ভুয়া ওয়েবসাইটগুলোর নেপথ্যে কে?
ভুয়া ওয়েবসাইট ও ইমেইল এড্রেস দিয়ে হোস্টিং কোম্পানিগুলোর কাছে অভিযোগ করা হচ্ছে — ভিন্ন মতাবলম্বী বাংলাদেশিদের ওয়েবসাইট ও ইউটিউভ চ্যানেল বন্ধ করাই এসব অভিযোগের উদ্দেশ্য।
দিনটি ছিল ২০২০ সালের ৮ ডিসেম্বর। যুক্তরাজ্য থেকে নতুন করে প্রকাশিত বাংলা সংবাদ মাধ্যম আমার দেশ ইউকের (amardesh.co.uk) নির্বাহী সম্পাদক অলিউল্লাহ নোমান হোস্টিং কোম্পানি ডিজিটাল ওশান থেকে একটি ইমেইল পান। ইমেইলের শুরুটা ছিল বন্ধুত্বসুলভ “Hi there” সম্বোধন দিয়ে। কিন্তু ইমেইলের মূল বার্তাটি তেমন বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল না। বরং ছিল উল্টো। এ ইমেইলের মাধ্যমে পত্রিকাটির একটি আর্টিক্যালের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কপিরাইট আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়। যে আইনের আওতায় কপিরাইট লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়, সেই আইনটি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের Digital Millennium Copyright Act (DMCA).
ইমেইলের মূল বার্তায়, পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে অভিযুক্ত আর্টিক্যালটি আমার দেশ ইউকের ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে ফেলতে অনুরোধ করে ডিজিটাল ওশান। নির্ধারিত তিন দিনের মধ্যে আর্টিক্যালটি প্রত্যাহার করে না নেওয়া হলে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, সেটাও জানিয়ে দেওয়া হয়। অনুরোধ অমান্য করলে ওয়েবসাইট অকার্যকর করে দেয়া হবে বলে জানান হয় ডিজিটাল ওশানের পক্ষ থেকে।
ইমেইল বার্তাটি দেখার পর পরই নোমান বুঝতে পারেন কী ঘটেছে। এখানে যে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বানোয়াট তথ্যের মাধ্যমে কপিরাইট আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলা হয়েছে, এটি বুঝতে দেরি হয়নি নোমানের। সুনির্দিষ্ট আর্টিক্যালটি ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে ফেলতে অথবা ওয়েবসাইট অকার্যকর করে দেয়ার লক্ষ্য নিয়েই মূলত এমন অভিযোগ তোলা হয়েছে। ইমেইলটি দেখার পর পরই নোমান বুঝতে পেরেছিলেন, এর পেছনে বাংলাদেশ সরকার জড়িত।
যুক্তরাজ্য ভিত্তিক এই আমার দেশ ইউকে ওয়েবসাইটটির নামকরণ করা হয়েছে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা থেকে। ২০১৩ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশ সরকার বন্ধ করে দেয় দৈনিক আমার দেশ পত্রিকাটি। এই পত্রিকাটি আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী হিসেবে পরিচিত ছিল এবং দেশে ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছিল।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রথম চেয়ারম্যান ও তার বন্ধুর স্কাইপ কথোপকথন ফাঁস করেছিল পত্রিকাটি। