বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রকৃত চিত্র
বছরখানেক আগে করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়লে নিরাপত্তা হিসেবে সারাবিশ্বে দেশ ভিত্তিক লকডাউন, সামাজিক দূরত্ব ইত্যাদি বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। এতে বিশ্ব জুড়েই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়ে। মহামারি এবং এর ফলে জনস্বাস্থ্য রক্ষার্থে গৃহীত পদক্ষেপ মিলেমিশে তৈরি হয় এক অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক হতবিহ্বল দশা।
বাংলাদেশও এর থেকে মুক্ত ছিল না। তবে গত বছর অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়া এবং তারপর পূর্বাবস্থায় ফিরে আসার গতি ও গতিপথ নিয়ে উল্লেখযোগ্য চিন্তার পার্থক্য বিদ্যমান। সরকারের আনুষ্ঠানিক উপাত্তসমূহ শুধু আশাব্যঞ্জক দিক প্রকাশ করে। সরকারি হিসাবে এই অর্থ বছরেই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৮% এর উপরে চলে আসার কথা। কিন্তু মহামারির আগেও আমরা প্রাক্কলিত প্রবৃদ্ধির যে আনুষ্ঠানিক হিসাব পেয়েছি, তা কতখানি সঠিক সে বিষয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে পাওয়া প্রাক্কলিত প্রবৃদ্ধির আনুষ্ঠানিক হিসাবের ক্ষেত্রে বাড়িয়ে হিসাব দেয়ার অভিযোগ যেমন রয়েছে, তেমনি আনুষ্ঠানিক হিসাবের আরেকটি সমস্যা হলো, সরকারের জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) উপাত্ত শুধুমাত্র বাৎসরিক ভাবে পাওয়া যায়। অর্থাৎ, সরকারের দেয়া প্রাক্কলিত প্রবৃদ্ধি (প্রবৃদ্ধি কতখানি ঘটবে তার হিসাব) মেনে নিলেও অর্থবছর শেষ হবার আগে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হচ্ছে কিনা, তা যাচাইয়ের কোনো পথ নেই।
এসব দিক বিবেচনায় ওয়ার্ল্ড ব্যাংক এখন আর জিডিপি উপাত্তের জন্য সরকারি তথ্যের উপর নির্ভরশীল না থেকে ভিন্ন এক বৃহত্তর পদ্ধতি অবলম্বন করছে। গুগলের মোবিলিটি (মানুষের চলাফেরার) তথ্য, বিদ্যুৎ উৎপাদন, সরকারের রাজস্ব আয়, তৈরি পোশাক খাতে রফতানি এবং যানবাহন আমদানির তথ্য দিয়ে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক জিডিপি হিসাব করেছে। সে হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ সালের মার্চ মাসের আগ পর্যন্ত ২০১৯/২০ অর্থ বছরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ৫% এর অধিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছিল। কিন্তু জুনে তা সংকুচিত হয়ে আসে (বাংলাদেশে অর্থ বছর হিসাব হয় ১ জুলাই থেকে ৩১ জুন)। সব মিলিয়ে, ২০১৯/২০ অর্থবছরে মাত্র ২% প্রবৃদ্ধি দেখা গিয়েছে বলে ধারনা করা হয়, যা চলতি বছরে আরও কমে ১.৬% এ নেমে আসে।
এই নিবন্ধে উপস্থাপিত ছকগুলো ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের পদ্ধতি অনুসরণ করে তৈরি করা হয়েছে। এই চলকগুলো নির্ধারণের জন্য যে বিষয়গুলো পরিমাপ করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে: বিদ্যুৎ উৎপাদন, শিল্প উৎপাদন, আমদানি-রফতানি, বেসরকারি খাতে ক্রেডিট, রাজস্ব আয়, উন্নয়ন ও উন্নয়ন বহির্ভূত খাতে খরচ, রেমিটেন্স, শ্রমিকদের বিদেশ গমন, মজুরি, মুদ্রাস্ফীতি, চালের দাম, বাড়িভাড়া, সুদের হার, পাবলিক সেক্টরের জন্য ক্রেডিট, বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ এবং স্টকের মূল্য।
গুগলের মোবিলিটি তথ্য বাদে, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের ব্যবহৃত বাকি সব চলকই এই তালিকায় ব্যবহৃত হয়েছে।
