আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচক যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী কনক সারোয়ারের বোন রিমান্ডে
“তারা আমার কণ্ঠরোধের জন্য আমার বোনকে গ্রেফতার করেছে” — বোনকে গ্রেফতারের পরও সরকারের সমালোচনা থামবে না বলে জানিয়েছেন সাংবাদিক কনক সারোয়ার।
আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচক যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাংবাদিক কনক সারোয়ার বলেছেন, বাংলাদেশ সরকার তার কণ্ঠরোধের উদ্দেশ্যেই তার বোনের উপর চড়াও হয়েছে।
কনক সারোয়ারের বোন নুসরাত শাহরিন রাকাকে গত বুধবার, ৬ অক্টোবর, পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠায় আদালত। ডিজিটাল নিরাপত্তা ও মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনের অধীনে দায়ের অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে তাকে।
কনক সারোয়ার নেত্র নিউজকে বলেন, “সরকার আমার মুখ বন্ধের চেষ্টা করছে। সেইসঙ্গে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য আমার যে আন্দোলন, তা রুখে দেবার চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা আমার কণ্ঠরোধের জন্য আমার বোনকে গ্রেফতার করেছে। খুবই জঘন্য কাজ করেছে তারা।”
কনক সারোয়ার অনলাইনে সরকারের সমালোচনার কারণে সরকারের চক্ষুশূল হয়ে উঠেছেন। তিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে একটি ইউটিউব চ্যানেল পরিচালনা করেন যেখানে আওয়ামী লীগের সমালোচনা সম্বলিত ভিডিও প্রকাশ করা হয়।
ইটিভির প্রাক্তন সাংবাদিক কনক সারোয়ার ২০১৬ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন। বিরোধী দলীয় নেতা তারেক রহমানের একটি বক্তব্য সম্প্রচারের জন্য ইটিভির মালিক ও সারোয়ারকে দোষারোপের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি দেশ ত্যাগ করেন। বর্তমানে বোনের গ্রেফতারের ঘটনায় অত্যন্ত বিচলিত কনক সারোয়ার। কিন্তু এরপরও নিজের কাজ চালিয়ে যাবার প্রত্যয় জানান তিনি, “আমি আমার দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য কাজ করায় বিশ্বাসী। একজন সাংবাদিক হিসেবে এটা আমার দায়িত্ব।”
র্যাব এ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব) “রাষ্ট্রবিরোধী অপ্রচারের অভিযোগে” গত মঙ্গলবার গভীর রাতে উত্তরার বাসা থেকে সারোয়ারের বোন রাকাকে আটক করে। সেখান থেকে তাকে র্যাব-১ প্রধান কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
ওইদিনই এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে র্যাব কনক সারোয়ারের বোনকে আটকের কথা জানায়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে র্যাব জানায়, “দেশ/বিদেশে অবস্থান করে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রমূলক অপপ্রচার কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত” “একটি চক্র” নিয়ে তদন্তের অংশ হিসেবে রাকাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
র্যাবের দাবি, রাকা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে যে তিনি “রাষ্ট্রবিরোধী অপপ্রচারকারী ও ষড়যন্ত্রকারী চক্রের একজন সক্রিয় সদস্য”। সেইসঙ্গে তিনি বলেছেন, তিনি কনক সারোয়ারের বোন। তিনি “সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ সম্পর্কে মিথ্যাচার, বিভ্রান্তিকর, মানহানীকর, তথ্য ছাড়াও বিভিন্ন উস্কানিমূলক তথ্য প্রচারের মাধ্যমে দেশের শান্তিশৃঙ্খলা নষ্টের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন।” র্যাব আরও দাবি করে, রাকার কাছে ক্রিস্টাল মেথ নামক মাদক পাওয়া গিয়েছে।
পরে ফার্স্ট ইনফরমেশন রিপোর্টে পুলিশ দাবি করে যে রাকা মন্ত্রী ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা বিষয়ে তার ফেসবুক পেইজে কটূক্তি করেছেন। তার এই আচরণ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে অপরাধ হিসেবে গণ্য।
এদিকে গ্রেফতারের চারদিন আগে রাকা স্থানীয় থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেন। সেখানে তিনি জানান, তার ছবি ও অন্যান্য যোগাযোগের তথ্য সহকারে গত ২৮ সেপ্টেম্বর কেউ তার নামে মিথ্যা ফেসবুক পেইজ খুলেছে। এই পেইজ থেকে সরকার বিরোধী বিভিন্ন মন্তব্য প্রকাশ করা হয়েছে। “উক্ত বিষয়টি আপনার থানায় সাধারণ ডায়েরিভুক্ত করা একান্ত প্রয়োজন” বলে তিনি জিডির ফর্মে লিখেছিলেন। জিডিতে তিনি সেই ফেইসবুক পেইজের ইউআরএল বা সম্পূর্ণ লিংকও দিয়েছিলেন।
সারোয়ার নেত্র নিউজকে জানান, গত মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ তার বোনকে থানা থেকে তাকে ফোন করতে দেয়, “ফোনে আমার বোন আমাকে জানায় যে র্যাব সোমবার গভীর রাতে ওর বাসায় আসে। তারা ঘরে ঢোকার সময় গালাগালি করে এবং বলে ‘আপনার ভাই সরকার বিরোধী, খারাপ লোক। আপনিও আপনার ভাইয়ের সঙ্গে জড়িত।’ র্যাব ওর বিরুদ্ধে মাদক মামলা দেবে বলে হুমকি দেয়। তারপর তারা ওকে আর ওর তিন বাচ্চাকে র্যাব হেডকোয়ার্টারে নিয়ে যায়।”
সারোয়ার জানান, গত দেড় বছর ধরে তার বোনকে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ফোন দিয়ে আসছিল। ফোন দিয়ে তারা সারোয়ারের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য জানতে চাইত, “তারা আমার রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার ইতিহাস জিজ্ঞাসা করে। আমার কী কী সম্পত্তি আছে জানতে চায়। সে [বোন] সবসময়ই বলেছে যে ‘আমি বিবাহিত, আমি সংসার নিয়ে ব্যস্ত। মাঝে মাঝে সরওয়ার আমাকে ফোন করে। কিন্তু আমাদের পরস্পরের মধ্যে কোন আর্থিক লেনদেন বা নির্ভরশীলতা নেই’।”
২০২০ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবঃ) চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দির সাক্ষাতকার নেবার পর কনক সারোয়ার বিশেষ করে নজরে আসেন। সাক্ষাৎকারে সারওয়ার্দি তৎকালীন সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের তীব্র সমালোচনা করেন। “বিকৃত রাষ্ট্রবিরোধী বিষয়” প্রচারের অভিযোগে ২০২০ এর ডিসেম্বরে কনক সারোয়ারের ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেল বাংলাদেশে বন্ধ করে দিতে সরকারকে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।●