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে এই কথোপকথন ফাঁসের চার মাসের মাথায় সরকার পত্রিকাটি বন্ধ করে দিয়েছিল। স্কাইপ কথোপকথনের আলোচিত বিষয়গুলো সরকারকে খুবই বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছিল তখন। তবে তথাকথিত নাস্তিক ব্লগারদের নিয়ে সমালোচনামূলক আর্টিক্যাল প্রকাশ করে বিতর্কিত ভূমিকা পালনের অভিযোগও রয়েছে ওই পত্রিকাটির বিরুদ্ধে। পত্রিকাটি বন্ধ করে দেওয়ার দিনেই এর সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে পত্রিকা অফিস থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এর চার বছর পর ২০১৬ সালের নভেম্বরে জামিনে কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। বর্তমানে তিনি দেশের বাইরে নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন।
আমার দেশ ইউকের নির্বাহী সম্পাদক অলিউল্লাহ নোমান আগে বাংলাদেশে পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে আমার দেশ পত্রিকায় কর্মরত ছিলেন। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ও তার বন্ধুর স্কাইপ কথোপকথনের প্রতিবেদনটি নোমানেরই করা। এ কথোপকথন প্রকাশের পর জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ওই মাসেই দেশত্যাগ করেন তিনি। যুক্তরাজ্যে এসে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন। যুক্তরাজ্য সরকার তার আবেদনের যৌক্তিকতা গ্রহণ করে এবং তাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়। ২০২০ সালের আগষ্ট মাসে মাহমুদুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে যুক্তরাজ্য থেকে নতুন করে আমার দেশ ইউকে প্রকাশের উদ্যোগ নেন নোমান। মাহমুদুর রহমানকে আমার দেশ ইউকের সম্পাদক হিসেবে রেখে পত্রিকাটির অনলাইন প্রকাশনা শুরু হয় ৩০ আগষ্ট ২০২০ তারিখে। আমার দেশ ইউকে (amardesh.co.uk) বাংলাদেশের বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের কঠোর সমালোচনামূলক অবস্থান থেকে সাংবাদিকতা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।
কিন্তু যুক্তরাজ্য থেকে প্রকাশনা শুরুর ১২ ঘণ্টার মধ্যে বাংলাদেশ সরকার বিটিআরসির মাধ্যমে দেশে পত্রিকাটির ওয়েবসাইট ব্লক করে দেয়। বাংলাদেশের পাঠকরা যাতে পত্রিকাটি দেখার সুযোগ না পান, এজন্যই মূলত ব্লক করার উদ্যোগ নেয় শেখ হাসিনার সরকার। তারপরও দেশের ভেতরে যারা ভিপিএনের ব্যবহার জানেন, তারা পত্রিকাটি দেখতে পারতেন।
ডিজিটাল ওশানের পাঠানো ইমেইলটি দেখার পর নোমান মূলত দুটি কারণে বুঝতে পেরেছিলেন, ডাহা মিথ্যা এবং বানোয়াট তথ্যের ভিত্তিতে কপিরাইট আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ করা হয়েছে।
প্রথম কারণটি হচ্ছে, যে আর্টিক্যালটির বিরুদ্ধে কপিরাইট আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে, সেই আর্টিক্যালটি পত্রিকাটির সম্পাদক মাহমুদুর রহমান শুধুমাত্র আমার দেশ ইউকের (amardesh.co.uk) জন্যই লিখেছিলেন। তার নিয়মিত সম্পাদকীয় কলামে ২০২০ সালের ১ ডিসেম্বরে এটি প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশে বন্ধ করে দেওয়া আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান যুক্তরাজ্য থেকে প্রকাশিত অনলাইন পত্রিকা আমার দেশ ইউকের সম্পাদক হিসেবেও নিয়মিত লিখতেন। সুতরাং এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় যে তিনি অন্য কারও আর্টিক্যাল নকল করেছেন বা অন্য কোথাও প্রকাশের জন্য লিখে একই আর্টিক্যাল আবার এখানে প্রকাশ করেছেন।
