কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন: গোপন স্বার্থ ও টিকা রাজনীতি

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা যখন ভারতের অক্ষম ও লোকদেখানো টিকা কূটনীতির ঠিকাদার।

কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন: গোপন স্বার্থ ও টিকা রাজনীতি

গত ফেব্রুয়ারিতে চীনে সাধারণ মানুষের ব্যবহারের জন্য সিনোভ্যাক বায়োটেকের করোনাভ্যাক অনুমোদন দেয় দেশটির ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। চীনে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত করোনার দ্বিতীয় ভ্যাকসিন হিসেবে এর অনুমোদন দেওয়া হয়। চীন ছাড়াও ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, ব্রাজিল, চিলি, কলম্বিয়া, উরুগুয়ে ও লাওস কোরোনাভ্যাক ভ্যাকসিনের জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। দেশের বাইরে দুই মাসের শেষ ধাপের ট্রায়ালের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে চীনের ন্যাশনাল মেডিকেল প্রোডাক্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন দুই ডোজে ভ্যাকসিনটি ব্যবহারের অনুমোদন দেয়। সিনোভ্যাক লাইফ সায়েন্সের বেইজিং ইউনিটে প্রতি বছর ১০০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন উৎপাদন সম্ভব হবে বলে মনে করছে কোম্পানিটি। তারা গত মার্চ মাসে বেইজিংয়ে বিশেষায়িত কোভিড-১৯ ল্যাব নির্মাণের কাজও শুরু করে। এই টিকা নিয়ে ব্রাজিল, তুরস্ক ও ইন্দোনেশিয়া ফেজ-ওয়ান ও ফেজ-টু পর্যায়ের পরীক্ষা চালিয়েছে।

এদিকে টিকার তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল বাংলাদেশে করার জন্য সিনোভ্যাকের স্থানীয় অংশীদার হিসাবে আইসিডিডিআর,বি বাংলাদেশে মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিলের (বিএমআরসি) কাছে আবেদন করে। বাংলাদেশের মানুষের উপর এই গবেষণা চালাতে অনুমোদনের আবেদন করে তারা। বিএমআরসি যথারীতি তার অনুমোদনও দেয়। বাংলাদেশে ফেজ-থ্রি ট্রায়ালের কারণ হিসেবে সিনোভ্যাক বায়োটেকের প্রেসিডেন্ট ইয়িন ওয়েডং সংবাদ সংস্থা ইএফইকে বলেন, চীনে করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে থাকায় দেশটির বাইরেই পরীক্ষাটি চালানো ভালো। তা না হলে এর কার্যকারিতা প্রমাণ করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। তারা বাংলাদেশ ছাড়া অন্যান্য দেশেও করোনার টিকাটি পরীক্ষার কথা ভাবছেন।

সিনোভ্যাকের প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে ৬০ জনের ওপর টিকা পরীক্ষায় তা নিরাপদ রোগ প্রতিরোধক হিসেবে প্রমাণিত হয়। এর পরই তৃতীয় ধাপে বাংলাদেশে এ টিকার কার্যকারিতা পরীক্ষার কথা ছিল। সিনোভ্যাকের লক্ষ্য ছিল সব বয়সী মানুষের জন্য এ টিকার কার্যকারিতা নিশ্চিত করা।

সিনোভ্যাকের টিকাটি সম্ভাবনাময় বলে অভিহিত হওয়ায় বিভিন্ন দেশ টিকার জন্য আগাম ফরমায়েশ দিতে শুরু করে। ব্রাজিল ২০২০ সালেই এই টিকার ৪ কোটি ৬০ লাখ আগাম ফরমায়েশ দিয়েছিল। এ বছর আরও ১ কোটি ৬০ লাখ সিনোভ্যাকের টিকা নেবে দেশটি। এছাড়াও সিনোভ্যাক স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের স্বার্থে অন্যান্য দেশের সঙ্গে যৌথ উৎপাদন ও টেকনোলজি ট্রান্সফার বিষয়ক চুক্তি করে, যাতে স্থানীয়ভাবে অন্যান্য সক্ষম কোম্পানিও এই টিকা উৎপাদন করতে পারে। এ লক্ষ্যেই লাতিন আমেরিকায় ব্রাজিলের বুটানটান নামের কোম্পানির সঙ্গে স্থানীয়ভাবে টিকা উৎপাদনের চুক্তি হয় সিনোভ্যাকের।

