সেনাপ্রধানের সুপারিশে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পেয়েছেন ফ্রিডম পার্টির সাথে সম্পৃক্ত সাবেক সেনাকর্মকর্তা
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি এমন এক সাবেক সামরিক কর্মকর্তার শাস্তি মওকুফে সম্মতি দিয়েছেন যিনি ছিলেন তার পিতার হত্যাকারীদের ব্যবসায়িক সহযোগী। নেত্র নিউজের হাতে আসা বিভিন্ন নথিপত্র থেকে দেখা যায় যে, সাবেক ওই সেনা কর্মকর্তা রাষ্ট্রপতির মার্জনা পেয়েছিলেন তার বন্ধু, ব্যাচম্যাট ও বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের সুপারিশের প্রেক্ষিতে।
ইমরান আহমেদ চৌধুরী নামে ওই সেনা কর্মকর্তা ১৯৮৬ সালে সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত হয়েছিলেন। তার রেজিমেন্টে ছয়টি হ্যান্ড গ্রেনেড হারানোর ঘটনার কিছুদিন পরে তাকে ওই সাজা দেওয়া হয়। কিন্তু দুই বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৯ সালের জুলাইয়ে, সেনাবাহিনী থেকে তার বহিষ্কারাদেশ রাষ্ট্রপতির একটি আদেশের মাধ্যমে প্রত্যাহার করা হয়। রাষ্ট্রপতির আদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও স্বাক্ষর করেছিলেন। সেনাপ্রধানের সুপারিশের প্রেক্ষিতে ইমরান চৌধুরীকে মার্জনা দেওয়ার বিষয়টি আদেশেই উল্লেখ ছিল। বাংলাদেশের সংবিধানের ৪৯ নম্বর অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমা প্রদানের এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রেও এই অনুচ্ছেদে বর্ণিত ক্ষমতা প্রয়োগ করেন রাষ্ট্রপতি।
১৯৭৫ সালের আগস্টে নিজের পিতা শেখ মুজিবুর রহমান ও পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যকে যারা হত্যা করেছেন, তাদের সঙ্গে ওই সাবেক কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা থাকার বিষয়ে শেখ হাসিনা অবহিত ছিলেন কিনা তা স্পষ্ট নয়। তবে ইমরান চৌধুরী নিজেই নেত্র নিউজকে নিশ্চিত করেছেন যে তিনি ফ্রিডম পার্টির (শেখ মুজিবের হত্যাকারীদের প্রতিষ্ঠিত একটি দল) নেতাদের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেছেন।
নেত্র নিউজকে পাঠানো এক ইমেইলে তিনি বলেন, “একজন প্রকৃত ব্যবসায়ী হিসেবে আমি ফ্রিডম পার্টি নেতাদের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছি।” তিনি বলেন, সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত হওয়ার এক বছর পর অর্থাৎ ১৯৮৭ সাল থেকে শুরু করে তিন বছর তিনি তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান ছিলেন। তবে তিনি এও দাবি করেছেন যে, তিনি কখনই ফ্রিডম পার্টির কোনো পদ-পদবীতে ছিলেন না।
নেত্র নিউজকে দেওয়া পৃথক এক বিবৃতিতে ইমরান চৌধুরীর আইনজীবীরা ফ্রিডম পার্টির সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার বিষয়ে একটি বিশেষ তথ্য প্রকাশ করেন। তবে চৌধুরীর নিজের ও তার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা বিবেচনায় ওই তথ্য বিস্তারিত আঙ্গিকে প্রকাশে সম্মত হননি তার আইনজীবীরা।