দ্বিতীয় কারণটি হচ্ছে, পত্রিকাটির বিরুদ্ধে যে কপিরাইট আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ করা হয়েছে, তাও নতুন নয়। ২০২০ সালের ৩০ আগষ্ট পত্রিকাটি শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত নয়টি পৃথক অর্টিক্যালের বিরুদ্ধে হোস্টিং কোম্পানির কাছে এমন মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ করা হয়েছে। ওয়েবসাইটটি আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুর পাঁচ দিনের মাথায় এ ধরনের অভিযোগের কারনে হোস্টিং কোম্পানির কাছ থেকে ইমেইল পেয়েছিলেন নোমান। এর মধ্যে কপিরাইটের বেশিরভাগ অভিযোগই করা হয়েছে সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের লেখা নিয়ে।
এখানে আরও উল্লেখ্য, এই নয়টি পৃথক অভিযোগ করা হয় পৃথক ওয়েবসাইট ও পৃথক ইমেইল ব্যবহারের মাধ্যমে। অভিযোগগুলো হোস্টিং কোম্পানির পক্ষ থেকে নোমানকে ইমেইলে পাঠানো হয়। অভিযোগকারী এই ওয়েবসাইটগুলোর ঠিকানা এবং ইমেইল এড্রেস সবই ছিল জাল। জালিয়াতিমূলক ইমেইল এবং ওয়েবসাইটের ঠিকানা দেখে নোমান নিশ্চিত হন, এগুলো বাংলাদেশ সরকারের গোয়েন্দা এজেন্সির কাজ। এরা তারাই, যারা পত্রিকাটি শুরুর ১২ ঘণ্টার মধ্যে বাংলাদেশে ব্লক করে দিয়েছিল। সরকার সমর্থক যারা আমার দেশ ইউকের প্রকাশনার পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে চায়, মূলত তাদেরই কাজ এটি।
যেভাবে জালিয়াতি ও মিথ্যা অভিযোগ করা হয়
ইতিমধ্যে পাওয়া নয়টি অভিযোগের সবগুলোর প্রক্রিয়াই ছিল এক এবং অভিন্ন। কপিরাইট আইন লঙ্ঘনের অভিযোগের নিমিত্তে প্রতারণার জন্যই মূলত তৈরি করা হয় ওয়েবসাইটগুলো। আমার দেশ ইউকের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত আর্টিক্যাল কপি করা হয় ওইসব ফেক ওয়েবসাইটগুলোতে। কপি করা আর্টিক্যাল ওয়েবসাইটে প্রকাশের সময় পূর্বের কোনো তারিখ বসিয়ে দেওয়া হয়। আমার দেশ ইউকের প্রকাশিত তারিখ থেকে অনেক আগে প্রকাশ করা হয়েছিল, এমন তারিখ দেখানো হয় জালিয়াতিমূলক ওয়েবসাইটগুলোতে। তারা এর মাধ্যমে বোঝানোর চেষ্টা করে, তাদের এই বানোয়াট ওয়েবসাইটে প্রকাশিত আর্টিক্যালটিই হচ্ছে আসল। বলার চেষ্টা করা হয়, তাদের ওয়েবসাইট থেকে আমার দেশ ইউকে আর্টিক্যালটি কপি করে পরবর্তীতে প্রকাশ করেছে, যা কপিরাইট আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। জাল ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পরিকল্পিত এই অভিযোগ তৈরি করে আমার দেশ ইউকের হোস্টিং কোম্পানির কাছে পাঠানো হয়। সঙ্গে হোস্টিং কোম্পানির কাছে এই মর্মে নালিশ করা হয়, আমার দেশ কপিরাইট আইন লঙ্ঘন করেছে এবং তারপরও হোস্টিং কোম্পানিগুলো একে প্রকাশনা সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে। তাদের অভিযোগ পাওয়ার পর হোস্টিং কোম্পানি নোমানের কাছে ইমেইল পাঠিয়ে অভিযুক্ত আর্টিক্যালটি সরিয়ে নিতে অনুরোধ করে। তা না করা হলে ওয়েবসাইটটি ব্লক করে দেয়া হবে বলে সতর্ক করা হয় ইমেইল বার্তায়।
