বাংলাদেশ ২০২৪: প্রভাবশালী দশ
২০২৪ সালের সবচেয়ে প্রভাবশালী দশ বাংলাদেশি ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর তালিকা উন্মোচনের মধ্য দিয়ে বিদায়ী বছরটি ফিরে দেখার চেষ্টা করছে নেত্র নিউজ।
![বাংলাদেশ ২০২৪: প্রভাবশালী দশ](/content/images/size/w2000/2024/12/best102s-1.png)
২০২৪ সালটি অন্যান্য বছরের মতো নয়। এ বছর একটি বিধ্বংসী গণঅভ্যুত্থান প্রত্যক্ষ করেছে বাংলাদেশ, যে অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এক দানবীয় স্বৈরশাসনের পতন ঘটেছে। এ বছরের আলোচিত বা প্রভাবশালী ব্যক্তি ও গোষ্ঠী নির্বাচন করতে গেলে ঘুরেফিরে গণঅভ্যুত্থানই কেন্দ্রে থাকবে। থাকবে সেসব ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সঙ্গে গণঅভ্যুত্থানের কোনো না কোনো সম্পর্ক। আমাদের বিবেচনায় বছরটির পরিণতি নির্মাণে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছেন যারা:
দশম: শেখ হাসিনা
এ বছরের ৭ জানুয়ারি একপাক্ষিক ও পাতানো নির্বাচনের মধ্য দিয়ে চতুর্থবারের মতো ক্ষমতার মসনদে বসেন প্রবল-প্রতাপ শেখ হাসিনা। একদলীয় পুলিশি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে শেখ হাসিনা তার স্বৈরশাসনে নতুন পালক যুক্ত করেন। পিতা শেখ মুজিবুর রহমান যেখানে ব্যর্থ হয়েছিলেন সেখানে সফল হয়েছেন শেখ হাসিনা। ৭ জানুয়ারির পাতানো নির্বাচনে জয়লাভের মধ্য দিয়ে তার কর্তৃত্ববাদী শাসন স্থায়ী হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। তবে জুলাইয়ে বাংলাদেশে সংঘটিত নজিরবিহীন গণঅভ্যুত্থান তার ১৫ বছরের দীর্ঘ শাসনকে চুরমার করে দিয়েছে।
১৪ জুলাই একটি সংবাদ সম্মেলনে তার ন্যাক্কারজনক বক্তব্য ও আচরণ বাংলাদেশের তরুণদের আওয়ামী লীগের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত বিক্ষুব্ধ করে তুলেছিল। এর পরবর্তী তিন সপ্তাহে শেখ হাসিনার নির্দেশে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতা এবং নিরীহ-নিরস্ত্র নাগরিকদের ওপর নির্বিচার সহিংসতা চালায় রাষ্ট্রীয় বাহিনী, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা। সে সহিংসতায় অন্তত ১৫০০ জনের প্রাণহানি ঘটে। নজিরবিহীন বর্বরতা, প্রতারণা ও নানা কূটচালে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার প্রচেষ্টার পরও গণরোষের মুখে ধসে পড়ে হাসিনার তখ্ত। ৫ আগস্ট তিনি ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যান।
নবম: ওয়াকার-উজ-জামান
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শেষ মুহূর্তে দৃশ্যপটে আবির্ভূত হন সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান। আন্দোলনকারীদের হত্যার নির্দেশদাতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর থেকে আনুগত্য সরিয়ে জনগণের কাছে সমর্পণ করেন।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িয়ে পড়ে সেনাবাহিনী। এমন কি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের প্রতীক বহনকারী সামরিক যান ব্যবহার করে তারা। এ ঘটনার পর যখন জাতিসংঘ তাদের রাশ টেনে ধরতে যাচ্ছিল, ঠিক তখনই জেনারেল ওয়াকার শান্তিরক্ষা মিশনের ভবিষ্যৎ বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশি সামরিক বাহিনীর অবস্থান সমুন্নত রাখতে হাসিনার আনুগত্য অস্বীকার করেন, যা সময়োপযোগী ও সঠিক পথ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। ৫ আগস্টের পর তিনিই প্রথম একটি রূপরেখা প্রস্তাব করে সাধারণ নির্বাচনের এজেন্ডা নির্ধারণ করেন।