এর মাঝে কিছু কিছু চলক জিডিপিতে অবদান রাখে, অন্যগুলো জিডিপির সঙ্গে সম্পর্কিত। কিছু কিছু বিষয় আবার সরাসরি প্রবৃদ্ধির সঙ্গে জড়িত না হলেও অর্থনীতির স্বাস্থ্য কেমন, তার ধারনা দিতে পারে। এসব চলক কতগুলো ছক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এর সময়কাল মাসিক হিসাবে ভাগ করা। প্রতিটি ছকের সঙ্গে একটি সংক্ষিপ্ত মতামত দেয়া হয়েছে এবং সেই সঙ্গে আছে সার্বিক বিশ্লেষণ।
ছকগুলোর সাহায্যে দেশের অর্থনীতির চলমান প্রকৃত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সম্ভব হবে। সেই সঙ্গে, এই ছকগুলো থেকে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে বিকৃত করা সহজ নয়, এমন তথ্য ব্যবহারের ফলে অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি অপেক্ষাকৃত সঠিকভাবে বোঝা সম্ভব হবে।
ছকগুলো প্রতি কোয়ার্টারে — তিন মাস অন্তর অন্তর — নেত্র নিউজের ওয়েবসাইটে হাল নাগাদ করা হবে।
তবে এখানে একটি বড় সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বিবেচনায় রাখা আবশ্যক, চলকগুলো শুধু নগরের এবং আনুষ্ঠানিক অর্থনীতিকে উপস্থাপন করবে। গ্রামাঞ্চল, কৃষি এবং অনানুষ্ঠানিক খাত (ইনফরমাল সেক্টর) এখানে প্রতিফলিত হবে না। গত ৫০ বছরে বিভিন্ন উন্নয়ন সত্ত্বেও বাংলাদেশ এখনো এমন একটি দরিদ্র দেশ, যেখানে অর্থনীতির বড় একটি অংশই গ্রামীণ অর্থনীতি এবং যার বিশাল একটি অংশ জুড়ে আছে অনানুষ্ঠানিক খাত। তাছাড়া আনুষ্ঠানিক অর্থনীতি যখন স্থবির হয়ে আছে, তখন অনানুষ্ঠানিক খাত যে ভালো করবে, তারও কোনো শক্তিশালী যুক্তি নেই। কৃষি খাতে স্পষ্ট চলক না থাকাটা বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে বড় ধরনের সীমাবদ্ধতা।
ছকে ব্যবহৃত সব তথ্য সিইআইসি এশিয়া ডাটাবেস থেকে গৃহীত। অবিশ্লেষিত তথ্য কোথায় একত্রিত করে ব্যবহৃত হয়েছে, তা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিটি ছকের জন্য সর্বশেষ তথ্য কোন পর্যন্ত রয়েছে, তাও ছকে উল্লেখ করা হয়েছে।
ছক ১: বিদ্যুৎ উৎপাদন
সাধারণত বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়লে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেড়েছে বলে বিবেচনা করা হয়। অথচ বিদ্যুৎ উৎপাদন চলক কোনো নির্দিষ্ট সময়ে জিডিপির তুলনায় ভিন্ন গতিতে বৃদ্ধি পেতে পারে। যেমন, যখনই নতুন বিদ্যুৎ উৎপাদন দেশের বিদ্যুৎ সরবরাহে সংযুক্ত হবে, তখনই এর গতি বৃদ্ধি পাবে। দেশে করোনা মহামারির আগে বাৎসরিক ৯% থেকে ১১% হারে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছিল। ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে এই বৃদ্ধি কমে আসতে শুরু করে। এরপর নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় আর কোনো বৃদ্ধিই ঘটেনি।
ছক ২: শিল্প উৎপাদন
শিল্পে উৎপাদন সরাসরি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখে। মাঝারি এবং বৃহৎ শিল্প উৎপাদন প্রবৃদ্ধি মহামারির অনেক আগে থেকেই কমে আসছিল। এর মধ্যে রয়েছে তৈরি পোশাক খাত। শিল্প উৎপাদন মহামারির আগের বছরে বাৎসরিক ১৫% এর বেশি হারে বৃদ্ধির দশা থেকে কমে ২০১৯ এর মাঝামাঝিতে ৯% এর নিচে নেমে আসে। নভেম্বর ২০২০ পর্যন্ত এই চলকে প্রায় কোনো বৃদ্ধিই ঘটেনি।
ছক ৩: রফতানি
জিডিপি হিসাবের একটি বড় অংশ রফতানি। শিল্প উৎপাদনের মতোই মহামারির অনেক আগে থেকেই রফতানির প্রবৃদ্ধি কমতে শুরু করে। ২০১৮ সালে রফতানি ১০% হারে বাড়ছিল। তারপর ২০১৯ এর মাঝামাঝিতে তা কমে ৩% এ নেমে আসে, যা মহামারি আবির্ভাবের অনেক আগেই ঘটেছে। তারপর তো গত বছর লকডাউনের মধ্যে স্বাভাবিক কারণেই রফতানিতে আরও পতন ঘটে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে এসে রফতানির প্রবৃদ্ধি হ্রাস বন্ধ হয়, বছর সমাপ্তির ভিত্তিতে।