নোমান নিশ্চিত, এই অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা। কারণ তিনি নিজেই লেখাগুলো আপলোড করেছেন। নোমান দেখলেন, এটি একটি জটিল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। হোস্টিং কোম্পানিগুলো কিছুতেই বুঝতে চাচ্ছে না যে এগুলো প্রতারণামূলক এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। প্রতারণামূলক ওয়েবসাইটগুলোর ঠিকানা অসম্পুর্ণ, টেলিফোন নম্বরও সঠিক নয়। এমনকি প্রতারণামূলক ওয়েবসাইটগুলোতে প্রকাশের যে তারিখ দেওয়া হয়, আর্টিক্যালে বর্ণিত ঘটনা তাদের প্রকাশিত তারিখের অনেক বছর পর ঘটেছে। এমন কী এটাও দেখা গেল, জালিয়াতি করে তৈরি ওয়েবসাইটগুলো যে তারিখে প্রকাশনা দেখাচ্ছে, এর অনেক পর এই ওয়েবসাইট ডোমেইন রেজিষ্ট্রেশন করেছে।
যেমন, নোমান ২০২০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর একটি অভিযোগ পান হোস্টিং কোম্পানির কাছ থেকে। ওই মাসেই আমার দেশ ইউকে ওয়েবসাইটে নোমান একটি আর্টিক্যাল প্রকাশ করেছিলেন। অথচ, hsrohag.com নামক ওয়েবসাইট থেকে অভিযোগে বলা হয়, আর্টিক্যালটি ২০১০ সালের ৯ জুন সেখানে প্রকাশ করা হয়েছিল। এই অভিযোগ কোনোভাবেই সত্য নয়। কারণ, hrsohag.com নামক ওয়েবসাইটের প্রকাশনা হিস্টরিতে দেখা যায়, এই ওয়েবসাইটটি তৈরি করা হয়েছে ২০২০ সালের জুলাই মাসে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, ২০২০ সালের জুলাই মাসে যে ওয়েবসাইট তৈরি হয়, সেটি কীভাবে ২০১০ সালের জুন মাসে কোনো আর্টিক্যাল প্রকাশ করে।
নোমান অপর একটি অভিযোগ পেয়েছিলেন ২০২০ সালের ২৩ অক্টোবর তারিখে। এটিও আমার দেশ সম্পাদকের সম্পাদকীয় নিয়ে। আমার দেশ ইউকে সম্পাদকীয়টি প্রকাশ করেছিল ২০২০ সালের অক্টোবরে। অথচ অভিযোগে দাবি করা হয় syedfarhan.xyz নামক ওয়েবসাইটে ২০১৯ সালের ২৭ জানুয়ারি লেখাটি প্রকাশিত হয়েছিল। যদিও এই ওয়েবসাইটের পাবলিকেশন হিস্ট্রিতে দেখা যায়, এটি তৈরি এবং প্রকাশনা শুরু হয়েছিল ২০২০ সালের ৩ মে। উপরে উল্লেখিত উভয় ওয়েবসাইটের পক্ষ থেকে হোস্টিং কোম্পানির কাছে নালিশ হচ্ছে, তাদের আর্টিক্যাল আমার দেশ প্রকাশ করে কপিরাইট আইন লঙ্ঘন করেছে।
অপর একটি অভিযোগের নালিশকারী নিজেই নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে উল্লেখ করেছেন: “আমি সিদ্ধান্ত নন্দান সাহো, ইউএসএ ব্লগার, পরিচালক, শিক্ষা গবেষক, ভিডিও কনটেন্ট তৈরিকারক, সর্বোপরি এফবিআই এজেন্ট।” তিনি নিজেই অভিযোগে বলেন, তার কোম্পানির নাম “ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন”। আমার দেশ ইউকে কপিরাইট আইন লঙ্ঘন করে তার ওয়েবসাইটের লেখা নকল করেছে বলে দাবি করেন সিদ্ধান্ত নন্দান সাহো। তবে বিষ্ময়কর বিষয় হচ্ছে, তার ওয়েবসাইটে উল্লেখিত টেলিফোন নম্বরটিও ভুয়া।
নোমান প্রতিটি অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নির্ধারিত সময়ের ভেতর জবাব দিয়েছেন। তথ্য উপস্থাপন করে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, অভিযোগগুলো পুরোপুরি ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা। অভিযোগকারীর বিভিন্ন অসঙ্গতি তুলে ধরেছেন পাল্টা ইমেইলে। কিন্তু প্রতিটি জবাবের পরই হোস্টিং কোম্পানি জানিয়েছে, অভিযুক্ত আর্টিক্যালটি ওয়েবসাইট থেকে না সরানো পর্যন্ত তারা কিছুই বিবেচনা করবে না। নতুবা হোস্টিং কোম্পানি সার্ভিস ব্লক করে দেবে বলেও সতর্ক করে দেয়। হোস্টিং কোম্পানিগুলোর সাফ কথা, অভিযুক্ত আর্টিক্যাল সরিয়ে ফেলতে হবে। নতুবা ওয়েবসাইট ব্লক করে দেওয়া হবে।
