“গণহত্যা”র পর নতুন কর্মসূচি ছাত্র আন্দোলনের
দুই দিনের “আল্টিমেটাম” শেষ হওয়ার পর নিজেদের নয় দফা দাবিতে দেশব্যাপী গণসংযোগ ও মুখে কালো কাপড় বেঁধে বাসাবাড়ি ও সড়কে অবস্থান করার ঘোষণা বৈষম্য-বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের।
বুধবার থেকে নিজেদের নয় দফা দাবিতে দেশব্যাপী গণসংযোগ ও মুখে কালো কাপড় বেঁধে বাসাবাড়ি ও সড়কে অবস্থান করবেন শিক্ষার্থীরা। ২৩ জুলাই রাতে ৫৬ সমন্বয়কের স্বাক্ষরিত এক লিখিত বিবৃতিতে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেয় বৈষম্য-বিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
ইতিমধ্যে তিন-শতাধিক ছাত্র-জনতাকে হত্যা করা হয়েছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়, “বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম সারির কয়েকজন সমন্বয়ককে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে মনগড়া বক্তব্য আদায়ের চেষ্টা করেও” সরকার ব্যর্থ হয়েছে।
বাংলাদেশে চলমান গণ-অস্থিরতা ও প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মধ্যে অন্তত ১৮৭ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে শীর্ষস্থানীয় প্রথম আলো পত্রিকা। এছাড়া সরকারের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের আলোচনা চলার মধ্যে অন্তত দুই জন সমন্বয়ককে গুম বা গ্রেপ্তার করার অভিযোগ এর আগে সমন্বয়করা আগে করেছিলেন। অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম তাকে আটক করে শারীরিক নির্যাতন করার ক্ষতচিহ্ন সংবাদ মাধ্যমকে দেখিয়েছেন।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত এসব সহিংসতার দায় বিরোধী দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর উপর চাপানো হয়েছে। এছাড়া “কোমলমতি শিক্ষার্থীরা” সহিংসতায় জড়িত থাকতে পারে না” মর্মে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ সরকারের মন্ত্রীরা বারবার বলছেন, বিএনপি ও শিবিরের কর্মীরা গত পাঁচ দিনে জ্বালাও-পোড়াও ও ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি চালিয়েছে। এছাড়া নিজের বক্তব্যে পুলিশ নিহত হওয়া এবং ছাত্রদের হাতে ছাত্রলীগের কিছু কর্মীর হেনস্থা হওয়ার বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন হাসিনা। কিন্তু ছাত্রদের মৃত্যুর ব্যাপারে তিনি কোনো শব্দ উচ্চারণ করেননি।
বিক্ষোভের মধ্যেই তিন জন সমন্বয়কের একটি দল সরকারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এসে একটি সংবাদ সম্মেলনে নয় দফা দাবি উত্থাপন করে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের এই দাবির বিষয়ে সরকারের কোনো কর্তাব্যক্তি এখন পর্যন্ত সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি। বরং, কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের প্রসঙ্গই তাদের বক্তব্যে বারবার উঠে এসেছে। এরই প্রেক্ষিতে বিবৃতিতে বলা হয়, “শুধুমাত্র আদালতের রায় দিয়ে কোটা ব্যবস্থার সংস্কার করে সরকার দেশব্যাপী চালানো গণহত্যার দায় এড়াতে পারে না।”
এর আগে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম দুই দিনের জন্য তাদের কর্মসূচি “স্থগিত” করে সরকারকে “আল্টিমেটাম” দিয়েছিলেন। সেই সময় শেষ হওয়ার পর নতুন কর্মসূচি দিয়েছেন আন্দোলনের নেতারা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নয় দফা দাবি এখন “ছাত্র-জনতার দাবিতে পরিণত হয়েছে” উল্লেখ করে তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, এই দাবিমালা পূরণ না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলবে।
প্রসঙ্গত, শিক্ষার্থীদের দাবির এক নম্বরেই রয়েছে শিক্ষার্থী হত্যার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দায় নিয়ে জাতির কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি।
এছাড়া হত্যাকাণ্ডের দায় নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে মন্ত্রীপরিষদ ও দল থেকে বরখাস্তের দাবিও জানানো হয়।
বাংলাদেশের বেসামরিক ও আধাসামরিক আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের আওতাধীন।
এছাড়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগের হামলায় উস্কানি দিয়েছেন বলে শিক্ষার্থীরা শুরু থেকেই অভিযোগ করে এসেছেন।
সোমবার নেত্র নিউজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের ক্যাডাররা চট্টগ্রামে আন্দোলনের প্রথম দিকের গুলি চালিয়ে তিনটি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। অপরদিকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরকারের আলোচনায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
এছাড়াও বিবৃতিতে আন্দোলনকারীদের উপর সবচেয়ে সহিংস আক্রমণ পরিচালনাকারী বাহিনী পুলিশের সংশ্লিষ্ট ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার ও পুলিশ সুপারদের বরখাস্তের দাবিও জানানো হয়েছে। হামলায় গুলি চালানো ও নেতৃত্ব দেওয়া পুলিশ সদস্য এবং আক্রমণকারী ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের ও গ্রেপ্তার করতে বলা হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ সহ সকল দলীয় ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা, অবলিম্বে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হল খুলে দেওয়া, শিক্ষার্থীদের হয়রানি না করার নিশ্চয়তা দেওয়া, আন্দোলনে “শহীদ ও আহত” শিক্ষার্থী, নাগরিকের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া।