ছক ৪: আমদানি
আমদানি মানেই সে পরিমাণ খরচ জিডিপি থেকে বাদ হয়ে যাওয়া। যদিও আমদানি করা সামগ্রী ও সেবা ভোগ করা হয় বা উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়। ফলে বলা যায়, আমদানি পরোক্ষভাবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখে। কিন্তু আমদানি যদি অতিরিক্ত শ্লথ হয়ে পড়ে, তাতে অভ্যন্তরীণ ভোগ ও বিনিয়োগের দুর্বলতা প্রকাশ পায়। ২০১৯ এর দ্বিতীয় অর্ধে বাৎসরিক ভিত্তিতে আমদানি প্রবৃদ্ধি নিম্নমুখী ছিল, যা করোনার আগে অন্যান্য চলকের অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এরপর ২০২০ এর মাঝামাঝি সময়ের মতো না হলেও ডিসেম্বর নাগাদ এসে আমদানি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গিয়েছিল।
ছক ৫: বেসরকারি খাতে ক্রেডিট
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং ব্যবসা থেকে বিনিয়োগ হবার একটি প্রধান নির্দেশক হলো বেসরকারি খাতে ক্রেডিট প্রদান। এই চলকের খুব দ্রুত বেড়ে যাওয়ার অর্থ হতে পারে যে কর্পোরেট খাত অতি উৎসাহী হয়ে উঠছে, যা টিকিয়ে রাখা কঠিন। আবার ক্রমাগত মন্থর গতি নির্দেশ করে যে বিনিয়োগের সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। ২০১৮ সালের শুরুর দিক থেকে বেসরকারি খাতে ক্রেডিট প্রবৃদ্ধি কমে যেতে শুরু করে। জানুয়ারি ২০২১ এ এসেও তা পুনরুদ্ধারের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
ছক ৬: রাজস্ব আয়
প্রত্যেক সরকারই সাধারণত গৃহস্থালি ভোগ এবং গৃহস্থালি ও কর্পোরেট আয়ের উপর রাজস্ব আদায় করে থাকে। এর সবই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখে। বাংলাদেশে রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি মন্থর হতে শুরু করে ২০১৯ এর দ্বিতীয়ার্ধে। মহামারীর জন্য আরোপিত লকডাউনে তা সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়ে। বছর-শেষ হিসেবে জানুয়ারি ২০২১ এ এসেও রাজস্ব চলক ছিল নিম্নমুখী।
ছক ৭ ও ৮: উন্নয়ন খাতে ব্যয় ও উন্নয়ন বহির্ভূত খাতে ব্যয়
উন্নয়ন ও উন্নয়ন বহির্ভূত খাতে ব্যয় — দুইই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখে। দুই ক্ষেত্রেই ধস নামে লকডাউনের সময়। ২০২০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত বছর-শেষ হিসেবে এর কোনোটির নিম্নমুখী যাত্রা থেমেছে বলে মনে হয় না।
ছক ৯ ও ১০: রেমিটেন্স ও প্রবাসী শ্রমিক
জিডিপির হিসাবে সরাসরি যুক্ত না হলেও প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো আয় বা রেমিটেন্স বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মহামারির প্রাথমিক পর্যায়েই রেমিটেন্সে ধস নামে। কিন্তু বছরের দ্বিতীয়ার্ধে আবার জোরালোভাবে তা বাড়তে দেখা যায়। এখানে মাথায় রাখতে হবে যে এটা আনুষ্ঠানিক হিসাব। এর সমান্তরালে মহামারির শুরুর দিকেই রেমিটেন্স আসার যে পদ্ধতি (যা হুন্ডি নামে পরিচিত) তা আন্তর্জাতিক ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞার কারণে প্রায় সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ফলে আনুষ্ঠানিক পদ্ধতিতে রেমিটেন্স আসা বেড়ে যায়। ২০২০ এর মাঝামাঝি এসে শ্রমিকদের বিদেশ যাত্রা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এ বছর জানুয়ারিতে এসে আবার তা খুব ধীরে ধীরে শুরু হচ্ছে বলে দেখা যাচ্ছে।
ছক ১১ ও ১২: মজুরি হার সূচক এবং মুদ্রাস্ফীতি
