সিআরআই: অপপ্রচার কেন্দ্র
নেত্র নিউজের মতো সরকারের সমালোচনাকারী সবার বিরুদ্ধে যে আক্রমণ চালান হয়, এর মূলে রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর পরিবার চালিত প্রতিষ্ঠান।
প্রথমে দুর্নীতি, তারপর ধামাচাপা।
সম্প্রতি নেত্র নিউজ একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে গোপন আঁতাতের মাধ্যমে দুর্নীতির অভিযোগ উন্মোচিত হয়। এই মন্ত্রণালয়ের মূল দায়িত্বে অর্থাৎ মন্ত্রী হিসেবে আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বয়ং।
নেত্র নিউজের প্রকশিত অনুসন্ধানে দেখা যায় যে, নসরুল হামিদ বিপুর পরিবারের সদস্য ও তার পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা একটি জাপানি কোম্পানি ও একটি ডাচ-সুইস কোম্পানির সঙ্গে কনসোর্টিয়াম বা ব্যবসায়িক জোট গঠন করেছেন। এই কনসোর্টিয়াম খোদ জ্বালানী মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করেছে। যে সমঝোতার মধ্য দিয়ে তারা শত শত মিলিয়ন ডলারের (হাজার হাজার কোটি টাকা) পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ চুক্তি করতে পারবে।
অথচ এ উপায়ে ঠিকাদারি জোগাড় করলে তা বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব আইনের (২০১৫) ২৪ ও ২৫ ধারার লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হওয়ার কথা। ধারা দুটিতে বলা আছে, প্রস্তাব/দরপত্র যাচাইয়ের দায়িত্বে থাকা কোনো ব্যক্তির সঙ্গে যদি প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ জড়িত থাকে, তবে ওই ব্যক্তি প্রস্তাব/দরপত্র যাচাই প্রক্রিয়া থেকে নিজেকে সরিয়ে নেবেন। তিনি তা না করলে এই সংশ্লিষ্টতা “চক্রান্তমূলক কার্য” (কলুসিভ প্র্যাকটিস) হিসেবে গণ্য হবে। সেই সঙ্গে তা দুর্নীতি বিরোধী আইনে বিচারযোগ্য হবে।
এরপরও নেত্র নিউজের প্রকাশিত প্রতিবেদনে উত্থাপিত অভিযোগ নিয়ে এখনো পর্যন্ত প্রতিমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রী — কোন জবাব দেবার প্রয়োজন বোধ করেননি।
তবে অভিযোগের জবাব না দিলেও প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। নেত্র নিউজ এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটিকে ভিত্তি করে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রকাশ করে। এটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই তা মিথ্যা কপিরাইট অভিযোগের মাধ্যমে নামিয়ে ফেলার চেষ্টা করা হয়। প্রায় নিঃসন্দেহে বলা যায়, সরকার/ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকেই এই চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু ইউটিউব কর্তৃপক্ষ এসব অভিযোগের অসারতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয় এবং সরকার/ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে চালানো অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও এর উপর ভিত্তি করে অনুসন্ধানী ভিডিওটি ইউটিউবে প্রকাশের পর পরই আওয়ামী লীগের সোশ্যাল মিডিয়া যোদ্ধারাও ফেসবুক ও টুইটারে নেত্র নিউজের বিরুদ্ধে কুৎসা প্রচারে ব্যস্ত হয়ে যায়। বোঝাই যায় যে অনলাইনে আওয়ামী লীগের অনুচর এবং “বট”রা যেসব তথ্য ছড়াচ্ছে, সেগুলো পরিকল্পিত উপায়ে একটি মূল কেন্দ্র থেকেই তৈরি হয়ে এসেছে। তাদের প্রচার করা বক্তব্যে প্রতিবেদনে তোলা অভিযোগের কোন জবাব নেই। যা আছে, তা কেবল অপবাদ, ক্রোধ, মিথ্যা তথ্য এবং মিথ্যা খবর। প্রকৃতপক্ষে, সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা কোম্পানি এবং প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে ঘনিষ্ট যোগাযোগ থাকার অভিযোগ এখন পর্যন্ত কেউ অস্বীকার করেনি।
তাহলে নেত্র নিউজের বিরুদ্ধে এই অপপ্রচার ও অপবাদের উৎস কী?
