ট প্রয়োজন, যেটার নাম ভেন্টিলেটর। ৩০ মার্চের দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকা জানাচ্ছে, করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য ভেন্টিলেটর আছে মাত্র ৪৫টি। অথচ স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেকের দাবি, সরকারি হাসপাতালে ৫০০ ভেন্টিলেটর আছে, বেসরকারি হাসপাতালে ৭০০ ভেন্টিলেটর আছে এবং আরো ৩০০ ভেন্টিলেটর “পাইপলাইনে” আছে।
বাংলাদেশের মোট জনসংখ্য ১৬ কোটি, ১৭ কোটি না, ১৮ কোটি যেটাই হোক, যেহেতু প্রকৃত পরিসংখ্যান নাই কোথাও, একটি মধ্য আয়ের উন্নীতব্য দেশের মোট জনসংখ্যা নির্ধারনের আদম শুমারীই নাই বছরের পর বছর; যাই হোক, লোকজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে আইসিইউ দরকার পড়লে, কয়টা আছে? নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউ আছে মাত্র ২৯টি। দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের ২৪ মার্চের প্রতিবেদন “বাংলাদেশ হ্যাজ অনলি টুয়েন্টি নাইন আইসিইউ বেডস টু ফাইট করোনাভাইরাস” জানাচ্ছে, শুধু এই রোগের চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত হাসপাতাল বাংলাদেশ কুয়েত ফ্রেন্ডশীপ হাসপাতালে আছে ১০টি, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রো লিভার হাসপাতালে ৮টি, উত্তরা ও মিরপুর রিজেন্ট হাসপাতালে ৩টি করে এবং সাজেদা ফাউন্ডেশন হাসপাতালে আছে ৫টি। বাহবা স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক! তিনিই বলতে পারেন, “আমরা প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নত করছি” (করোনাভাইরাসে দেশে আরও একজনের মৃত্যু: স্বাস্থ্য মন্ত্রী, প্রথম আলো, ১ এপ্রিল ২০২০)। এই হচ্ছে উন্নয়নের লক্ষণ।
স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার সাথে পুরোপুরি সম্পর্কহীন, ব্যবসায়ী জাহিদ মালেক, যিনি একাধারে ৫টি কোম্পানীর (সানলাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, বিডি সানলাইফ ব্রোকারেজ হাউজ লিমিটেড, রাহাত রিয়েল এস্টেট এন্ড কনস্ট্রাকশন লিমিটেড, বাংলাদেশ থাই এ্যালুমিনিয়াম লিমিটেড, বিডি থাইফুড এন্ড বেভারেজ লিমিটেড) চেয়ারম্যান, স্বাস্থ্যখাতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে তাকে যোগ দেয়ানো হলো ২০১৪ সালে, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী হিসাবে। ২০১৯ সালে তিনি পদোন্নতি পেয়ে একেবারে পূর্ন মন্ত্রী। তার পূর্ণ মন্ত্রীত্বের প্রথম দায়িত্বশীলতা-আস্থার পরীক্ষা আসে গত বছরের ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়া ডেঙ্গুর সময়। সেই সময়ে তিনি কি সফল-ব্যর্থ, সেই প্রশ্নের উত্তরের চাইতেও যেটা লক্ষ্যনীয়, সেটা হলো তার মন্ত্রণালয়ের বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়া।
গত বছরের এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে পরের সবগুলো মাসে ভয়াবহ হওয়া ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার তথ্যে দেখা যায়, অগাস্ট মাসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বুলেটিন বলছে মৃতের সংখ্যা ২৯, আর প্রথম আলো তার নিজস্ব হিসাব দেখিয়ে বলছে, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে ১২৬ জন (ডেঙ্গু আক্রান্ত আরো দুজনের মৃত্যু, প্রথম আলো,১২ আগস্ট ২০১৯)। বছর শেষে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম বলছে, মোট মৃতের সংখ্যা আড়াইশর বেশি আর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দাবি করেছে ১৪৮ ( ফিরে দেখা ২০১৯: মশা ভয়ঙ্কর, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ,২৯ ডিসেম্বর ২০১৯)।
