সাংবাদিকের বুকে পুলিশের বুলেট কেন?
ভয় দেখিয়ে জনগণের জন্য সাংবাদিকতার পথ বন্ধ করা যায় না।
১৯ জুলাই, শুক্রবার। দাঁড়িয়ে আছি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে, সঙ্গে আরও দুই সহকর্মী। গিয়েছিলাম আগের দিন ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে হতাহতের খবর জানতে। এরইমাঝে আমারই বয়সী এক যুবক সামনে এসে হাউমাউ করে কান্না শুরু করলেন। একটু ধাতস্থ হয়ে বলতে শুরু করলেন “আপনারাও তো সাংবাদিক! আপনারা বেঁচে আছেন, আমার ভাই মর্গে পড়ে আছে কেন? কী দোষ করছিল আমার ভাই? একজন সাংবাদিক হিসেবে ছাত্রদের আন্দোলনের নিউজ করতে গেছিল। সেজন্য গুলি করে আমার ভাইয়ের বুকটা ঝাঁঝরা করে দিবে?”
পাশেই দাঁড়ানো এক ব্যক্তির কাছ থেকে জানলাম, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সংবাদ সংগ্রহের সময় রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের গুলিতে মারা যাওয়া ঢাকা টাইমসের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক হাসান মেহেদীর ছোট ভাই তিনি। ১৮ জুলাই বিকেলে যাত্রাবাড়ীর কাজলায় মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের টোল প্লাজার কাছে পুলিশের সরাসরি গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন এই সাংবাদিক।
শুধু হাসান মেহেদীই নন। চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে মেহেদীসহ চারজন সাংবাদিক খুন হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার যাত্রবাড়ি এলাকায় ঢাকা টাইমসের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক হাসান মেহেদী ও সায়েন্সল্যাব এলাকায় ফটোসাংবাদিক তাহির জামান প্রিয় মারা গেছেন বলে নিহতের স্বজন ও সংবাদভাষ্যে জানা গেছে। ঢাকার বাইরে প্রাণ হারিয়েছেন দৈনিক ভোরের আওয়াজ পত্রিকার গাজীপুরের গাছা থানা প্রতিনিধি শাকিল হোসেন ও দৈনিক নয়া দিগন্তের সিলেট প্রতিনিধি এটিএম তুরাব। গত ১৮ ও ১৯ জুলাই তারা পোশাগত দায়িত্বপালনকালে প্রাণ হারিয়েছেন।
এছাড়া এই আন্দোলনে আহত হয়েছেন শতাধিক সাংবাদিক, যাদের মধ্যে নেত্র নিউজের একজন সাংবাদিকও আছেন। এরা প্রায় সবাই বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টিয়ালশেল, রাবার বুলেট ও গুলিতে আক্রান্ত হয়েছেন।
পেশাগত দায়িত্বপালন করতে গিয়ে গুলিতে প্রাণহানী কিংবা পঙ্গুত্বই শেষ কথা নয়। খবর সংগ্রহে নিয়মিত মাঠে থাকা সাংবাদিকদের বাসা-বাড়িতে মধ্যরাতে হানা এবং অফিসে গিয়ে খোঁজ নেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে অহরহ।
যেখানে নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম বহুদিন ধরেই ক্ষমতাসীন সরকারের প্রচারযন্ত্রে পরিণত হয়েছে, সেখানে সাংবাদিকদের দমনে এই কৌশল স্বাধীন সাংবিদকতা করতে চাওয়া গুটিকয়েক সাংবাদিকের জন্য প্রাণঘাতি হুমকি হিসেবে হাজির হয়েছে। কিন্তু, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, যারা গুলি আর নির্যাতন দিয়ে কলমকে ভয় দেখাতে চান, তাদের জেনে রাখা ভালো এইভাবে ভয় দেখিয়ে জনগণের জন্য সাংবাদিকতার পথ বন্ধ করা যায় না।
বন্দুকের নলের মুখে দাঁড়িয়েও জনগণের পক্ষে আমাদের কলম চলবে।●
এহসান মাহমুদ, স্পেশাল করেসপন্ডেট, নেত্র নিউজ।