গুগল সার্চে ভারতীয় মিডিয়ার দাপটে চাপা বাংলাদেশি সাংবাদিকতা
বাংলাদেশে সূত্রপাত হওয়া ঘটনায় স্থানীয় মৌলিক সাংবাদিকতাকে অগ্রাহ্য করে ভারতীয় মিডিয়ায় আসা একপেশে বিভাজনমূলক প্রতিবেদন ও পর্যবেক্ষণকে প্রাধান্য দিয়েছে গুগল সার্চ।
রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে ঢাকায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের সাম্প্রতিক গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে সাংঘর্ষিক দুটি বয়ান সামনে এসেছে। উভয় বক্তব্যই মনযোগ লাভের দাবি রাখে। সমর্থকদের বক্তব্য হলো, বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর নিপীড়ন নিয়ে সরব থাকায় চিন্ময়ের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে। অন্যদিকে তার সমালোচকরা বলেছেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর সংকটে জর্জরিত একটি সরকারকে আরো অস্থিতিশীল অবস্থায় ফেলতে বিরূপ প্রচারণায় লিপ্ত হয়েছিলেন এই হিন্দু ধর্মীয় নেতা।
বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরেই আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক কৌশলে গুটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে হিন্দুরা। নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ ও ভারতপন্থী ভাবমূর্তি বজায় রাখতেও হিন্দুদের কাজে লাগিয়েছে দলটি। শত শত মানুষের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে হাসিনা সরকার যখন নিজেরই স্বৈরতান্ত্রিকতার ভারে ধসে পড়ল, তখন হাসিনার অনুগতরা দেশজুড়ে সহিংস প্রতিশোধের শিকার হয়। এদের মধ্যে রয়েছে কিছু হিন্দুও।
কিন্তু একইসঙ্গে, হাসিনা যখন ভারতে আশ্রয় নিলেন, তার পরপরই দেশজুড়ে বিভিন্ন মন্দিরে হামলা হয়; ভাঙচুর করা হয় হিন্দুদের প্রতিমা। এই সকল ঘটনা শুধু রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে হয়েছে, তেমন নয়। কোনো কোনো ঘটনার নেপথ্যে সাম্প্রদায়িকতার ছাপ স্পষ্ট। ফলে সারা দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
এই আতঙ্ক ও উত্তেজনার সবচেয়ে তীব্র বিস্ফোরণ দেখা যায় চট্টগ্রামে। চিন্ময় দাসের সমর্থকরা চট্টগ্রামের আদালত প্রাঙ্গণে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। নিহত হন একজন মুসলিম আইনজীবী। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ জুড়ে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়।
অপরদিকে ভারতে চিন্ময় দাসের গ্রেপ্তারের বিষয়টিই হয়ে উঠে মুখ্য। উগ্র হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলো এই উপলক্ষে দল ভারি করার কৌশলে নামে। তারই পরিণতি ঘটে ত্রিপুরায় বাংলাদেশের কনস্যুলেটে সহিংস হামলার মাধ্যমে। ফ্যাক্টচেকাররা দেখিয়েছেন, এই উস্কানি ও অপপ্রচারের বড় অংশেরই সূত্রপাত ভারতের বিশাল হিন্দুত্ববাদী অনলাইন নেটওয়ার্ক। ফলে সমালোচকদের অনেকেই মনে করেন, বাংলাদেশের ট্র্যাজেডিকে পুঁজি করে ঘরোয়া রাজনৈতিক ফায়দা লুটছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অনুসারীরা।
কিন্তু এই বহুস্তরবিশিষ্ট জটিল ঘটনাপ্রবাহ বুঝতে আপনি যদি গুগলে সার্চ করে কোনো সরেজমিন প্রতিবেদন অথবা বিশ্লেষণ পড়তে চান, আপনাকে হতাশ হতে হবে। কেননা এই ঘটনা সম্পর্কিত কী-ওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করলে গুগলের প্রথম সারির ফলাফলে প্রায় একচেটিয়া আধিপত্য ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের। অথচ, এই সংবাদ মাধ্যমগুলোর কোনো স্থায়ী প্রতিনিধি বাংলাদেশে নেই বললেই চলে।
সাধারণত ভাসা ভাসা তথ্য কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ঘটনার পুনঃপ্রচার করেছে ভারতীয় এই ওয়েবসাইটগুলো। বিপরীত দিকে, সরাসরি ঘটনাস্থল থেকে সংবাদ সংগ্রহ করেও বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের জায়গা হয়েছে একেবারে শেষ সারিতে।
এই বিষয়ে আরও স্পষ্টতা পেতে টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট থেকে আমরা বোঝার চেষ্টা করি কীভাবে গুগল সার্চ ফলাফল এত পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে উঠল। কীভাবে ভারতীয় গণমাধ্যম এমন একটি খবরের আলোচনায় আধিপত্য বিস্তার করলো, যেই ঘটনাটির সূত্রপাত বাংলাদেশের মাটিতে?