সিনোভ্যাক যখন বাংলাদেশে ভ্যাকসিন ট্রায়ালের প্রস্তাব দেয়, তখন সঙ্গে বাংলাদেশের জন্য আরও দুটি লোভনীয় প্রস্তাব দেয় কোম্পানিটি। প্রস্তাব দুটি হলো: কিছু ফ্রি ভ্যাকসিন দেয়া, আর সঙ্গে বিনা খরচে ভ্যাকসিন বানানোর প্রযুক্তি সরবরাহের প্রতিশ্রুতি। বিনা খরচে ভ্যাকসিন বানানোর প্রযুক্তি হাতে পেলে বাংলাদেশ আজ নিজেই নিজের ভ্যাকসিন উৎপাদন করতে পারত। শুধু তাই নয়, তখন বাংলাদেশ নিজের চাহিদা মিটিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় কোভিডের ভ্যাকসিন সরবরাহের একটা অন্যতম উৎস হয়ে উঠতে পারত।

কিন্তু হঠাৎই দেখা গেল, রহস্যময় কারণে বাংলাদেশে সিনোভ্যাকের ট্রায়ালের কাজে ভাটা পড়ে যায়। আর তখন সরকার ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছে থেকে ভ্যাকসিন নেয়ার তোড়জোড় শুরু করে।

সেরামের কাছ থেকে ভারত সরকার প্রতি ডোজ টিকা কিনছে ২০০ রুপি বা ২.৭২ ডলার দরে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এটি ২৩১ টাকার মতো। এই হিসাবে, বাংলাদেশকে টিকার প্রতি ডোজ কিনতে ভারতের চেয়ে প্রায় ৪৭% বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে। অথচ সেরামের সাথে বাংলাদেশের করা চুক্তিতে উল্লেখ আছে, ভারত ৪ ডলারের চেয়ে কম দামে কিনলে, সেরামকে আমাদেরও সেই দামে দিতে হবে। বেক্সিমকোর এম ডি নাজমুল হাসানের মতে, চার ডলার ছিলো ভ্যাকসিনের সম্ভাব্য দাম, ভ্যাকসিনের প্রথম কিস্তি পাবার পরে চূড়ান্ত দাম কত হবে সে সম্পর্কে নাজমুল হাসান মন্তব্য করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ভ্যাকসিনের দুইটি চালান চলে আসার পরেও চুড়ান্ত দাম নির্ধারণ করা হয়নি। তাই এখনো পর্যন্ত কত দামে বাংলাদেশ কিনছে ভ্যাকসিনের সেটা কেউই জানেনা। এমনকি সরকারও জানেনা।

চুড়ান্ত দাম নির্ধারণ না করেই সম্ভাব্য দাম নির্ধারণ করে আমরা ভ্যাকসিন কেনার জন্য সেরামের সঙ্গে অগ্রিম চুক্তি করি। বেক্সিমকো সেরামের স্থানীয় পরিবেশক নিযুক্ত হয়। শুধু তাই নয়, তিন কোটি ডোজের জন্য সেরামের সঙ্গে আগাম চুক্তি ও সেরাম ইনস্টিটিউটের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে সেখানে বিনিয়োগ করা হয়।