অষ্টম: মুহাম্মদ ইউনূস
আওয়ামী লীগের শাসনকালে শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ওপর নেমে এসেছিল নিপীড়নের খড়্গ। কর ফাঁকি, শ্রম আইন লঙ্ঘনসহ একাধিক হয়রানিমূলক মামলায় ফাঁসিয়ে তাকে হেনস্তার পথ বেছে নেয় সরকার। এসব মামলায় তার কারাভোগের ইঙ্গিতও পাওয়া যাচ্ছিল। এমন পরিস্থিতিতে বছরের মাঝামাঝি সময়ে তিনি অনেকটা পর্দার আড়ালে চলে যান। তবে জুলাই অভ্যুত্থান চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেলে তিনি আবারও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেন।
ফ্রান্সে তখন তার অস্ত্রোপচার চলছিল। আওয়ামী স্বৈরশাসনের একচেটিয়া সমালোচক ড. ইউনূস সে অবস্থায় জানতে পারেন আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা তাকে উৎখাত হওয়া শেখ হাসিনার স্থলাভিষিক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দ্রুততার সঙ্গে অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করে তিনি ফ্রান্স থেকে দেশে ফিরে আসেন ৮ আগস্ট দুপুরে। ওইদিন রাতেই তিনি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন।
হাসিনার রোষের মুখে পড়ে যার কারাগারে অন্তরীণ হওয়ার কথা, সময়ের দাবি মেনে সেই তিনিই হয়ে গেলেন বাংলাদেশের সরকারপ্রধান।
সপ্তম: তারেক রহমান
গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশের সময় নানা উদ্বেগ উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সংস্কারমূলক তৎপরতা ছাড়াও নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দায় রয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর। বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি সেই নির্বাচনের প্রহর গুনছে। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বছরটি শেষ হচ্ছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার অপেক্ষার মধ্য দিয়ে।
যদিও পূর্বেকার বিএনপি সরকারের দুর্নীতিসহ নানা অপকর্মের রেকর্ড রয়েছে। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) গঠনের পাপ, সংখ্যালঘু নিপীড়ন, নির্বাচনী কারসাজি, স্বৈরাচারী প্রবণতা এবং তারেক রহমানের হাওয়া ভবনের নামে চলা অপকর্মের ঘটনাগুলো অনেকটাই মুছে গেছে মানুষের স্মৃতি থেকে। ঠিক এমনই এক বাস্তবতায় তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে লাল গালিচা।
তবে এবারের তারেক রহমান আবির্ভূত হচ্ছেন ভিন্ন চরিত্র নিয়ে। তিনি বিএনপির তৃণমূলকে অভ্যন্তরীণভাবে সংগঠিত করতে এবং বাহ্যিকভাবে নিজেকে একজন সংস্কারকামী, গণতান্ত্রিক নেতা হিসেবে তুলে ধরতে সময় এবং শক্তি ব্যয় করছেন।
ষষ্ঠ: বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল
গত দেড় দশকে নারী ও সংখ্যালঘুদের অধিকার নিশ্চিতের সূচকে ধারাবাহিক অবনতি ঘটেছে বাংলাদেশের। জাতীয় ক্রীড়া-সংস্কৃতিতে একটা স্পষ্ট বৈষম্য প্রতিষ্ঠা হয়েছে — যেখানে ক্রিকেটের প্রতি পক্ষপাতদুষ্টতা রয়েছে এবং পুরুষদের তুলনায় নারী খেলোয়াড়দের বেতন অবিশ্বাস্যরকম কম। নারীদের স্বীকৃতির ক্ষেত্রে যখন এমন দুঃসহ বৈষম্য বিদ্যমান, ঠিক তখনই নারী ফুটবল দল সময়োপযোগী একটি বার্তা দিয়েছে যে, অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে নারী ও সংখ্যালঘুদের গুরুত্ব দেওয়া ঠিক কতটা জরুরি।