নীতিগত দিক থেকে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট অভিযোগের ভিত্তিতে আর্টিক্যাল সরিয়ে নিতে রাজি নন নোমান। নোমান মনে করেন, মিথ্যা কপিরাইট আইন লঙ্ঘনের অভিযোগের ভিত্তিতে আর্টিক্যাল সরিয়ে নিলে অনৈতিক কর্মকাণ্ডকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়। এই অবস্থায় নোমানের সামনে একমাত্র বিকল্প হচ্ছে, হোস্টিং কোম্পানি পরিবর্তন করা। আমার দেশ ডট কো ডট ইউকে প্রথম চুক্তি করেছিল হোস্টিং কোম্পানি GoDaddy’র সঙ্গে। কিন্তু এ কোম্পানি কপিরাইট আইন লঙ্ঘনের মিথ্যা অভিযোগের বিষয়ে নোমানের কোনো বক্তব্যই আমলে নেয়নি। বরং আর্টিক্যাল সরাতে চাপ দিতে থাকে। তখন নোমান বিকল্প হিসেবে অন্য একটি হোস্টিং কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেন। সেপ্টেম্বরে Hetzner নামক একটি কোম্পানির সঙ্গে আমার দেশ ইউকের হোস্টিং চুক্তি হয়। কিন্তু এখানেও একই ঘটনা ঘটে। এতে অক্টোবরে আমার দেশ ইউকে নতুন করে চুক্তিবদ্ধ হয় Cloudflare নামক আরেকটি হোস্টিং কোম্পানির সঙ্গে। সর্বশেষ নভেম্বরে আমার দেশ ইউকে DigitalOcean-এর সঙ্গে হোস্টিং চুক্তি করে।
সর্বশেষ অভিযোগের পর যা ঘটেছে
গত ৮ ডিসেম্বর (২০২০) ডিজিটাল ওশানের পক্ষ থেকে একটি অভিযোগ পাওয়ার পর নোমান সিদ্ধান্ত নিলেন, এবার আর হোস্টিং কোম্পানি পরিবর্তন নয়। ভিন্ন কৌশল নিতে হবে। একের পর এক হোস্টিং কোম্পানি পরিবর্তনের বদলে নোমান সিদ্ধান্ত নিলেন, জালিয়াতির পুরো প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে আইনি চ্যালেঞ্জ করবেন। ডিজিটাল ওশানের ইমেইল পাওয়ার পরপরই আমার দেশ ইউকের পক্ষ থেকে ব্যাখ্যা এবং জবাব দিয়ে বলা হয়, এটি জালিয়াতিমূলক এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে তৈরি করা অভিযোগ। কিন্তু ডিজিটাল ওশান এই জবাবে কোনো ইতিবাচক সাড়া দেয়নি। এতে নোমান আগের মতো আর হোস্টিং কোম্পানি পরিবর্তনে না গিয়ে ডিজিটাল ওশানের পরবর্তী পদক্ষেপের অপেক্ষায় থাকেন। ডিজিটাল ওশানের পরবর্তী পদক্ষেপ হলো আমার দেশ ইউকের হোস্টিং সার্ভিস ব্লক করে দেয়া। চূড়ান্ত পদক্ষেপ হিসেবে ডিজিটাল ওশান ৩০ ডিসেম্বর হোস্টিং সার্ভিস ব্লক করে দেয় এবং আমার দেশ ইউকে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করে।
ডিজিটাল ওশানের কাছে কপিরাইট আইন লঙ্ঘনের অভিয়োগকারীর নাম উল্লেখ করা হয় “শহিদ উদ্দিন খান”। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তা রয়েছেন শহিদ উদ্দিন খান নামে। তিনি বর্তমানে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন। অবসরপ্রাপ্ত ওই সামরিক কর্মকর্তা শেখ হাসিনা সরকারের কঠোর সমালোচক হিসেবে ইদানিং পরিচিতি লাভ করেছেন। Astha Now নামে তাঁর প্রতিষ্ঠিত একটি বেসরকারি সংস্থাও রয়েছে। এই সংস্থাটির ওয়েবসাইটের ঠিকানা Asthanow.com