নেত্র নিউজের সম্পাদকদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা নিয়মিত হলেও, এবারের আক্রমণ থেকে কিছু নতুন দিক উন্মোচিত হয়েছে। এবারের আক্রমণ শুরু নেত্র নিউজের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর নয়। বরং তার কয়েক সপ্তাহ আগে। আর এতে জড়িত রয়েছেন সেন্টার ফর রিসার্চ এ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) একজন সিনিয়র কর্মকর্তা।
এই সিআরআই নামক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং ভাইস চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। এছাড়া, হাসিনার ভাগ্নি আজমিনা সিদ্দিক এবং ভাগ্নে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি — যারা কিনা ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের ভাই ও বোন — এই প্রতিষ্ঠানের আরও দুজন ট্রাস্টি। এই চারজন হলেন বাংলাদেশ সরকারের ক্ষমতাসীন পরিবারের চার জ্যেষ্ঠ সদস্য। কাজেই একথা নির্বিঘ্নে বলা যায়, সিআরআই কোন সাধারণ থিঙ্কট্যাঙ্ক না, বরং ক্ষমতাসীন পরিবারের থিঙ্কট্যাঙ্ক। লক্ষণীয়, এএলবিডি ওয়েব টিম পরিচালনা করে সিআরআই। এই এএলবিডি হলো আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের সংক্ষেপ।
এছাড়া সিআরআইয়ের আরেকজন ট্রাস্টি রয়েছেন। তিনি আর কেউ নন: স্বয়ং বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, যাকে নিয়ে নেত্র নিউজের সাম্প্রতিক দুর্নীতি সংক্রান্ত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন। বিপু শুধু একজন ট্রাস্টিই নন। বরং তিনি সিআরআইয়ের একজন বড় অর্থযোগানদাতা বলেও পরিচিত। এটিই নিঃসন্দেহে তার ট্রাস্টি হবার পেছনে অন্যতম কারণ।
সাম্প্রতিক সময়ে নেত্র নিউজকে আক্রমণের ধরন:
নেত্র নিউজের প্রতিবেদনটি প্রকাশের প্রায় এক মাস আগে, গত ১০ জুলাই নেত্র নিউজের পক্ষ থেকে প্রথম প্রতিমন্ত্রী বিপুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। প্রতিবেদনে তার বিরুদ্ধে উঠে আসা অভিযোগের বিষয়ে তার বক্তব্য জানতে চাওয়াই ছিল এই যোগাযোগের উদ্দেশ্য।
নেত্র নিউজ বিপুর সঙ্গে যোগাযোগের কিছু পরেই — একই দিন — সিআরআইয়ের কর্মকর্তা তন্ময় আহমেদ নেত্র নিউজের বিরুদ্ধে প্রচারণা আরম্ভ করেন। তিনি নেত্র নিউজ এবং এর সম্পাদকদের বিরুদ্ধে নিজের ফেসবুক পেজে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য সম্বলিত লেখা প্রকাশ করেন। তন্ময় এএলবিডি ওয়েব টিমের কো-অর্ডিনেটর (পরিচালক)। তিনি ফেসবুকে নিজের পরিচয় দিয়ে লিখেছেন, তিনি একজন “রাজনীতিবিদ”, “রাজনীতি উৎসাহী’’ ও “বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মী”। গত ১০ জুলাইয়ে প্রকাশিত তার পোস্টে যেসব দাবী করা হয়, তার মধ্যে রয়েছে:
— নেত্র নিউজ ও এর সম্পাদকেরা “অনলাইনে বাংলাদেশ বিরোধী অপপ্রচার চালাতে কোটি কোটি ডলার খরচ করছে” এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে “ষড়যন্ত্র” করছে;
— নেত্র নিউজ একটি “প্রপাগান্ডা মেশিন”। “জামায়াত”-এর সঙ্গে এর সম্পর্ক রয়েছে এবং এটি “যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার অর্থায়নে পরিচালিত”। “মার্কিন গোয়েন্দারা মূলত কোন দেশের সরকার উৎখাতে পটভূমি তৈরির জন্যই এ ধরনের অর্থায়ন করে থাকে”।
সম্পূর্ণ বানোয়াট এসব পোস্ট ফেসবুকে শত শত শেয়ার হয়। আর এসব পোস্ট তৈরি করে সিআরআই পরিচালিত আওয়ামী লীগ ওয়েব টিমের প্রধান।
এসব আক্রমণ নিঃসন্দেহে কাকতালীয় হতে পারে না। তন্ময়ের ফেসবুক পেইজ লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে দুই মাসেরও বেশি সময় তার ফেসবুক পাতায় নেত্র নিউজ বিষয়ক কোন পোস্ট ছিল না। কিন্তু গত ১০ জুলাই, ঠিক যেদিন তার প্রতিষ্ঠানের একজন ট্রাস্টিকে দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হয়, ঠিক সেদিনই সিআরআইয়ের এই কর্মকর্তা এবং আওয়ামী লীগ ওয়েব টিমের প্রধান নেত্র নিউজ নিয়ে মানহানিকর ও মিথ্যা বক্তব্য পোস্ট করতে শুরু করেন।