গত ৩০ অক্টোবর বাংলাদেশ সাফ উইমেনস চ্যাম্পিয়নশিপ অর্জন করে। এ টুর্নামেন্টে ঋতুপর্ণা চাকমা এবং রূপনা চাকমা সেরা খেলোয়াড় এবং গোলরক্ষক হন। যখন গোটা জাতি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বেদনাদায়ক স্মৃতি ও আতঙ্ক ঝেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাইছিল ঠিক সে সময় এই বিজয়টি জাতির ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে টনিক হিসেবে কাজ করেছে।
পঞ্চম: শফিকুল আলম
২০২৪ সালে দুইজন শফিকুল আলম ছিলেন — যারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ ভূমিকায় প্রভাব বিস্তার করেছেন। সাংবাদিক শফিকুল আলম, যিনি ক্যারিয়ারের উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছিলেন। তিনি ছিলেন জুলাই অভ্যুত্থানের শান্ত ও উদারতম নায়কদের একজন। অভ্যুত্থান চলাকালে হাসিনা সরকার ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দিয়ে বহির্বিশ্ব থেকে বাংলাদেশকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে রাখে। সে সময় বাংলাদেশে
যে বর্বরতা চলছিল তা বিশ্বের কাছে তুলে ধরার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন শফিকুল আলম।
৫ আগস্টের পর তিনি প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব হন। এর মধ্য দিয়ে তিনি দ্রুত সময়ে খ্যাতি এবং সমালোচনা দুটোই অর্জন করেন। একজন সাংবাদিক থেকে তিনি আজ গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বও হয়ে উঠেছেন। প্রেস সচিব হিসেবে তিনি একটা দুর্বল সরকারের জনসংযোগের দায়িত্ব পালন করছেন। তাকে প্রায়শই সরকারসম্পর্কিত নানা সংবাদের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে হচ্ছে।
চতুর্থ: গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন
জোরপূর্বক গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সদস্যরা বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে সাহসী ব্যক্তি হিসেবে প্রতীয়মান হচ্ছেন। কারণ, তাদের কাজের ধরন তাদেরকে সামরিক বাহিনীর শত্রু করে তুলেছে। সামরিক বাহিনী তাদের করা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মত অপরাধগুলোর ওপর থেকে কমিশনের নজর সরানোর সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছে। তবে সে সব চেষ্টা বৃথা গেছে। একই ধরনের অপচেষ্টা চালিয়েছে বাকি সহযোগী অপরাধী — ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং পুলিশের মতো রাষ্ট্রীয় বাহিনীও। কমিশন রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় শেখ হাসিনার দায় সনাক্ত ও পরিমাপের ক্ষেত্রেও সক্ষমতা দেখিয়েছে।
কমিশনের সাফল্য বা ব্যর্থতার উপর বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। রাষ্ট্রের পীড়নমূলক চরিত্র বদলাতে এ কমিশনের তৎপরতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।
তৃতীয়: প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস অ্যালায়েন্স অব বাংলাদেশ (পুসাব)
