ঢাকায় রাতের তাণ্ডবে নিহত অন্তত ১৭, আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের
বাংলাদেশে ইন্টারনেট সেবা ও মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ থাকলেও আন্দোলন চালিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম নেত্র নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে একথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সরকার এই মুহূর্তে তাদের প্রাথমিক দাবি-দাওয়া মেনে না নেয়া পর্যন্ত সরকারের সাথে কোনো ধরণের আলোচনায় যাবেন না আন্দোলনকারীরা। গতকালের মতো আজকেও সারাদিন কমপ্লিট শাটডাউন চলবে। আন্দোলনকারীদের প্রাথমিক দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে: পুলিশ ও ছাত্রলীগকে নিরস্ত্রীকরণ; সকল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে রাজপথ থেকে প্রত্যাহার; শিক্ষাঙ্গন খুলে দেয়া; এবং, দেশব্যাপী ইন্টারনেট সেবা চালু করা।
১৯ জুলাই সকাল ১০টা থেকেই রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। তাদের নিরস্ত করতে রাস্তায় নামে বিপুল সংখ্যক পুলিশ, বিজিবি, ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক কর্মীসহ অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা। এসময় আন্দোলনকারী ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ছররা গুলি ছুঁড়লে কয়েকজন ব্যক্তি আহত হন। নেত্র নিউজের প্রতিনিধিরা ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থান ঘুরে নিশ্চিত করেছেন আহতের সংখ্যা বাড়লেও মোহাম্মদপুর, গুলশান, বাড্ডা-রামপুরা ও উত্তরায় আন্দলোনরত শিক্ষার্থীরা শক্ত অবস্থানে রয়েছেন।
আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, ১৮-১৯ জুলাই দিবাগত রাতে পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলায় অন্তত অর্ধশতাধিক নিহতের ঘটনা ঘটেছে। নেত্রনিউজের পক্ষ থেকে নিহতের এই সংখ্যা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে গিয়ে ১৭টি লাশের সন্ধান পেয়েছে নেত্র নিউজ। মর্গের একজন কর্মী জানিয়েছেন লাশগুলো ১৮-১৯ জুলাই দিবাগত রাত থেকে ভোর পর্যন্ত মর্গে এসেছে। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলমান আন্দোলনে এখনো পর্যন্ত মোট নিহতের সংখ্যা ৩৯।
এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে স্বতঃস্ফূর্ত যৌক্তিক উল্লেখ করে সংহতি ও সমর্থন জানিয়েছে বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবিকে আওয়ামী লীগ সরকার দলীয় রূপ দেয়ার চেষ্টা করছে, নেত্র নিউজের সাথে এক সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপির একজন মুখপাত্র একেএম ওয়াহিদুজ্জামান। আন্দোলনকারীদের ওপর সরকারের বর্বরোচিত নির্যাতনের প্রতিবাদে বিএনপি তাদের নেতাকর্মী ও গণতন্ত্রকামী অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের সাথে জমায়েত হয়ে কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির এই নেতা। এছাড়াও সর্বস্তরের জনগণকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সমর্থন ও সহায়তা করার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
ইতোমধ্যে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিবকে রুহুল কবির রিজভি আহমেদকে ঢাকা প্রেসক্লাব থেকে আটক করেছে পুলিশ।●