এ অবস্থায় এটা বলা অমূলক হবে না যে, বিপু যখন জানতে পেরেছেন নেত্র নিউজ তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করতে যাচ্ছে, তখনই তিনি তন্ময়কে নেত্র নিউজের বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা বিপুকে আমাদের এই ধারনার কথা জানিয়েছি। কিন্তু তিনি এখনো এর কোন জবাব দেননি।
এই পোস্ট ছিল নেত্র নিউজের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক অপপ্রচারের কেবল শুরু।
পরদিন তন্ময় আরেকটি মানহানিকর লেখা প্রকাশ করেন। সেখানে দাবি করা হয়, তাসনিম ও আমি (ডেভিড বার্গম্যান) “বিএনপি-জামায়াত ও পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই”-এর সঙ্গে জড়িত। আমার বিষয়ে বলা হয়, আমি “মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী খুনি ও ধর্ষকদের পক্ষে জনমত সৃষ্টি করতে সংবাদ পরিবেশন” করেছি। সেই সঙ্গে “আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে জামায়াত-বিএনপি জোটের লবিস্ট হিসেবে ম্যানেজ করে দেওয়ার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন” করেছি। এই পোস্টের অংশ হিসেবে তন্ময় নেত্র নিউজে প্রকাশিত শর্মিলা বোসের একটি নিবন্ধকেও যথেচ্ছ বিকৃত করেন ও মিথ্যা উদ্ধৃতি দেন।
আরেকটি পোস্টে গত ১২ জুলাই তন্ময় পোস্ট করেন, করোনা ভাইরাসে বাংলাদেশে “লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু” নাকি ছিল নেত্র নিউজের “কাম্য”। চারদিন পর আরেকটি মিথ্যা ও মানহানিকর পোস্টে তিনি দাবি করেন, আমি “২০১৩-১৪ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় যুদ্ধাপরাধীদের লবিস্ট হিসেবে কাজ” করেছি, এবং “এর জন্য প্রাথমিকভাবে ২০০ মিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি হয়েছিল…’’।
এরপর গত ১৯ জুলাই তিনি ফের একটি পোস্ট করেন। এখানে নেত্র নিউজের এডিটর-ইন-চিফ তাসনিম খলিলকে আক্রমণ করা হয়। এখানে তন্ময় দাবি করেন, “তাসনিম খলিল ও নেত্র (তথাকথিত) নিউজের কুশীলবেরা বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে বিভেদ ও সহিংসতা উস্কে দেয়ার চেষ্টা করছে।’’
একই দিনে আরেকটি পোস্টে তিনি লেখেন, নেত্র নিউজের একমাত্র লক্ষ্য হলো “অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করা”।
গত ২৪ জুলাই সিআরআইয়ের এই কর্মকর্তা তার ফেসবুকে একটি মানহানিকর মিথ্যা নিবন্ধ পুনঃপ্রকাশ করেন। “পুলিৎজার ফর লাইস এ্যান্ড ফো পা ফর খলিল-বার্গম্যান ডুয়ো” (মিথ্যার জন্য পুলিৎজার ও খলিল-বার্গম্যান যুগলের লজ্জা) নামক এই নিবন্ধে দাবি করা হয়, নেত্র নিউজের তহবিল দাতা ন্যাশনাল এনডওমেন্ট ফর ডেমোক্রেসি (এনইডি)-এর তহবিল বরাদ্দ হয় “বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরকারের পতন ঘটাতে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার বাজেট’’ থেকে।
বলা বাহুল্য, এই দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা। নেত্র নিউজের তহবিল দাতা এনইডি বাংলাদেশে আরও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অর্থ দিয়ে থাকে। এর মাঝে আছে ইউনিভার্সিটি অফ লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব), যার মালিক আওয়ামী লীগপন্থী আহমেদ পরিবার। এছাড়াও রয়েছে স্বনামখ্যাত রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ অফ বাংলাদেশ। এদেরকেও কোনভাবেই আওয়ামী লীগ বিরোধী বলা যাবে না।
এই পোস্টের পর কয়েক সপ্তাহ বিরতি চলে। তারপর চলতি মাসের ১১ আগস্ট, যখন প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হলো, তার ঠিক পরেরদিন ১২ আগস্ট তন্ময় নেত্র নিউজকে নিয়ে আবার পোস্ট করেন। পোস্টে নেত্র নিউজ সম্পর্কে বলা হয়: “দেশ বিরোধী এই অপশক্তির বিরুদ্ধে সজাগ থাকুন!!!”