আগেই যেমনটা উল্লেখ করা হয়েছে, এই মার্জনা পেতে ইমরান চৌধুরী সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজের সহায়তা নিয়েছেন। আজিজ সেনাবাহিনীতে তার ব্যাচমেট ছিলেন। ১৯৮১ সালে তারা উভয়েই বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে (বিএমএ) ৮ম লং কোর্সে ভর্তি হন। দুই বছর পর আরও প্রায় ৫০ জনের সঙ্গে তারাও কোর্স সম্পন্ন করেন। জেনারেল আজিজ ওই ব্যাচের ভাইবার গ্রুপে যেসব বার্তা পোস্ট করেছেন, তা থেকে দেখা যায় যে চৌধুরীকে সহায়তা করতে তিনি অনেক সময় ও শ্রম ব্যয় করেছেন।
ক্ষমা মঞ্জুর হওয়ার সাথে সাথে এক বার্তায় তিনি বলেন, “আজ আমি এত খুশি যে প্রকাশ করতে পারছি না।” ভাইবারে আজিজ আরও বলেন, “আমাদের আরেক কোর্সমেট লেফটেন্যান্ট ইমরান আজ তার সম্মান, তার র্যাংক ফিরে পেয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পর মহামান্য রাষ্ট্রপতি নথিতে সই করেছেন।”
আরেক বার্তায় তিনি বলেন, “আমার প্রিয় বন্ধু লেফটেন্যান্ট ইমরান (অবঃ), তুমি আমাকেও অশ্রুসজল করে দিয়েছো। তুমি কল্পনাও করতে পারবে না, তোমার অডিও বার্তায় আমি কতটা আবেগতাড়িত হয়েছি।”
ভাইবার বার্তা থেকে আরও দেখা যায় যে জেনারেল আজিজ তার আরেক বরখাস্তকৃত ব্যাচম্যাট সেনা কর্মকর্তা হাবিবুস সাকেরিনের জন্যও সহায়তার ব্যবস্থা করেছেন। ব্যাচম্যাটদের উদ্দেশ্যে তিনি নিজেই লিখেন, “কে জানে মহান আল্লাহ হয়তো আমাকে সেনাপ্রধান বানিয়েছেন আমার প্রিয় কোর্সম্যাট লেফটেন্যান্ট ইমরান ও মেজর সাকেরিনকে সহায়তা করার জন্য।” তবে হাবিবুস সাকেরিনকে দেওয়া সহায়তার অর্থও কি রাষ্ট্রপতির ক্ষমার ব্যবস্থা করে দেওয়া কিনা, তা স্পষ্ট ছিল না।
রাষ্ট্রপতির ক্ষমার আদেশে উল্লেখ করা হয় যে, ইমরান আহমেদ চৌধুরীর সামাজিক অবস্থান ও স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদানের কথা বিবেচনা করে তার জন্য সুপারিশ করেছেন সেনাপ্রধান। তবে ১৯৭১ সালে চৌধুরীর বয়স ছিল মাত্র ১১ বছর। তিনি যদিও দাবি করেছেন, আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা দিতে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে তিনি জয় বাংলা ওয়ার্ডে কাজ করেছেন। এছাড়া ভারতের ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশি শরণার্থী শিবিরে তিনি বিনামুল্যে সংবাদপত্র বিলির কাজ করেছেন। তিনি আরও বলেছেন যে, তার এক বড় ভাই ১৯৭১ সালের যুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন।
ইমরান চৌধুরী ক্ষমা পেয়েছেন জেনারেল আজিজ আহমেদের ছোট ভাই তোফায়েল আহমেদ জোসেফ (একাধিক খুনের দায়ে দণ্ডিত এক সাবেক গ্যাংস্টার) রাষ্ট্রপতির ক্ষমা লাভের এক বছর পর। জেনারেল আজিজের আরও দুই ভাই (জোসেফ সহ), হারিস আহমেদ ও আনিস আহমেদ, সরকারের কাছ থেকে আলাদা একটি সাজা স্থগিতাদেশও লাভ করেন। সেনাপ্রধান ও তার ভাইদের নিয়ে সম্প্রতি আল জাজিরার অনুসন্ধানী দল একটি তথ্যচিত্র নির্মান করে।
তবে এসব ঘটনা রাষ্ট্রপতির ক্ষমা বা সরকারের দণ্ড স্থগিতাদেশের প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। বিশেষ করে, নিজের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের জন্য কী প্রক্রিয়ায় সেনাপ্রধান এসব আদায় করেছেন, তা নিয়েও প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