সিনোভ্যাকের ট্রায়াল বাংলাদেশে বন্ধ করে দেয়া হয়। ট্রায়াল কেন করা যাবে না, সে বিষয়ে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সিনোভ্যাক এই ট্রায়ালের জন্য কো-ফাণ্ড গঠনের জন্য ৩০ কোটির মতো টাকা চেয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী এটাও বলেন, বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে ট্রায়ালের জন্য টাকা দেয়ার কোনো বিধান সরকারের নেই। বাংলাদেশের সব মিডিয়া এটা প্রচার করতে থাকে যে সিনোভ্যাক ভ্যাকসিন ট্র্যায়াল করতে টাকা চাওয়ায় তাদের ট্রায়ালের প্রস্তাব বাংলাদেশ নাকচ করেছে। এই খবর ভারতীয় মিডিয়া লুফে নেয় আর তা প্রচার করতে থাকে।

কিন্তু ঘটনা এতো সরল ছিল না। কিছুদিন পর থেকেই একে একে অন্তরালের ঘটনা উন্মোচিত হতে থাকে। প্রথমে ২০২০ সালের ১১ নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ মাধ্যম বেনার নিউজ বাংলাদেশে সিনোভ্যাকের ভ্যাকসিন ট্রায়াল না হওয়া বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে তারা উল্লেখ করে, সিনোভ্যাক ট্রায়ালের জন্য শুরুতে বাংলাদেশের কাছে নাকি কোনো টাকাই চায়নি।

এরপর গত ২৬ জানুয়ারি চীনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রভাবশালী পত্রিকা গ্লোবাল টাইমস আরও একটা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে দাবি করা হয়, গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশে সিনোভ্যাকের যে ভ্যাকসিন ট্রায়ালের আলাপ চলছিল, তা ভারতের হস্তক্ষেপে বন্ধ হয়ে যায় এবং এ বিষয়টা নিয়ে মিথ্যাচার শুরু করে হিন্দুস্তান টাইমস। হিন্দুস্থান টাইমস এই প্রচারণা চালায় যে সিনোভ্যাক ভ্যাকসিন ট্রায়ালের জন্য বাংলাদেশের কাছে টাকা চেয়েছে জন্যই নাকি বাংলাদেশে সিনোভ্যাকের ভ্যাকসিনের ট্রায়াল হচ্ছেনা।

অথচ বাস্তব হচ্ছে, অনুমোদন দিতে দীর্ঘসূত্রিতা না করে সেই সময়ে ট্রায়াল শুরু করলে বাংলাদেশকে কোনো ধরনের খরচই বহন করতে হতো না। কিন্তু এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করে টিকার ট্রায়ালের সময় পিছিয়ে অক্টোবর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়। বাংলাদেশের সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হওয়ায় সিনোভ্যাক অন্য জায়গায় তাদের ট্রায়াল শুরু করে। অবশ্য সিনোভ্যাক পরবর্তীতে যখন কো-ফাণ্ডিং এর কথা বলেছে তখন কো-ফাণ্ডিং এর জন্য খরচ কিছুটা পুষিয়ে দিতে বাংলাদেশকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও আওয়ামী লীগ সরকার তাও অগ্রাহ্য করে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কেন সিনোভ্যাকের লোভনীয় প্রস্তাব নাকচ করা হয়েছিল? এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন গত ২৫ এপ্রিল নিউএজকে বলেন, “ব্যবসায়িক স্বার্থ রক্ষায় বেক্সিমকোর চাপের কারণেই সরকার টিকার বিকল্প উৎসে যেতে পারেনি। অথচ রাশিয়া ও চীন উভয়ই বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করতে চেয়েছিল।”

সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর এ বক্তব্যে স্পষ্ট হয়, কীভাবে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার পদে থেকেও নিজের ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক স্বার্থে বেক্সিমকো গ্রূপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান বাংলাদেশের জনগণের জন্য টিকা সরবরাহ ব্যবস্থাকে জিম্মি করে ফেলেন। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হয়ে যান ভারতের অসৎ, অক্ষম ও লোকদেখানো টিকা কূটনীতির ঠিকাদার। ভারতের সঙ্গে যোগসাজশে চীন, রাশিয়ার মতো অপরাপর উৎস থেকে টিকা পাওয়ার সম্ভবনাকে বাধাগ্রস্ত করে দেশের মানুষকে চরম সংকটে ফেলে দেন তিনি। এরই মধ্যে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট তিন কোটি টিকার মধ্যে মাত্র ৭০ লাখ টিকা সরবরাহ করেই সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। এর ফলে যাদের প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে ১২ লক্ষ মানুষের দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার মতো ভ্যাকসিন এখন বাংলাদেশের হাতে নেই। অথচ দ্বিতীয় ডোজের ভ্যাকসিন দেয়া না গেলে এই ১২ লক্ষ লোকের প্রথম ডোজের ভ্যাকসিন কোনো কাজেই আসবে না।

অন্যদিকে যারা সিনোভ্যাকের ট্রায়াল করেছিল, তাদের মধ্যে তুরস্ক সিনোভ্যাক উৎপাদিত ভ্যাকসিন দিয়ে গত ১৮ জানুয়ারি থেকে কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে গণ টিকাদান কার্যক্রম শুরু করেছে।

ভারতীয় সেরামের ভ্যাকসিন দেশে না আসার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বাংলাদেশে সেরামের পরিবেশক বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান বলেন, করোনা ভাইরাসের দেড় কোটি ডোজ টিকার জন্য ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটকে আগাম টাকা দেওয়া হয়েছে। টাকা নেয়ার পর টিকা আটকানোর কোনো অধিকার সেরামের নেই।

কিন্তু মনে হচ্ছে, কড়া সত্যের সবটা ঝাঁঝ তিনি ভারতকে দিতে চাননি। নাজমুল হাসান আংশিক সত্য বলেছেন। সেরাম ইনস্টিটিউটকে বাংলাদেশ শুধু ভ্যাকসিন কেনার জন্যই টাকা দেয়নি, বরং বাংলাদেশ সেরাম ইনস্টিটিউটের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে প্রথমে সেরাম ইনস্টিটিউটে বিনিয়োগ করেছে। কারণ ওই শর্তেই সেরাম আমাদের টিকা দিতে রাজি হয়েছিল।

শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, “বেক্সিমকো থেকে আমরা যোগাযোগ করে বললাম, আমরা বাংলাদেশে তোমাদের পরিবেশক হতে চাই। তারা প্রথমে অনাগ্রহী ছিল। তবে পরে জানাল, আমাদেরকে তখনই কিছু বিনিয়োগ করতে হবে। কারণ, তাদের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে হবে। তখন অগ্রিম টাকা বিনিয়োগ করে আমরা পরিবেশক হলাম।” এর অর্থই হচ্ছে, সেরামের বিনিয়োগ সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বেক্সিমকো আগাম বিনিয়োগ করেছে। সেই বর্ধিত উৎপাদন ক্ষমতা ব্যবহার করেই সেরাম বাংলাদেশের জন্য ভ্যাকসিন উৎপাদন করেছে। বেক্সিমকো শুধু বাংলাদেশেরই পরিবেশক, তাই এই বিনিয়োগ বাংলাদেশেরই। আর এই আগাম বিনিয়োগের জন্য বেক্সিমকো তার উচ্চ কমিশনও পাচ্ছে।