এরপর ১৪ আগস্ট তন্ময় পোস্ট করেন বিশেষভাবে তাসনিম খলিলকে লক্ষ্য করে। সেখানে বলা হয়: “আসুন এক নজরে এদের গত কিছুদিনের দেশ ও জাতীয় স্বার্থ বিরোধী ষড়যন্ত্র সম্পর্কে জেনে নেই।“
এখানেই শেষ নয়। ১৭ আগস্ট তন্ময় আরেকটি সম্পূর্ণ বানোয়াট পোস্ট প্রকাশ করেন। যেখানে তিনি বলেন, “তাসনিম খলিল মনেপ্রাণে জামায়াত মতাদর্শে বিশ্বাসী” এবং “সে দীর্ঘদিন যাবৎ বিএনপি-জামায়াতের ‘গুজব সেলের’ পেইড কর্মী হিসেবে কাজ করছে”।
বাস্তবতা হলো, গত ১০ জুলাই থেকে শুরু করে ১৯ আগস্ট পর্যন্ত — প্রায় ৪০ দিনে তন্ময় নিজের ফেসবুক পেইজে নেত্র নিউজ সম্পর্কে অন্তত ২০টি মানহানিকর ও বানোয়াট লেখা প্রকাশ করেছেন।
এই মানহানিকর প্রচারণা বিষয়ে আমরা তার কাছে জানতে চেয়েছি। কিন্তু আমাদের প্রশ্নের কোন জবাব তিনি দেননি। তার বিভিন্ন দাবির সত্যতা প্রতিষ্ঠার পক্ষে কোন প্রমাণও তিনি উপস্থাপন করেননি।
এসব বানোয়াট পোস্ট আওয়ামী লীগের সোশ্যাল মিডিয়া বলয়ে শেয়ার হতে থাকে। এ থেকে বোঝা যায়, তন্ময় আহমেদ, যিনি আওয়ামী লীগ ওয়েব টিম কো-অর্ডিনেটর এবং যিনি এমন একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন — সেন্টার ফর রিসার্চ এ্যান্ড ইনফরমেশন — যার ট্রাস্টি ক্ষমতাসীন পরিবারের চারজন সদস্য, এসবের অন্যতম কেন্দ্রীয় খেলোয়াড়। সিআরআই নিজেদের সম্পর্কে দাবি করে যে, তারা “বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ইস্যুতে জনগণের আলোচনার সুযোগ করে দেয়’’ এবং তারা “উচ্চ মানের গবেষণা কাজ” করে থাকে। এসব আসলে এই প্রতিষ্ঠানের লোক দেখানো চেহারা।
সারাবিশ্বে রাশিয়ান ও চাইনিজ সরকারের চালানো গুজব নিয়ে অনেক সমালোচনা হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রগুলো নিয়ে কোন কথা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে হয় না। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকার গুজব ছড়ানোর কাজে ভয়াবহভাবে জড়িত। তারা স্বাধীন সাংবাদিকতা ও সরকার বিরোধী যে কোন সমালোচকের বিরুদ্ধে অপবাদ রটাতে সবসময় তৎপর। এসব গুজব ও অপবাদ গোপনে ছড়িয়ে দেওয়া হয় — অখ্যাত কোন ওয়েবসাইটে এসব ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্তু গত ১০ জুলাই থেকে তন্ময়ের নিজ ফেসবুক পেইজে পোস্টগুলো দেয়ায় আওয়ামী লীগ সরকার ও গুজবের ক্যাম্পেইনের মধ্যে ঘনিষ্ট সম্পর্ক স্পষ্ট হয়ে গেল।●
ডেভিড বার্গম্যান, (@TheDavidBergman), ব্রিটেন-ভিত্তিক সাংবাদিক — নেত্র নিউজের ইংরেজি বিভাগের সম্পাদক।