গত বছরের হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা-বিভ্রান্তি, অথবা সরাসরি বললে, বাস্তব পরিস্থিতির বাস্তব সংখ্যা সচেতন ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে গায়েব করে দেয়ার ঘটনা তীব্র সন্দেহ তৈরি করে এখনকার করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা নিয়ে। কথা উঠে কম সংখ্যক করোনাভাইরাস সনাক্তকরণ পরীক্ষা নিয়েও। সামাজিক যোগাযোগে বাংলাদেশে গণমাধ্যম হয়ে ওঠা ফেসবুকে সরব আওয়াজ উঠছিল এ নিয়ে। কারণ বৈশ্বিক গণমাধ্যম হিসেবে পরিচিত বিবিসি, গার্ডিয়ান তাদের প্রতিবেদনে বলছিল, দক্ষিণ কোরিয়া, চীনের সফলতার কারণ হলো ব্যাপক পরীক্ষা ও আলাদাকরণ। এরপর ১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর বরাত দিয়ে ব্যাপক হারে পরীক্ষা শুরুর কথা বলা হয়। এরপর ৩ এপ্রিল ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে করোনাভাইরাসের দৈনন্দিন আপডেটে ৫ জন নতুন আক্রান্তের খবর জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হুংকার দিলেন, গুজব ছড়ানোর জন্য গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে (গণমাধ্যম ও বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে, বাংলা ট্রিবিউন, ৩ এপ্রিল ২০২০)। কিন্তু পাল্টা প্রশ্ন তো করাই যায়, স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজেই তথ্য চুরি করে, বিভ্রান্তি তৈরি করে, যা নাই তা আছে দাবি করে, নিজেই কি ভুয়া খবর, গুজব, প্রোপাগান্ডা করছেন না? সরলবাক্যে, এ তো প্রতারণাই।
যেমন ২: প্রধানমন্ত্রীর “প্রণোদনা”
প্রিয় পাঠক, দেখুন, ডিস্টোপিয়ান উপন্যাসের প্লটের মতো দৃশ্যমান, চলমান এই দেশটিতে আপনি কি স্বাস্থ্য মন্ত্রী বা উনার বস, যিনি লিঙ্গ পরিচয়ে নিজেকে নারী বলে পরিচিত করেন, কিন্তু তার অধীনস্তরা তাকে বাংলায় আপা বা ইংরেজিতে ম্যাডাম না বলে “স্যার” বলে অফিসিয়াল কার্যক্রমে সম্বোধন করেন, ভরসা কি রাখতে পারছেন তার উপর? কলোনিয়াল বা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক কায়দায় তারা মানে তিনি, তার মতো আরো পূর্ন+প্রতি+উপমন্ত্রী ও প্রশাসনের ক্ষমতাধররা — যাদের কনিষ্ঠ একজন সম্প্রতি যশোরে বয়সী লোককে কানধরে উঠবস করে প্রমোশনের আশায় সেই নির্যাতনের ফটোগ্রাফও তুলে রেখেছিলেন প্রমান হিসেবে এবং যিনি উপনিবেশের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সাংস্কৃতিক ধারাবাহিকতা ধারণকারী সামাজিক-গণমাধ্যম ব্যবহারকারীদের প্রতিবাদের কারণে চিহ্ণিত হয়েছেন — সেইসব কনিষ্ঠ, লঘিষ্ঠ ও তাদের প্রধান, নারী “স্যার” ওরফে প্রধানমন্ত্রী কতটা আস্থা দিচ্ছেন মহামারীর এই দিশেহারা দিনে?
এই করোনাকালে তিনি ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার “আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ” ঘোষণা করলেন, যেটা আসলে ঋণ প্রণোদনা যা বাস্তবায়ন হবে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে। বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক কি একটা আতঙ্কের নাম নয়? যেখান থেকে সাধারণ আমানতকারীর টাকা হাওয়া হয়ে ঢুকে যায় অসাধারণ ব্যবসায়ী, প্রশাসক, রাজনীতিবিদদের পকেটে।
৫ এপ্রিল, প্রধানমন্ত্রীর ভার্চুয়াল ভাষণে করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প প্রতিষ্ঠান, সার্ভিস সেক্টরের জন্য খাত ভেদে ৭% থেকে ৯% সুদের ঋণ নেয়ার সুবিধা এবং কিছু কিছু ঋণের সুদে সরকারের ভর্তুকি ঘোষণা আশা সঞ্চারের বিষয়ই হতে পারতো। যদিও তীব্র সমালোচনা আছে যে, চলমান করোনাভাইরাসের চিকিৎসা-ব্যবস্থাপনা ও কৃষি খাত উপেক্ষিত হয়েছে। তারপরও সেই সমালোচনার জন্যই শুধু না, গত এক দশকে ব্যাংক খাতে যে সীমাহীন লুট-পাট চলেছে, আর তাতে যে সীমাহীন হয়রানি হয়েছে, তার জবাবহীনতা কি আশাবাদী হতে দিচ্ছে?