আমাদের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আপনি পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুন না কেন—বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য বা যুক্তরাষ্ট্র—গুগলে এই ঘটনার প্রধান কী-ওয়ার্ডগুলো দিয়ে খুঁজলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমই ফলাফলের শীর্ষস্থান দখল করে রাখে।
এমনকি বাংলাদেশে বসেও টাইমস অব ইন্ডিয়া, দ্য হিন্দু বা হিন্দুস্তান টাইমস-এর মতো ভারতীয় সূত্রগুলোই বারবার জায়গা করে নেয় গুগলের ‘নলেজ প্যানেল’, ‘টপ স্টোরিজ’, ‘ভিডিও ক্যারাউসেল’ ও ‘নিউজ’ ট্যাব-এ। বাংলাদেশের দ্য ডেইলি স্টার, প্রথম আলো বা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর মতো প্রথম সারির দৈনিকের খবরের দেখা মেলে অনেক পরে। “চিন্ময় কৃষ্ণ দাস” বাংলায় বানান করে লিখে খোঁজ করলে কিছুটা ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। তবে তারপরও বিশ্বের বেশিরভাগ অঞ্চলে ভারতীয় ওয়েবসাইটগুলোই এগিয়ে থাকে।
অস্ট্রেলিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত প্রায় সব অঞ্চলেই গুগল সার্চের সর্বোচ্চ ৯০ ভাগ শীর্ষ স্থান দখল করে রেখেছে ভারতীয় বিভিন্ন সাইট। বাংলাদেশের খ্যাতনামা সংবাদমাধ্যমগুলোকে পাওয়া যায় ত্রয়োদশ বা চতুর্দশ পাতায়, যেখানে খুব কম মানুষই স্ক্রোল করেন। পিগুরুস (PGurus) বা ডিডি নিউজ (DD News)-এর মতো অনেক অখ্যাত ভারতীয় ওয়েবসাইট ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশের জাতীয় সব পত্রিকাকে।
কিন্তু গুগল চাইলেই স্থানীয় সংবাদ সূত্রকে অগ্রাধিকার দিতে পারে। যেমন, ১৬ ডিসেম্বর আমরা যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যে সংঘটিত একটি বন্দুক হামলার ঘটনা সম্পর্কে জানতে গুগলে “madison school shooting” লিখে সার্চ দেই। তখন দেখা যায়, ফলাফলে ম্যাডিসন শহরের বিভিন্ন স্থানীয় ছোট সংবাদমাধ্যমের খবরকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে জায়গা দিয়েছে গুগল। জাতীয়ভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রখ্যাত অনেক সংবাদমাধ্যম থাকলেও, এই ঘটনায় স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরকে প্রাধান্য দিতে গুগলের অসুবিধা হয়নি। আমরা বিভিন্ন ধরণের ডিভাইস ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে ও বাইরে থেকে সার্চ দিয়ে দেখেছি, কিন্তু ফলাফলে তারতম্য ঘটেনি। অর্থাৎ, দেখা যাচ্ছে যে একেবারে ক্ষুদ্র অঞ্চলের ক্ষেত্রেও গুগল তার সার্চ ফলাফলে ঘরোয়া সংবাদমাধ্যমকে অগ্রাধিকার দিতে সক্ষম।
তাহলে বাংলাদেশের মতো একটি রাষ্ট্রের বেলায় কেন এই সক্ষমতা ব্যর্থ হলো?
