সমালোচকদের বিরুদ্ধে দমনপীড়ন
বিতর্কিত ডিজিট্যাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করে সাংবাদিক, লেখক, অ্যাক্টিভিস্ট ও ব্যবসায়ীদের নিশানা করেছে র্যাব।
বাংলাদেশের র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটলিয়ন (র্যাব) দেশের ভেতরে ও বাইরে বসবাসরত ১১ জন সাংবাদিক, লেখক, অ্যাক্টিভিস্ট ও ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ডিজিট্যাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে ফৌজদারি মামলা দায়ের করেছে। এদের মধ্যে কয়েকজন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ও এর কভিড-১৯ মহামারি ব্যবস্থাপনার সমালোচক হিসেবে পরিচিত। ৬ মে রমনা পুলিশ স্টেশনে র্যাবের একজন ওয়ারেন্ট অফিসার ওই মামলা দায়ের করেন। অভিযুক্তদের মধ্যে চারজনকে আটক করেছে ৱ্যাব — আটককৃতদের দুই জন পুলিশ হেফাজতে ও দুই জন কারাগারে আছেন।
মামলার এজাহারে যেই ১১ জনের নাম রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে “রাষ্ট্রের জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি, অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার” লক্ষ্যে “জাতির জনক, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ, মহামারী করোনাভাইরাস সম্পর্কে” গুজব বা অপপ্রচার বা বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগ আনা হয়েছে।
অভিযুক্তদের মধ্যে খ্যাতিমান রাজনৈতিক কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, সুইডিশ-বাংলাদেশি সাংবাদিক তাসনিম খলিল (নেত্র নিউজের এডিটর-ইন-চিফ), নিউ ইয়র্কে বসবাসরত সাংবাদিক শাহেদ আলম ও বার্লিনে বসবাসরত ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন রয়েছেন।
অভিযুক্তদের মধ্যে যেই চার জন দেশে বসবাস করেন, অর্থাৎ আহমেদ কবির কিশোর, লেখক মুশতাক আহমেদ, অ্যাক্টিভিস্ট দিদারুল ইসলাম ভূঁইয়া ও ব্যবসায়ী মিনহাজ মান্নান ইমনকে ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে র্যাব আগেই আটক করে। বর্তমানে আহমেদ কবির কিশোর ও মুশতাক আহমেদ কারাগারে এবং দিদারুল ইসলাম ভূঁইয়া ও মিনহাজ মান্নান ইমন পুলিশ হেফাজতে আছেন।
মামলার এজাহারে আর যাদের নাম রয়েছে তারা হলেন শায়ের জুলকারনাইন, আশিক ইমরান, ফিলিপ শুমাখার ও স্বপন ওয়াহিদ। এজাহারে বলা হয়েছে, তারা “আই অ্যাম বাংলাদেশি” নামক একটি ফেসবুক পেজের সাথে সম্পৃক্ত।
এজাহারে র্যাবের ওই ওয়ারেন্ট অফিসার অভিযোগ করেন, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ছয় জন — শায়ের জুলকারনাইন, আহমেদ কবির কিশোর, আশিক ইমরান, ফিলিপ শুমাখার, স্বপন ওয়াহিদ ও মুশতাক আহমেদ — “আই অ্যাম বাংলাদেশি” পেজ পরিচালনার সাথে জড়িত। ওই পেইজ থেকে “রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বা সুনাম ক্ষুণ্ণ করিবার” ও “জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি”র লক্ষ্যে বিভিন্ন পোস্ট ও গুজব শেয়ার করা হয় বলে র্যাবের ওই কর্মকর্তা দাবি করেন।
এজাহারে ইঙ্গিত দিয়ে বলা হয়, র্যাবের কাছে ফেসবুক ও হোয়্যাটসঅ্যাপে এমন আলাপচারিতার রেকর্ড রয়েছে যা থেকে প্রমাণ হয় যে, তাসনিম খলিল, শায়ের জুলকারনাইন, শাহেদ আলম ও আসিফ মহিউদ্দিনের সাথে “রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক চ্যাটিং”-য়ে লিপ্ত ছিলেন আহমেদ কবির কিশোর।
এজাহারে আরও বলা হয়, দিদারুল ইসলাম ভূঁইয়া ও মিনহাজ মান্নান ইমন হলেন মুশতাক আহমেদের ফেসবুক বন্ধু। এই তিন জন হোয়্যাটসঅ্যাপ ও ফেসবুক মেসেঞ্জার ব্যবহার করে “রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক চ্যাটিং”-য়ে জড়িত ছিলেন বলেও অভিযোগ করা হয়।
নেত্র নিউজের এডিটর-ইন-চিফ তাসনিম খলিলের বিরুদ্ধে অভিযোগ যে, তিনি “সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয়, ঘটনা, মহামারি করোনাভাইরাস, জাতির জনক, সরকার প্রধান, সরকার দলীয় বিভিন্ন নেতাদের কার্টুনের ব্যাঙ্গচিত্র দিয়ে রাষ্ট্রবিরোধী গুজব সামাজিক যোগাযোগ [মাধ্যমে] ভাইরাল করার ব্যাপারে [আহমেদ কবির কিশোরকে] ইন্ধন” দিয়েছেন।
এছাড়াও তার বিরুদ্ধে ফেসবুক পোস্টে “জাতির জনক, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ” ও “রাষ্ট্রের সেনাবাহিনী সহ বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান ও বাহিনী” সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করার অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব অভিযোগের সমর্থনে তাসনিম খলিলের তিনটি ফেসবুক পোস্টের লিঙ্কও এজাহারে সংযুক্ত করা হয়। তবে এটি স্পষ্ট নয় ওই তিনটি পোস্টের সঙ্গে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের মিল কোথায়।
মার্চ মাসে কভিড-১৯ নিয়ে মন্তব্যের জেরে দুই সপ্তাহের মধ্যে এক জন ডাক্তার, বিরোধী দলীয় কর্মী ও শিক্ষার্থী সহ এক ডজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করার পর গত মাসের শেষের দিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বাংলাদেশ সরকারের প্রতি “কভিড-১৯ গুজব সংক্রান্ত গ্রেপ্তার” বন্ধের আহ্বান জানায়। এছাড়া বাংলাদেশে কভিড-১৯ মহামারি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের জেরে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ১৫ জন সাংবাদিক আক্রমণের শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছে প্যারিস-ভিত্তিক সাংবাদিকদের সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স।●