অভিযোগকারী ভুয়া “শহিদ উদ্দিন খান” একটি ওয়েবসাইট বানিয়েছেন। এটির নামও দিয়েছেন লন্ডনে অবস্থানরত সাবেক সেনা কর্মকর্তা শহিদ উদ্দিন খানের প্রতিষ্ঠিত ওয়েবসাইটের অনুকরণে Asthanow.net. অভিযোগকারী দাবি করেন, তার এই ওয়েবসাইটে আমার দেশ ইউকের সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের লেখা সম্পাদকীয়টি প্রথম প্রকাশিত হয়। এতে একটি বিষয় পরিস্কার যে, অভিযোগকারী লন্ডনে অবস্থানরত সরকারের সমালোচক শহিদ উদ্দিন খান সাজার চেষ্টা করেছেন।
এখানে স্পষ্ট যে এই নালিশ ছিল পুরোপুরি ভিত্তিহীন। যদিও Asthanow.net ওয়েবসাইট দাবি করেছে, আর্টিক্যালটি তাদের ওখানে ২০২০ এর ১০ নভেম্বরে প্রকাশিত হয়। অথচ এই ওয়েবসাইটের মূল তথ্যে গিয়ে দেখা যায়, এটি ২ ডিসেম্বর সর্বশেষ মোডিফাইড হয়েছে। আমার দেশ ইউকে ওয়েবসাইটে আর্টিক্যালটি প্রকাশের পরের দিন Asthanow.net ওয়েবসাইটে মোডিফাইড দেখানো আছে। এরপর এই ওয়েবসাইটের আর কোনো মোডিফিকেশন নেই। এর মাধ্যমে স্পষ্ট বোঝা যায়, আমার দেশ ইউকের আর্টিক্যালটি প্রকাশের একদিন পর হুবহু কপি করে Asthanow.net-এ পেস্ট করা হয়েছে মাত্র।
আমাদের পক্ষ থেকে এ অভিযোগের বিষয়ে ডিজিটাল ওশানের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা কোনো জবাব দেয়নি।
ইউটিউবারদের বিরুদ্ধেও কপিরাইটের অভিযোগ
নির্বাসিত অবস্থান থেকে প্রকাশিত আমার দেশই একমাত্র ভিন্ন মতাবলম্বী পত্রিকা নয়, যার বিরুদ্ধে কপিরাইট আইন লঙ্ঘনের এমন অভিযোগ আনা হয়েছে। এ রকম বানোয়াট অভিযোগের শিকার হওয়াদের তালিকায় ভিন্ন মতাবলম্বী ইউটিউব চ্যানেলও রয়েছে।
২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে সাংবাদিক কনক সারোয়ার একটি ইউটিউব চ্যানেল চালু করেন। কনক সারোয়ার তখন বাংলাদেশে বেসরকারি টেলিভিশন একুশে টিভিতে রিপোর্টার ও প্রেজেন্টার ছিলেন। তার ইউটিউব চ্যানেলটির নাম ছিল “কনক সারোয়ার লাইভ”। ২০১৫ সালের মার্চ মাসে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একটি বক্তব্য প্রকাশের অভিযোগে একুশে টেলিভিশনের মালিকসহ কনক সারোয়ারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ২০১৫ সালের নভেম্বরে জামিনে কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। এর পরপরই তাকে দেশত্যাগ করতে বলা হলে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান কনক। এখন ওখানেই অবস্থান করছেন তিনি।
২০১৮ সাল থেকে কনক সারোয়ার আবারো ইউটিউব চ্যানেলে খুলেন এবং ভিডিও আপলোড শুরু করেন। এই ভিডিওগুলোর বেশিরভাগই হচ্ছে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সমালোচনামূলক। কনক তার ইউটিউব চ্যানেলটিতে ১৮৫টি ভিডিও আপলোড করেছেন।
অথচ ২০১০ সালের জুলাই মাসের ২ তারিখে ইউটিউব কর্তৃপক্ষ কনক সারোয়ারকে লিখিতভাবে জানান, আফরিন মিউজিক নামের একটি চ্যানেলের পক্ষ থেকে তার আপলোড করা ভিডিওর বিরুদ্ধে কপিরাইট আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ করা হয়েছে। ইউটিউব কর্তৃপক্ষের পলিসি অনুযায়ী এ ধরনের অভিযোগ “স্ট্রাইক” হিসেবে পরিচিত। এই স্ট্রাইকের মুখোমুখি হলে সংশ্লিষ্ট ভিডিও সরিয়ে নিতে বলা হয় ইউটিউবের পক্ষ থেকে। এরকম তিনটি স্ট্রাইকের ভিত্তিতে ইউটিউব থেকে কনককে জানিয়ে দেওয়া হয়, তার চ্যানেলের এক্সেস বন্ধ করা হয়েছে। পরবর্তী এক সপ্তাহের মধ্যে কনক মোট ১৬টি ভিডিওর বিরুদ্ধে স্ট্রাইকের শিকার হন। ফলে তখন তার চ্যানেলটি ব্লক করে দেওয়া হয়।