এর একটি ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে বাজারের আকারে তারতম্য, ভাষাগত আধিপত্য, আর সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও), ইত্যাদি বিষয়ে। ভারতের সংবাদ প্রকাশনা খাত অনেক বড় হওয়ায় সেখান থেকে প্রতিদিন ইংরেজি সংবাদ বের হয় প্রচুর। এগুলো সার্চ ইঞ্জিনের জন্য ভালোভাবে অপটিমাইজ করা থাকে। এসব ওয়েবসাইটের “ডোমেইন অথরিটি”ও তাই বেশি। অর্থাৎ গুগলের অ্যালগরিদম এসব ওয়েবসাইটকে “বিশ্বস্ত” বা “প্রতিষ্ঠিত” হিসেবে বিবেচনা করে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমের মূল লক্ষ্য বাংলা ভাষাভাষী পাঠক ধরা। ব্যাপক পরিসরে ইংরেজি কনটেন্ট প্রকাশ করা বা এসইও-এর পেছনে বড় বিনিয়োগের সক্ষমতা তাদের নেই। আর এভাবেই বাংলাদেশে সূত্রপাত হওয়া ঘটনা সম্পর্কে জানতে গুগলে সার্চ দিলে উঠে আসে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের একতরফা কিংবা বিভ্রান্তিকর ক্লিকবেইট শিরোনাম।
গুগলের নীতিমালায় বলা আছে, তারা কয়েক শত কোটি ওয়েবপেইজ বিভিন্ন মানদণ্ডে র্যাংক করে। পেইজের প্রাসঙ্গিকতা, গুণগত মান, কত সম্প্রতি প্রকাশিত হলো, ইত্যাদি বিষয়ের পাশাপাশি ভাষাগত সংকেত ও অঞ্চল-ভিত্তিক তথ্য এই মানদণ্ড নির্ধারণে বিবেচিত হয়। কিন্তু স্পষ্টতই, বেশি দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম কনটেন্ট, যেগুলোতে ক্লিক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি ও বিজ্ঞাপনের আয় বেশি, সেগুলোই সার্চ ফলাফলে সামনের সারিতে থাকে বেশি। আর যেহেতু বাংলাদেশের বাজার ছোট আর এসইও কৌশল ব্যবহার করে খবরকে সার্চ ইঞ্জিনের জন্য নজরকাড়া করে তোলার প্রবণতা কম, সেহেতু তারা এই ধরণের পরিস্থিতিতে ভারতীয় ওয়েবসাইটগুলোর সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারে না। এভাবেই বৈশ্বিক তথ্য পরিক্রমায় ক্ষীয়মাণ হতে থাকে বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমগুলোর প্রভাব।
গুগলের এই বৈষম্যের প্রভাব শুধু ওয়েব ব্রাউজিং-এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। এর মধ্য দিয়ে বহিঃবিশ্বের চোখে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্পর্শকাতর ঘটনাবলী বিকৃত আকারে প্রকাশ পায়। সাম্প্রদায়িক ও রাজনৈতিক সহিংসতার ঝুঁকি বেড়ে যায়, যেখানে এমনিতেই এই অঞ্চলে এই বিষয়গুলো অত্যন্ত সংবেদনশীল।
এর বাইরে বিদেশী সরকার, জাতিসংঘ বা বিশ্বব্যাংকের মতো বহুপাক্ষিক সংস্থা, বিদেশী বিনিয়োগকারী ও এনজিওগুলোর কাছে ভুল বার্তা যায়। একটি দেশের ঘরোয়া স্থিতিশীলতার আঁচ পেতে সবাই গুগলেই সবার আগে সার্চ দেন। তারা যদি তখন অন্য দেশের সূত্রের বরাতে ভয়াবহ অবস্থার বিবরণই (যেমন: “গণহত্যা চলছে”) কেবল দেখতে পান আর ওই দেশের খবরাখবর দেখার সুযোগ না পান, তাহলে তারা অর্ধসত্যের ভিত্তিতে অনুসিদ্ধান্তে পৌঁছার ঝুঁকিতে থাকেন। ফলে একটি দেশের বিষয়ে বৈশ্বিক জনমত, কূটনৈতিক সম্পর্ক ও বিনিয়োগ সম্ভাবনার উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
দক্ষিণ এশিয়ায় এই ধরণের বিকৃতির প্রভাব আরও মারাত্মক। এই অঞ্চলে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক বৈরিতা কাজ করে। কোনো একটি দেশের সংবাদমাধ্যম সম্পূর্ণ নিজস্ব রাজনৈতিক স্বার্থে প্রতিবেশী অপরদেশের ঘটনাবলী নিয়ে অতিমাত্রায় সরব হয়ে উঠতে পারে; আবার আচমকা নীরবও হয়ে যেতে পারে। কাজেই, গুগল যদি কেবল একটিমাত্র বৃহৎ প্রতিবেশী দেশের সংবাদমাধ্যমকে প্রতিবেশী দেশগুলোর খবর প্রচারে একচেটিয়া অগ্রাধিকার দেয়, তাহলে শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও বাংলাদেশের মতো ছোট দেশগুলোর কণ্ঠ চাপা পড়ে যায়।
বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট আরও জটিল। ক্ষমতায় টিকে থাকতে হাসিনা সরকারের অন্যতম বড় ভিত্তি ছিল জিহাদি সন্ত্রাসবাদের হুমকি মোকাবিলা করার অঙ্গীকার। বিশেষ করে, পশ্চিমা কূটনীতিকরা যখন ‘ওয়্যার অন টেরর’ নিয়ে দুনিয়াজুড়ে দূতিয়ালি করছিলেন, তখন হাসিনা সরকারের ওই অঙ্গীকার গুরুত্ব পায় বিভিন্ন প্রভাবশালী দেশে।
স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর কমবেশি আক্রমণ হয়েছে। কিন্তু আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে ধর্মনিরপেক্ষ দল হিসেবে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকার বিষয়টি এক ধরণের মৌন আন্তর্জাতিক সমর্থন পেয়েছিল। তাই হাসিনার আকস্মিক প্রস্থানে কেউ কেউ উদ্বেগ প্রকাশ করছিলেন যে, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। শেখ হাসিনার ছেলে ও উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ও ভারতীয় ও পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমের কাছে মন্তব্য করে এই আশঙ্কার পালে হাওয়া দিয়েছেন।
এমন ঘোলাটে পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সংক্রান্ত বিষয়ে গুগল সার্চে ভারতীয় উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংবাদ সূত্রের আধিপত্যের এক ধরণের রাজনৈতিক দিকও আছে। বিশেষ করে, ধর্মনিরপেক্ষতার মোড়কে পরোক্ষভাবে হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনামলের জন্য একধরণের অজুহাত সৃষ্টি কিংবা যেই গণঅভ্যুত্থানে তার পতন হয়েছে, সেটির গণতান্ত্রিক উদ্দেশ্য ও উৎস নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। আরও গুরুত্বের বিষয় হলো, এই পক্ষপাতদুষ্টতার কারণে অন্তর্বর্তী সরকারকে বিভিন্ন গুজব, ভুল ও অপ-তথ্য মোকাবেলায় বেশি শক্তি ব্যয় করতে হয়েছে। ফলশ্রুতিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর ঘটে যাওয়া প্রকৃত আক্রমণের ঘটনা মোকাবেলায় মনোযোগ ছিল তুলনামূলকভাবে কম।
বৈশ্বিক তথ্য প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে গুগলের ভূমিকা অনেক বেশি। গুগল যদি যুক্তরাষ্ট্রের একটি শহরের কোনো খবর প্রচারের ক্ষেত্রে স্থানীয় ছোট সংবাদমাধ্যমকে অগ্রাধিকার দিতে পারে, তাহলে বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্র পর্যায়ে কোনো খবর প্রচারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমকে গুরুত্ব না দেয়ার বাস্তবিক কারণ খুব সামান্যই থাকতে পারে।
বড় প্রতিবেশীর হুঙ্কারে ম্রিয়মাণ না হয়ে নিজের গল্প নিজের গলায় বিশ্বকে বলার অধিকার রয়েছে বাংলাদেশের মতো ছোট দেশগুলোর। রাজনৈতিক অস্থিরতার ডামাডোলে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার মতো জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সরেজমিন সংবাদ ও বিশ্লেষণ থাকা অত্যন্ত জরুরী। উত্তেজক ও দ্বিতীয়স্তরের সংবাদ নয়, মানুষের প্রয়োজন প্রকৃত সাংবাদিকতা, যেখানে একটি ঘটনার বিবরণের পাশাপাশি প্রেক্ষাপটও ব্যাখ্যা করা থাকে। মানুষের এই জানার পথে গুগল সার্চ অ্যালগরিদমের বাধা হয়ে উঠা উচিত নয়। ●
সাবহানাজ রশীদ দিয়া একজন কম্পিউটেশনাল সমাজ বিজ্ঞানী ও টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক। তিনি আগে মেটার বাংলাদেশ বিষয়ক পাবলিক পলিসি প্রধান ছিলেন। শাহজেব মাহমুদ একজন আইন-গবেষক ও টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউটের গবেষণা প্রধান। তিনি এর আগে আইন ও নীতি সংক্রান্ত পরামর্শক হিসেবে বৈশ্বিক প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে কাজ করেছেন।