একটি আন্ডারগ্রাউন্ড গ্রুপ, যেটি দীর্ঘদিন ধরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অধিকারের পক্ষে অক্লান্ত পরিশ্রম করে আসছে। প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস অ্যালায়েন্স অব বাংলাদেশ (পুসাব) এখনও অনেকের কাছে অজানা। তবুও জুলাই অভ্যুত্থানের একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে এর অসাধারণ সাংগঠনিক ক্ষমতা এবং তৎপরতা শেখ হাসিনার পতন ত্বরান্বিত করেছে। পুসাব না হলে হাসিনার পতন হত না। পুসাব-অনুপ্রাণিত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জুলাইয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনে কোনো অংশীদারিত্ব না থাকলেও তারা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে ঐক্যবদ্ধ হন। হাসিনা সরকারের নিপীড়ন ও বর্বরতার বিরুদ্ধে জীবন বিপন্ন করে মাঠে নামেন, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসীদের আক্রমণের মুখে পড়েন, এমনকি মৃত্যুকেও বরণ করে নেন।
মানুষের প্রতি, গণতন্ত্রের প্রতি এই গোষ্ঠীর দীর্ঘস্থায়ী অঙ্গীকার বাংলাদেশের ইতিবাচক ভবিষ্যতের বার্তা দেয়।
দ্বিতীয়: শক্তিধর সাত — নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ, আবদুল হান্নান মাসুদ, রিফাত রশিদ, মাহিন সরকার, আবদুল কাদের, উমামা ফাতেমা।
জুলাইয়ে রাজনৈতিক নেতৃত্ববিহীন একটি ছাত্র আন্দোলন গণ আন্দোলনে পরিণত হয় নাহিদ ইসলামের দৃঢ় নেতৃত্বে। এর মধ্য দিয়ে নতুন প্রজন্ম একজন দক্ষ ও প্রতিশ্রুতিশীল রাজনৈতিক নেতাকে পেয়েছে। সহযোদ্ধা আসিফ মাহমুদ ছিলেন নাহিদের প্রতি অত্যন্ত অনুগত নেতাদের একজন। ঠিক একই রকম আনুগত্য দেখিয়েছেন আবদুল হান্নান মাসুদ, রিফাত রশিদ এবং মাহিন সরকারের মতো তরুণ নেতৃত্বও। বিশেষ করে এমন একটা সময় পর্যন্ত তারা নাহিদের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ ছিলেন যখন স্বৈরশাসক হাসিনা গণঅভ্যুত্থানকে নস্যাৎ করার সব ধরনের আয়োজন সম্পন্ন করেছিলেন। যখন নাহিদ, আসিফসহ শীর্ষনেতারা ডিবি কার্যালয়ে বন্দি, তখন শত চাপ এবং অনির্বচনীয় সীমাবদ্ধতার মধ্যেও তরুণ নেতা আবদুল কাদের নয় দফা দাবি পেশ করে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছিলেন।
তরুণ নেতাদের মধ্যে উমামা ফাতেমাও একজন, যিনি বিশ্বের কাছে আন্দোলনের মুখপাত্র হিসাবে নিজেকে তুলে ধরেছিলেন। সেইসময় নারী প্রতিবাদকারীদের ভূমিকার জন্য তাদের স্বীকৃতির দাবিও করেছিলেন তিনি; যদিও পরবর্তীতে তা ম্রিয়মান হয়ে পড়ে।
![](https://netra.news/content/images/2024/12/best102-1.png)
প্রথম: আবু সাঈদ
জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ রংপুরের আবু সাঈদ, যিনি দু’ হাত প্রসারিত করে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর বন্দুকের নলের মুখে পেতে দিয়েছিলেন নিজের বুক। তাকে হত্যার মধ্য দিয়ে আত্মস্বীকৃত, অনুতাপহীন দানবীয় হাসিনার স্বৈরশাসনের মুখোশ উন্মোচিত হয়ে পড়েছিল।
নিরস্ত্র আবু সাঈদ ১৬ জুলাই যে হিম্মত ও প্রত্যয় নিয়ে কর্তৃত্ববাদী শাসকের পেটোয়া বাহিনীর মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিলেন, তা কাঁপিয়ে দিয়েছিল গোটা বিশ্বকে। বন্দুকের নলের মুখে আবু সাঈদের সেই প্রসারিত বুক অগাধ বিস্ময়ের জন্ম দেয়। কোনো যুক্তি দিয়ে তাকে ব্যাখ্যা করা যায় না।
বিকৃত, কাপুরুষের মতো তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা কিংবা হাজার হাজার তরুণ প্রতিবাদী প্রাণকে কোনো ধরনের দ্বিধা ছাড়াই নির্মূল করার মধ্যে একটি জাতির ভবিষ্যত এবং মানবতার প্রতি চরম অবজ্ঞা প্রকাশিত হয়। কোনো যুক্তি দিয়ে তাকে খণ্ডন করা বা ক্ষমা করা যায় না।
বাংলাদেশে স্বৈরাচারের পতন এবং প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে আবু সাঈদের আত্মত্যাগ অনন্তকাল ধরে স্মরণ করতে হবে।●