মজুরি হার সূচকের বৃদ্ধি সাধারণত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও মুদ্রাস্ফীতির উপর নির্ভরশীল। ২০২০ এর মার্চ ও জুনের মধ্যে মজুরি হার সূচকের বৃদ্ধি অত্যন্ত কমে আসে। কিন্তু তারপর আবার দ্রুত তা বাড়তে থাকে। বছর-শেষ হিসাবে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মুদ্রাস্ফীতির পরিমাণ ছিল মধ্যম। আগের বছরের অক্টোবরে খাদ্য মূল্য বৃদ্ধি ছিল ব্যতিক্রম।
ছক ১৩ ও ১৪: চালের মূল্য ও ঢাকায় বাড়িভাড়া
ঢাকায় চালের দাম দেখলে দেশে খাদ্য মূল্যবৃদ্ধি তথ্যের সত্যতা পাওয়া যায়। খাদ্য মূল্য লকডাউনের শুরু থেকে ২০২০ এর আগস্ট মাস পর্যন্ত ক্রমাগত বেড়েছে। এটা খুব সম্ভবত লকডাউনের ফলে সাপ্লাই-চেইনের উপর পড়া প্রভাবের প্রতিফলন। এদিকে সার্বিক অর্থনৈতিক মন্দার সঙ্গে তাল রেখে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঢাকায় বাসা ভাড়া সূচকেরও নিম্নগতি লক্ষ্য করা যায়।
ছক ১৫, ১৬, ১৭: সুদের হার, সরকারি খাতে ক্রেডিট এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ
উপরে আলোচিত চলকগুলো ছাড়াও সরকারের নীতি নির্ধারণ এবং কর্মকাণ্ড দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলে। মহামারির শুরু থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংক আনুষ্ঠানিক সুদের হার কমিয়েছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হিসাবে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংকে ডিপোজিট ও ঋণ দুটোর হারই কমে এসেছে। কাগজ-কলমে এটা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাওয়াকে সমর্থন করে।
অপরদিকে, সরকারি খাতে ক্রেডিট খুব দ্রুত বাড়লে তা বেসরকারি ঋণ গ্রহণ ও বিনিয়োগকে স্থানচ্যুত করে ফেলে। মহামারির শুরুতে সরকারি খাতে ঋণগ্রহণ দ্রুত বেড়ে যায়। কিন্তু পরবর্তীতে তা কমে আসে বলে মনে হতে থাকে এবং এ বছরের জানুয়ারিতে এসেও তা কমছে।
সর্বশেষে, অর্থনৈতিক কোনো ধাক্কা ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ একটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক। সাধারণত, তিন মাসের আমদানি সামাল দিতে পারার মতো মজুদ থাকাকে যথেষ্ট পরিমাণ বলে ধরা হয়ে থাকে। ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মজুদের (কত মাসের আমদানি — সে হিসেবে প্রদর্শিত) পরিমাণ থেকে আমদানিতে নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।
ছক ১৮: স্টক মার্কেট
যদিও এতে নিখুঁত চিত্র পাওয়া যায় না, তারপরও স্টক মার্কেটকে অর্থনীতির অগ্রগতির সূচক হিসেবে প্রায়শই ব্যবহার করা হয়ে থাকে। উপরে আলোচিত অন্যান্য চলকের মতোই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ২০১৯ এর মাঝামাঝি সময় থেকে পতন ঘটতে শুরু করে। তবে লক্ষণীয় হলো, গত বছরের শেষদিকেই স্টক মার্কেট তার নিম্ন ধাবমান প্রবণতার শেষ সীমায় পৌঁছে গিয়েছিল বলে প্রতীয়মান হয়। পরে ২০২১ এর ফেব্রুয়ারি থেকে আবার তা উর্ধ্বমূখি হতে শুরু করে।
সামগ্রিক মূল্যায়ন
বাংলাদেশের অর্থনীতি মহামারী-উদ্ভূত মন্দা শুরুর আগে থেকেই পতনশীল ছিল। এখনো এর টেকসই কোনো পুনরুত্থানের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। উৎপাদনের নিম্নমুখী প্রবণতা তার শেষ প্রান্তে পৌঁছে গিয়েছে বলেই মনে হচ্ছে (অর্থাৎ এরপর আবার বৃদ্ধি শুরু হবে); কিন্তু দৈনন্দিন চাহিদার ক্ষেত্রে বিষয়টা সম্ভবত এক রকম নয়। শ্রম চাহিদা বিপর্যয় কাটিয়ে উঠলেও খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি থেকে বোঝা যায় যে খামারজাত দ্রব্যের সরবরাহ ব্যবস্থায় (ফার্ম সাপ্লাই চেইনের) সমস্যা রয়ে গেছে।●
জ্যোতি রহমান, এ্যাপ্লাইড ম্যাক্রোইকনোমিস্ট।