বেক্সিমকো প্রত্যেক ডোজ ভ্যাকসিনের সরবরাহের জন্য এক ডলার করে নিচ্ছে বলে দাবী করেছে। সালমান এফ রহমান নিজেই বলেছেন পরিবেশকের কমিশন ১০-২০% হয়। বেক্সিমকো প্রত্যেক ডোজে এক ডলার করে কমিশন পাচ্ছে যা সম্ভাব্য দামেরও ৫% বেশী অর্থাৎ ২৫%। যদি চুক্তি অনুসারে বাংলাদেশে ভ্যাকসিনের দাম ২.৭২ ডলারও হয়, তাহলে ২০% হারে বেক্সিমকোর প্রাপ্ত কমিশন হয় ৫৪ সেন্ট, কোন ভাবেই এক ডলার নয়। যদিও ভ্যাকসিনের ক্রয়মুল্যের শতকরা হারে কমিশন নির্ধারণ করা হয়নি। কমিশন নির্ধারণ করা হয়েছে থোক হিসেবে। অর্থাৎ চুক্তি অনুসারে ভ্যাকসিনের দাম কমলেও বেক্সিমকোর কমিশন এক ডলারই থাকবে। শতকরা হারে কমিশন তখন সালমান এফ রহমানের নিজের বেধে দেয়া কমিশনের স্বাভাবিক হারের চাইতে বহুগুণে বেড়ে যাবে।

অবশ্য সালমান এফ রহমান এই অতিরিক্ত চার্জের কারণ জানিয়েছেন, “সরকার আমাদের একটি অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়। সেরাম থেকে আসা টিকা গ্রহণ, ওয়্যার হাউসে নেয়া ও সংরক্ষণ করা, সেখান থেকে সরকারের ড্রাগ টেস্টিং ল্যাব থেকে প্রতিটি ব্যাচের ছাড়পত্র নেয়া, এরপর ৬৪টি জেলায় পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব বেক্সিমকোর।”

কোভিড ভ্যাক্সিনের পরিবহনের খরচ ও ভ্যাক্সিন সার্টিফিকেট নেয়ার খরচ কতো সেটা কিছুদিন আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রকাশ করেছে আর তা হচ্ছে প্রত্যেক ডোজের জন্য পাচ সেন্ট সর্বোচ্চ।

এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে, উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে বাংলাদেশ যে টাকাটা সেরামকে দিলো, সেই বর্ধিত উৎপাদন ক্ষমতায় উৎপাদিত ভ্যাকসিনে ভারতের নাগরিকদের কোনো অধিকার নেই। কারণ সেটাতো আমাদের টাকায় উৎপাদিত। এই ভ্যাকসিন ভারত সরকার তার নিজস্ব চাহিদার কথা বলে আটকাতে পারে না। অথচ ভারত এখন তাই করছে।

তাহলে বাংলাদেশ কেন সেরামের ২.৭২ ডলারের ভ্যাকসিন ভারতের কাছ থেকে চুড়ান্ত দাম নির্ধারণ না করেই চার ডলারে কিনতে আর বেক্সিমকোকে অস্বাভাবিক হারে কমিশন দিতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে গেল? বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের প্রাপ্য ৩৬ কোটি ডোজের জন্য দেয়া অতিরিক্ত ৪০ কোটি ডলার কার পকেটে ঢুকাতে ব্যস্ত হয়ে উঠল শেখ হাসিনার ঘনিষ্ট মহল? বাড়তি টাকা দিয়ে টিকা কেনার পরও কার লোভ আজকে বাংলাদেশকে টিকা না পাওয়ার মতো ভয়াবহ সমস্যায় ফেলল?

সালমান এফ রহমানের ভাষায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শিতা আর সাহসের ফলেই সেরামের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। যেখানে বাড়তি টাকা দিয়েও টিকা পাচ্ছে না বাংলাদেশ, সেখানে কীভাবে প্রমাণিত হলো শেখ হাসিনার দূরদর্শিতা আর সাহস? তবে কি শেখ হাসিনা তার উপদেষ্টার ব্যবসায়িক উচ্চাভিলাষের আগুনে সাহসের সঙ্গে হাওয়া দিতে পেরেছেন বলেই সালমান এফ রহমানের এ উচ্ছসিত প্রশংসা?●

পিনাকী ভট্টাচার্য, লেখক ও গবেষক।