আমার দেশের নোমানের মতোই কনকও জানতেন, এই অভিযোগগুলো ডাহা মিথ্যা। কপিরাইট আইন লঙ্ঘনে অভিযুক্ত ভিডিওগুলো ছিল তার নিজের তৈরি করা অথবা একুশে টেলিভিশনের প্রচারিত পুরাতন বিভিন্ন অনুষ্ঠান থেকে নেওয়া। কনক সরোয়ার দাবি করেন, এই ভিডিওগুলোর কপিরাইট তার নিজের। যদিও এখানে একটি প্রশ্ন রয়েছে যে একুশে টেলিভিশনের কোনো ভিডিওর কপিরাইট কনকের হতে পারে কি না? তবে একুশে টেলিভিশন এই ভিডিওগুলো নিয়ে কখনো কনকের বিরুদ্ধে কপিরাইট লঙ্ঘনের দাবি করেনি।
এখানে আমার দেশ এবং কনক সারোয়ারের ইউটিউবের ক্ষেত্রে যে মিল রয়েছে, তা হলো এ দুটি প্রচারমাধ্যমের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের পদ্ধতিগুলো অভিন্ন। “আফরিন মিউজিক” নামক ওয়েবসাইটটি তৈরি করা হয়েছে ২০২০ সালের ২৮ মে। এই ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছিল কনক সারোয়ারের ইউটিউব চ্যানেলের ১৬টি ভিডিও। ইউটিউব কর্তৃপক্ষের কাছে ধারাবাহিক নালিশে বলা হয়, কনক সারোয়ারের ইউটিউবে আপলোড করা ভিডিওগুলোর কপিরাইট তাদের (আফরিন মিউজিক)।
এখানেও সহজেই অনুমেয়, আফরিন মিউজিকের অভিযোগগুলো ছিল ফেক বা বানোয়াট। কারণ, আফরিন মিউজিকের ভিডিওগুলো আপলোডের তারিখ দেখান হয়েছিল ২০১০ সালের জুন এবং জুলাই মাসে। অর্থাৎ ওয়েবসাইট তৈরির ১০ বছর আগেও ভিডিও আপলোডের তারিখ দেখানো হচ্ছে। এই ভিডিওগুলোর আরও কিছু বিষয় স্পষ্ট। যেমন, বেশিরভাগ ভিডিওর বিষয়বস্তুতে যে চিত্র উঠে এসেছে, সেগুলো ২০১০ সালের পরে সংঘটিত এবং ভিডিওগুলো কনক সারোয়ারের করা।
নোমানের মতোই কনক সারোয়ারও বিশ্বাস করেন, এটি বাংলাদেশ সরকারের গোয়েন্দা এজেন্সিগুলোর কাজ। তারাই তাকে গ্রেপ্তার করেছিল এবং দেশত্যাগে বাধ্য করেছে। আফরিন মিউজিকের ওয়েবসাইটে (afreen-music.com) প্রবেশ করলে বর্তমানে বলা হচ্ছে, নো কনটেন্ট।
এমন ঘটনা শুধু কনক সারোয়ারের ইউটিউব চ্যানেলের ক্ষেত্রেই ঘটেনি। বাংলাদেশ সরকারের সমালোচক এবং নির্বাসিত অনেকের ক্ষেত্রেই এমন ঘটনা ঘটছে। সরকারের সমালোচক হিসেবে পরিচিত রহমান মাসুমের ইউটিউব চ্যানেলের বিরুদ্ধেও কপিরাইট আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে “স্ট্রাইক” হয়েছিল। ফলে তার চ্যানেলটি ব্লক করে দিয়েছিল ইউটিউব কর্তৃপক্ষ। এই স্ট্রাইক এবং ইউটিউব কর্তৃপক্ষের অ্যাকশনের বিরুদ্ধে রহমান মাসুম আপিল করেছিলেন। তার আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে ইউটিউব কর্তৃপক্ষ চ্যানেলটির উপর থেকে ব্লক উঠিয়ে নিয়ে ফের এক্সেস দেয়।
এছাড়া সরকারের কঠোর সমালোচক হিসেবে পরিচিত আমেরিকা প্রবাসী মিনা ফারাহর ওয়েবসাইটের বিরুদ্ধেও এমন অভিযোগ করা হয়েছিল।
কনক সারোয়ার এখন নতুন আরেকটি ইউটিউব চ্যানেল চালু করেছেন। এটির নাম হচ্ছে Kanaksarwar News, এখানেই এখন তিনি ভিডিও আপলোড করছেন। এরইমধ্যে বেশ জনপ্রিয়ও হয়ে উঠেছে চ্যানেলটি।
আমাদের পক্ষ থেকে উপরে উল্লেখিত কপিরাইট প্রসঙ্গে ইউটিউব কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারাও কোনো জবাব দেয়নি।
কপিরাইট অভিযোগের নেপথ্যে কারা?