তবে চৌধুরী দাবি করেছেন, তার আবেদন একটি সুষ্ঠু প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পরিচালিত হয়েছে, যেখানে সেনাপ্রধানের সাথে তার ঐতিহাসিক সম্পর্ক কোনো প্রভাব ফেলেনি। নেত্র নিউজ এসব ব্যাপারে সেনাবাহিনীর জনসংযোগ পরিদপ্তরের মাধ্যমে জেনারেল আজিজের কাছে প্রশ্ন পাঠালেও কোনো উত্তর পায়নি।
তবে নেত্র নিউজ এই বিষয়ে অনুসন্ধান শুরুর পর, ইমরান চৌধুরী জানিয়েছেন যে তিনি তার ক্ষমার আবেদন প্রত্যাহার করার চেষ্টা করছেন। তার ভাষ্য, “আমি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারকে আমার প্রমার্জনা বাতিলে স্বেচ্ছায় অনুরোধ করেছি।” তবে এক্ষেত্রে তিনি কোনো কারণ ব্যাখ্যা করেননি।
ইমরান চৌধুরী বর্তমানে যুক্তরাজ্যে বসবাস করেন। তিনি সম্প্রতি স্থানীয় কম্যুনিটিতে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে “ব্রিটিশ এম্পায়ার মেডেল” নামে ব্রিটেনের সরকারি পদকে ভূষিত হয়েছেন।
চৌধুরীর সেনাবাহিনী ক্যারিয়ার
ইমরান আহমেদ চৌধুরী ১৯৮৬ সালের অক্টোবরে সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত হওয়ার সময় লেফটেন্যান্ট পদে ছিলেন। অর্থাৎ সেনাবাহিনীর চাকরিতে যোগদানের তিন বছরের মাথায় তিনি ছিটকে পড়েন। নিজের ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটে বরখাস্ত হওয়ার কথা উল্লেখ না করে তিনি বলেছেন তিনি সেনাবাহিনী “ছেড়ে” এসেছেন।
তার আইনজীবীদের মাধ্যমে পাঠানো চিঠিতে তিনি নেত্র নিউজকে বলেন, তার রেজিমেন্টে ছয়টি হ্যান্ডগ্রেনেড হারানোর জন্য তাকে দায়ী করা হয়। তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন ওই সময়ে তিনি ছুটিতে ছিলেন। তিনি দোষ স্বীকারও করেননি। চিঠিতে বলা হয়, “তারপরও অভিযোগ উঠার তিন মাস পর, তাকে এক নির্বাহী আদেশে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কার করা হয়। এক্ষেত্রে কোনো কারণও প্রদান করা হয়নি। শুধু এটি উল্লেখ করা হয় যে তিনি এক জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তার পরিবারের বিষয়ে গুজব ছড়াচ্ছিলেন, যা ছিল অস্পষ্ট একটি অভিযোগ।”
ফ্রিডম পার্টির সাথে সম্পৃক্ততা
১৯৮৭ সালের আগস্টে সাবেক সেনা কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক রহমান, খন্দকার আব্দুর রশিদ ও বজলুল হুদা ফ্রিডম পার্টি নামে একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন। এদের তিনজনই পরবর্তীতে শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যকে হত্যার করার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। ২০১০ সালে ফারুক ও হুদার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। রশিদ এখনও পলাতক।
১৯৮৭ সালের ৩ আগস্ট ঢাকার শেরাটনে এক সভায় দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। পত্রপত্রিকার প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, ওই সভায় ফারুক ও রশিদ বলেন, “আওয়ামী লীগ ও তাদের সভানেত্রী হলো ‘ইন্দো-সোভিয়েত’ ব্লকের মিত্র, বিশেষ করে ভারতের এজেন্ট। সে বাংলাদেশের শত্রু।”
ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন এমন একজন রাজনৈতিক কর্মী বলেন, তিনি দেখেছেন যে ইমরান চৌধুরী সেদিন সৈয়দ ফারুক রহমানের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। তিনি বলেন, “আমার কাছে একজন এসে দাবি করলেন যে তিনি কর্নেল ফারুকের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা। নিজেকে তিনি বললেন লেফটেন্যান্ট ইমরান।” ভিন্ন আরেকটি রাজনৈতিক দলের ওই কর্মী নেত্র নিউজকে আরও বলেন, “তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন আমার সাথে অস্ত্র আছে কিনা। আমি হ্যাঁ বললাম। তখন তিনি আমাকে বললেন যে বুলেট নেওয়া যাবে কিনা। আমি তাকে আমাকে অনুসরণ করতে বললাম। এরপর টয়লেটে গিয়ে আমার অস্ত্র বের করে তাকে দিলাম। চা বিরতির সময় ইমরানকে দেখলাম কর্নেল ফারুকের কানে কী যেন বলছে। এরপর সে আমার কাছে এসে, আমাকে টয়লেটের কাছে নিয়ে আমার অস্ত্র ফিরিয়ে দিল।”
নেত্র নিউজ ইমরান চৌধুরীর এক বন্ধুর সাথেও যোগাযোগ করে, যিনি নিশ্চিত করেন যে ইমরান ফ্রিডম পার্টির নিরাপত্তা দলে সম্পৃক্ত ছিল। চৌধুরী তার বন্ধুকে বলেছিলেন, “আমি নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলাম। আমি তাদের বেতনভাতা বিতরণ করতাম।”
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে ওই রাজনৈতিক নেতা ও চৌধুরীর বন্ধু আমাদের সাথে কথা বলতে সম্মত হন। এ বিষয়ে চৌধুরীকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, “আমার আর কিছু বিস্তারিত বলার মতো নেই।” পৃথক এক ইমেইলে তিনি বলেন, আমি বিষয়টি লিখিতভাবে জানাতে চাই যে আমি ফ্রিডম পার্টির সাথে কখনই জড়িত ছিলাম না।
তবে তিনি স্বীকার করেন যে, ফ্রিডম পার্টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে তিনি দলটির নেতাদের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনায় জড়িত ছিলেন। তার ভাষ্য, “আমি মোট সাতটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেছি, যেখানে ২৫০ জন লোক জড়িত ছিল। ৮০-৯০-এর দশকে ওই কোম্পানিগুলোর আন্তর্জাতিক লাভের অঙ্ক লাখ লাখ ডলারে ঠেকেছিল। এর মধ্যে ১৯৮৯ সালে চীন থেকে বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর জন্য ৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার মুল্যের সমরাস্ত্র সরবরাহও অন্তর্ভুক্ত ছিল।” তিনি বলেন, “আমি ১৯৮৭ সালের আগস্ট থেকে ১৯৯০ সালের আগস্ট পর্যন্ত এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করি।”
তিনি ফ্রিডম পার্টির নেতাদের হয়ে যেসব কোম্পানি পরিচালনা করতেন তার মধ্যে একটি ছিল যুক্তরাজ্যে নিবন্ধিত কোম্পানি কনসোসিয়েটস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড ও বাংলাদেশে নিবন্ধিত কোম্পানি ওয়াহাথ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড। যুক্তরাজ্যের নিবন্ধন রেকর্ড থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে কনসোসিয়েটস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের পরিচালকরা ছিলেন খন্দকার আবদুর রশিদ (ফ্রিডম পার্টির অন্যতম নেতা) ও তার স্ত্রী জোবাইদা রশিদ। ১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিটি ১৯৯৯ সালে অবসায়িত হয়। ১৯৯৪ সালে এই কোম্পানির ৪৮ লাখ পাউন্ডের টার্নওভার ছিল।
