নির্যাতনের বিষয়ে সরকারের জবাব চেয়ে জাতিসংঘ কমিটির আহ্বান
জাতিসংঘের নির্যাতন সংক্রান্ত কমিটির (সিএটি) লেখা অত্যন্ত সমালোচনামূলক প্রতিবেদনটির জবাব দিতে দুই বছর দেরি করেছে বাংলাদেশ সরকার।
বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর নির্যাতনের বিষয়ে কড়া ভাষায় লেখা একটি প্রতিবেদনের সুপারিশের জবাব দিতে দুই বছর বিলম্ব হওয়ায়, বাংলাদেশ সরকারকে তিরস্কার করেছে জাতিসংঘের নির্যাতন-বিরোধী কমিটি (সিএটি)। ২০১৯ সালে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনটিতে আইন-প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর নির্যাতনকে একটি “জরুরি উদ্বেগ” হিসেবে বর্ণনা করা হয়। পাশাপাশি, “আটক করে স্বীকার না করার চর্চা বন্ধ করা”; এবং, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) বিষয়ে তদন্তের জন্য একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছিল।
কমিটির ভাইস-চেয়ারম্যান বখতিয়ার তুজমুখামেদভ গত ৩ মার্চের একটি চিঠিতে লিখেছেন, “যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, এসব বিষয়ে আপনাদের সরকারের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে ব্যাখ্যা প্রদান করতে আপনাদের অনুরোধ করছি। পাশাপাশি, কমিটির চাহিত তথ্য কখন প্রদান করা হবে তার একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা অবহিত করার জন্য অনুরোধ করছি।”
২০১৯ সালের আগস্ট মাসে কমিটি বাংলাদেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর হাতে নির্যাতনের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে জাতিসংঘের এই নির্যাতন-বিরোধী কমিটি বাংলাদেশ সরকারকে কিছু পরামর্শ দেয়। পরামর্শগুলোর মধ্যে রয়েছে, সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে প্রকাশ্যে স্বীকার করা উচিত যে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের সংঘটিত নির্যাতন ও নিষ্ঠুর আচরণ প্রতিরোধ করাকে সরকার “’জরুরী উদ্বেগ”’ হিসেবে বিবেচনা করছে। এতে আরও বলা হয়, রাষ্ট্রকে দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করতে হবে যে কোনো অবস্থাতেই কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে নির্যাতন ও নিষ্ঠুর আচরণ মেনে নেয়া হবে না। এতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের উচিত “সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে দ্বার্থ্যহীনভাবে স্পষ্ট করা যে, কাউকে আটক করে তা স্বীকার না করার চর্চা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে অবিলম্বে অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।”
এছাড়া, সরকার-স্বীকৃত বন্দীশালার একটি তালিকা প্রকাশ করা এবং কাউকে গোপনে আটক না রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতেও সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
র্যাবের বিষয়ে কমিটি সরকারকে সুপারিশ করে যে, “র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের সদস্যরা প্রতিনিয়ত নির্যাতন, নির্বিচারে গ্রেপ্তার, আটক করে অস্বীকার করা, গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সংঘটন করেছে বলে যেসব অভিযোগ রয়েছে, তা তদন্তে একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করতে হবে। একই সাথে সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে যে, তদন্ত পরিচালনাকারী কর্মকর্তারা হয়রানি বা হুমকি থেকে যেন কার্যকর সুরক্ষা পায়।”
২০২২ সালের মার্চে জেনেভায় জাতিসংঘের কার্যালয়ে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মুস্তাফিজুর রহমানের কাছে লেখা ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে কমিটি আগস্ট ২০১৯-এ তাদের সর্বশেষ পর্যবেক্ষণ পাঠায় এবং বাংলাদেশকে “এক বছরের মধ্যে” ফলোআপের বিষয়ে আরও তথ্য প্রদান করার অনুরোধ করা হয়।
সিএটির চিঠিতে বলা হয়েছে, “দুই বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হয়ে গেলেও কমিটির প্রাপ্ত পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে চাওয়া তথ্য রাষ্ট্রীয় পক্ষ সরবরাহ করেনি।”
২০২১ সালের ডিসেম্বরে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার র্যাব এবং এই বাহিনীর বর্তমান ও সাবেক সাতজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে নির্যাতন সংক্রান্ত অভিযোগের কথাও উল্লেখ করা হয়।
একজন সেনা কর্মকর্তা হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত দুই জন পুলিশ কর্মকর্তাকে র্যাবের হেফাজতে নির্যাতন করা হয়েছিল মর্মে নেত্র নিউজে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর গুম হওয়া ৮৬ জন ব্যাক্তির একটি তালিকা ২০২১ সালের শেষের দিকে সরকারের কাছে পাঠায় জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এনফোর্সড ইনভলেন্টারি ডিসপিয়ারেন্স (ডব্লিউজিইআইডি)।
জাতিসংঘের নির্যাতন সংক্রান্ত কমিটির চিঠির কোন জবাব বাংলাদেশ সরকার দিয়েছে কি না জানতে চেয়ে নেত্র নিউজ জেনেভায় অবস্থিত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধির কার্যালয়ে যোগাযোগ করে। তবে এই প্রতিবেদন প্রকাশের সময় পর্যন্ত তাদের তরফে কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
তবে জাতিসংঘের কমিটির পক্ষ থেকে নেত্র নিউজকে বলা হয়েছে যে, নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সরকারকে ওই চিঠি পাঠানো হয়।●