শুধু আমি না, প্রিয় পাঠক, আপনারা অনেকেই অনেকভাবে প্রশ্ন তুলেছেন, তুলে যাচ্ছেন যে, গত এক দশক ধরে ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা যারা লুট করে বিদেশে পালিয়ে গেল অথবা দেশে থেকে মহাক্ষমতাধর, ভিভিআইপি সুবিধা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, আরাম করছে, তাদের কেন হয়রানি হতে হয় নাই? টাকা কেন ফেরত আসে নাই? আবার সিস্টেম কেন অভিযুক্তকে অভিযুক্ত করছে না?
ক. ২০০৯ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসাবে ক্ষমতায় থাকা আবুল বারাকাতের সময়ে অ্যাননটেক্সট, থারমাক্স ও ক্রিসেন্ট গ্রুপ মিলে যে ১১ হাজার ২৩০ কোটি টাকা গায়েব করে দিল, আবুল বারাকাত কেন অভিযুক্ত নন?
খ. বহুল আলোচিত হলমার্ক কেলেঙ্কারিতে যুক্ত সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবীর কোথায়? তার বিরুদ্ধে মামলা আছে কিন্তু শাস্তি নাই কেন? ২০১০-১২ সালের এই কেলেঙ্কারিতে, হলমার্ক গ্রুপ আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে মেরে দেয়ার ঘটনায় তখনকার পত্রিকাগুলোয় খবর হয়েছিল। সেই সময়কার অর্থ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় উপকমিটি তখনকার স্বাস্থ্য উপদেষ্টা সৈয়দ মোদাচ্ছির আলীর সংশ্লিষ্টতা থাকার বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছিল এবং তাও খবর হয়েছিল। অথচ, সৈয়দ মোদাচ্ছির কেন অভিযুক্ত নন?
গ. সাধারণ আমানতকারীদের প্রায় সাড়ে ৫০০ কোটি টাকা মেরে দেয়া সাবেক ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান, যিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীও ছিলেন, সেই মহিউদ্দিন খান আলমগীর কেন অভিযুক্ত নন?
ঘ. বেসিক ব্যাংক থেকে উধাও হয়ে যায় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা, অথচ এর পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু অভিযুক্ত নন, কেন?
এসব প্রশ্ন মনে আসে কেননা দেশ পরিচালনা করছে যে সরকার, তার দায়িত্বশীলেরা বার বার এটাই বলেন যে তারা আইনের শাসনে বিশ্বাসী। আর তাই অভিযুক্তরা, অভিযুক্ত অপরাধীরা আইনের বাইরে থেকে গেলে আইনের প্রয়োগ নিয়ে কি আস্থা রাখা যায়? আর তাই আশঙ্কা আর তাই ভয়। আর তাই প্রণোদনা — কার্যত ব্যাংক থেকে সুদসহ ঋণ নেয়ার ব্যবস্থা — সাধারণ মানুষের শ্রম আর উদ্যোগে জমানো টাকা লোপাট হওয়ার ভয় আর হয়রানিকে জাগিয়ে তোলে।
এসব প্রশ্ন ভয় আর আতঙ্ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জায়গায় খালেদা, জুলেখা, বা রাবেয়া অথবা কামাল, সেলিম জামাল অথবা লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ করতে অনাগ্রহী বা হিজড়া যেই হন না কেন, সবার বেলায় প্রযোজ্য। কেননা, বিষয়গুলা ব্যক্তির প্রতি আক্রমণের, অমার্যাদার বা ডিফেমেশনের বিষয় নয়, বিষয়গগুলো বরং সিস্টেম পরিচালনার ব্যর্থতার সাথে সম্পর্কিত। যে ব্যর্থতা এই করোনাকালে তীব্রভাবে দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। তীব্রভাবে দৃশ্যমান হয়ে উঠছে, বাস্তবে যা নাই, যা নয়, সেইসব মিথ্যা, সেইসব প্রপাগান্ডা। যেমন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ওয়েবসাইটে বাংলাদেশ সরকারের ২০১৮ সালের হেলথ এচিভমেন্ট বুকলেটে লিখা: “মুজিবে ভিত্তি, হাসিনায় ব্যাপ্তি/সাফল্যের জোয়ারে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিশ্বের বিস্ময়”। বটে! বিশ্বের বিস্ময়ই বটে।●
শামীমা বিনতে রহমান, সাংবাদিক ও রটেন ভিউজের সম্পাদক।