নিজের ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটে ইমরান চৌধুরী এসব তথ্য উল্লেখ করেননি।
ফ্রিডম পার্টি ও শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীদের সঙ্গে সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও ইমরান চৌধুরীর ক্ষমাপ্রাপ্তির ঘটনা বেশ বিস্ময়কর। বাংলাদেশের ক্ষমতাধর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায়শই তার পিতা ও পরিবারের সদস্যদের খুন হওয়ার প্রসঙ্গ তোলেন। ১৯৯৬ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর তার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য ছিল তার পিতার হত্যায় অভিযুক্তদের বিচারের ব্যবস্থা করা। তিনি সেই লক্ষ্যে সফলও হয়েছিলেন। তার নেতৃত্বাধীন প্রশাসন এখনও পলাতক আসামীদের খুঁজে বের করতে ব্যপকভাবে সচেষ্ট। হাসিনা যদি ইমরান চৌধুরীর এই বিশেষ সংশ্লিষ্টতার কথা জেনেশুনেও তাকে ক্ষমা করতে সম্মত হয়ে থাকেন, তাহলে তা হবে জেনারেল আজিজ আহমেদের সুপারিশ কতটা গুরুত্ব বহন করে, তার বহিঃপ্রকাশ।
যুক্তরাজ্যে গমন
১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ এক জনবিক্ষোভের পর ক্ষমতা হারান। ওই সময়ই ইমরান আহমেদ চৌধুরী বাংলাদেশ ছাড়েন। তার নিজের বক্তব্য অনুযায়ীই ওই সময় তিনি যুক্তরাজ্যে আশ্রয় গ্রহণ করেন। তবে তিনি কেন আশ্রয় চেয়েছিলেন, তা স্পষ্ট নয়।
তার ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, তিনি নর্থ্যাম্পটনে যান ও ২০০৪ সালে প্রথম একটি রেস্তোরাঁ চালু করেন। এরপর তিনি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেন্টার ফর পলিসি প্রমোশন অ্যান্ড প্রিভেনশন প্রতিষ্ঠা করেন। যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশী প্রবাসী কম্যুনিটিতে তিনি বেশ সুপরিচিত।
সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কৃত হওয়ায় তিনি নিজেকে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা বলতে পারেন না। তিনি বলেন, তিনি এর আগে একাধিকবার রাষ্ট্রপতির ক্ষমা চেয়ে আবেদন করেও ব্যর্থ হয়েছেন। তার বক্তব্য, তার সাথে যা হয়েছে তা ছিল অবিচার, যার কারণে তিনি কয়েক দশক ধরে মনোকষ্টে ছিলেন।
তবে তার বন্ধু ও ব্যাচমেট জেনারেল আজিজ সেনাপ্রধান হওয়ার পর তার ভাগ্য পরিবর্তন হয়। সর্বশেষ দফায় আবেদন করার পর তিনি আজিজকে নিয়ে অত্যন্ত প্রশংসামূলক একটি লেখাও প্রকাশ করেন। ২০১৮ সালে তিনি নিজের ওই ব্লগপোস্টে লিখেন, “সাম্প্রতিক কয়েক মাসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে এক বিরাট নিরব পরিবর্তন ঘটে গেছে, যা কেউ লক্ষ্য বা বিশ্লেষণ করেনি। আজ ৪৬ বছর ও ১৪ জন সেনাপ্রধান অভিষিক্ত হওয়ার পর, ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে এক নতুন সূর্যের অভুদ্যয় ঘটেছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ মিলিটারি অ্যাকাডেমি লং কমিশনের একজন দেশীয় অনন্য কর্মকর্তাকে বহুল আকাঙ্খিত সেনাপ্রধানের পদে নিযুক্ত করা হয়েছে।”●