এই ডাহা মিথ্যা কপিরাইট অভিযোগের পেছনে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর অপতৎপরতা জড়িত — নোমান, সারোয়ার এবং মাসুমের এমনটা বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। সরকারের সমালোচনামূলক ভিডিও এবং আর্টিক্যালগুলো সরিয়ে ফেলতে অথবা ওয়েবসাইট ও ইউটিউবগুলো বন্ধ করে দিতেই গোয়েন্দা সংস্থার নির্ধারিত এজেন্টরা এমন অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। দেশের ভেতরে সরকারের সমালোচনা বন্ধ করতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। গত কয়েক বছরে শতাধিক ওয়েবসাইটের বাংলাদেশে ডাউনলোড ব্লক করে দেওয়া হয়েছে। সরকারের সমালোচনার কারণে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কয়েক ডজন সাংবাদিক এবং শতাধিক সোস্যাল মিডিয়া এক্টিভিষ্টকে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো রয়েছে সরকারের কড়া নজরদারিতে। প্রিন্ট মিডিয়াগুলো সরকারের সমালোচনা থেকে বিরত থাকছে।
দেশের ভেতরে এবং বাইরে সরকারের সমালোচনাকারী ওয়েবসাইট ও ফেইসবুক আইডি বন্ধ করতে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের ঠিকাদাররা ভিন্নমতের ওয়েবসাইট ও সরকারের সমালোচনাকারী ফেইসবুক আইডি বন্ধ করতে কীভাবে মিথ্যা কপিরাইট অভিযোগ তৈরি করে, সে প্রসঙ্গে নেত্র নিউজ এর আগেও তথ্য প্রকাশ করেছে। এই সংস্থার সদস্যরা দেশের ভেতরে এবং বাইরে থেকে পরিচালিত সরকারের সমালোচনাকারী ফেইসবুক আইডি এবং ওয়েবসাইট বন্ধে তৎপর।
নেত্র নিউজে সম্প্রতি প্রকাশিত একটি নিবন্ধে তথ্য প্রমাণ দিয়ে দেখানো হয়েছে, ডিজিএফআই-এর পাবলিক রিলেশনস মনিটরিং সেলে (পিআরএমসি) কর্মরত সদস্যরা এটা করে থাকেন।
ওই আর্টিক্যাল প্রকাশের সময় পিআরএমসির একজন ঠিকাদার নেত্র নিউজকে বলেছিলেন, “বিভিন্ন টিমের মধ্যে কাজ ভাগ করে দেওয়া আছে। এই টিম করে কপিরাইট, এই টিম করে ভায়োলেন্স, এই টিম করে কমেন্ট, এই টিম করে অ্যাকাউন্ট ডিজেবল।” এতেই স্পষ্ট, ডিজিএফআইয়ের একটি টিম এসব কাজে জড়িত।
নেত্র নিজউজের কাছে বিস্ফোরক এমন মন্তব্য প্রদানকারী আরও বলেছিলেন, ফেসবুকের হাজারো আইডির তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এই তালিকায় নির্ধারিত পোষ্ট, পেজ এবং প্রোফাইল টার্গেট রয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই হচ্ছে সরকারের সমালোচক সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, ভিন্নমতের ব্যক্তি এবং বিরোধী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।
নেত্র নিউজের প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে অনুসন্ধান চালানো হয়। এই অনুসন্ধানের মাধ্যমে ডিজিএফআইয়ের হয়ে কাজ করা দুটি সিভিলিয়ান সংস্থার আইডি বন্ধ করে দিয়েছে ফেইসবুক। এই সিভিলিয়ান দুই সংস্থা হচ্ছে ডন’স টিম এবং ক্রাইম রিসার্চ অ্যান্ড এনালাইসিস ফাউন্ডেশন (ক্র্যাফ)। ফেইসবুকের একটি প্রেস রিলিজে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, “ডন’স টিম এবং ক্র্যাফ যৌথভাবে বিভিন্ন ফেইসবুক আইডির বিরুদ্ধে ফেইসবুকের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড নীতিমালা লঙ্ঘন, ইন্টিল্যাকচ্যুয়াল প্রপার্টি চুরির অভিযোগ এবং সন্ত্রাসবাদে উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ করত।”
ডিজিএফআইয়ের সিভিলিয়ান ঠিকাদাররাই ভিন্নমতের ওয়েবসাইট ও ইউটিউব চ্যানেলের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের অপকৌশল গ্রহণ করে থাকে বলে মনে করা হচ্ছে। তাদের এমন কার্যক্রমের ফলে বাংলাদেশ সরকারের সমালোচক সাংবাদিকরাও নিজেদের মধ্যে সেলফ সেন্সরশীপ গড়ে তুলছেন।●
ডেভিড বার্গম্যান নেত্র নিউজের ইংরেজী বিভাগের সম্পাদক।