সরকার কোনো ধরনের রিফর্মেশনের ধারই ধারেনি: উমামা ফাতেমা
অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা নিয়ে নেত্র নিউজের মুখোমুখি হয়েছিলেন জুলাই অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতাদের একজন
বাংলাদেশে ২০২৪-এর জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতাদের একজন উমামা ফাতেমা। সম্প্রতি মুখোমুখি হয়েছিলেন নেত্র নিউজের। কথা বলেছেন, জুলাই অভ্যুত্থানের অভিজ্ঞতা, আশা-হতাশা ও সংস্কার সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে। অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে ছাত্র রাজনীতির ভবিষ্যৎ, নারীর সামাজিক নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয়ও উঠে এসেছে তার আলোচনায়। নেত্র নিউজের পক্ষে তার সঙ্গে ছিলেন সুরাইয়া সুলতানা (বীথি)।
বীথি: আপনার কাছে প্রথমেই জানতে চাই, আমরা যখন আন্দোলনের কথা বলি, ছাত্র রাজনীতির কথা বলি এবং বিশেষ করে যখন জুলাই আন্দোলনের কথা বলি, তখন সবার আগে যে প্রশ্নটি আসে, এই আন্দোলনটা কোনো একটি দেশের, সাম্রাজ্যবাদী শক্তি বা মার্কিন রাজনীতির একটা অংশ হিসেবে এখানে ভূমিকা পালন করেছে এবং আপনারা আন্দোলনকারীরা তাদের ফান্ডেড, তাদের অর্থনৈতিক সুবিধা নিয়ে আন্দোলন করেছেন। আপনি যেহেতু আন্দোলনের শুরু থেকে ছিলেন এবং নেতৃত্ব দিয়েছেন, কতখানি ষড়যন্ত্র দেখেছেন এবং কতখানি ষড়যন্ত্রের অংশ ছিলেন?
উমামা: এটা খুবই ইন্টারেস্টিং… ৫ আগস্টের শেখ হাসিনা পতন হওয়ার পরে আমাদেরকেও অনলাইন মিডিয়াতে অনেক বেশি বুলিং করা হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়াতে, তারপর টুইটারে সমানে এগুলো সার্কুলেট করা হচ্ছে যে, ইউএসএ ফান্ডেড ছিল। এবং ইউএসএর নাকি একজন লবিস্ট বা এরকম কোনো একজনের একটা বক্তব্য সামনে এসেছিল যে, ইউএসএ এই আন্দোলনে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করেছে। এখন তারা যেহেতু এই মুহূর্তে ক্ষমতায় নেই এবং দেশ থেকে তাদের পালিয়ে যেতে হয়েছে, তারা তো তাদের মতো করে ন্যারেটিভটা বিল্ড করার চেষ্টা করছে। আমাদের আন্দোলন চলাকালীন সময়ে এতকিছু দেখার তো আসলে সুযোগ ছিল না যে, কে কি করছে না করছে। বাংলাদেশের জনগণের গত ১৭ বছরের যে অভিজ্ঞতা, এখানে গুম খুন রাহাজানি দুর্নীতি চুরি বাটপারি এমন কিছু নাই, যেটা আসলে শেখ হাসিনা এবং তার সরকার করেনাই। তো, একটা দেশে যদি কোনো সরকার বা কোনো দল মনে করে যে, দেশে মানুষকে এই পরিমাণ নিপীড়ন নির্যাতন করার পরেও, গুলি করে করে মানুষকে মেরে ফেলার পরেও সাধারণ মানুষ তাদেরকে টলারেট করবে এবং যতক্ষণ না পর্যন্ত বিদেশি কোনো ইন্ধন এখানে আসছে, ততক্ষণ পর্যন্ত জনগণের কোনো অর্গানিক প্রতিরোধ তাদের বিরুদ্ধে তৈরি হবে না— এ ধরনের কোনো চিন্তা হয়তো তাদের মধ্যে ছিল। সেজন্য এ ধরনের ভুল ধারণা তাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে। আমি বলবো না যে এটা ভুল ধারণা, তারা খুব ভালোভাবেই জানে যে, তাদেরকে এই দেশ থেকে… বেসিক্যালি দেশছাড়া করা হয়েছে। এই জিনিসটা যেহেতু তারা মেনে নিতে পারে না, তাই তারা পাল্টা ন্যারেটিভগুলো তৈরি করার চেষ্টা করে। ইতিহাসের এই ন্যারেটিভটাকে আড়াল করার জন্য তারা এই বিদেশি শক্তি, হাবিজাবি, এগুলো নিয়ে আসছেন। অথচ সত্যি কথা বলতে, গত ১৭ বছরে যদি কিছু হয়ে থাকে সেটা হচ্ছে আওয়ামীলীগ সরকার এখানে নানানভাবে বৈদেশিক শক্তি, আমাদের পাশের দেশ ভারত, এই শক্তিগুলোর সাহায্যে দীর্ঘদিন ধরে এখানে একটা অনির্বাচিত সরকার হয়ে আমাদের ঘাড়ে চেপে ছিল। যেটা আমাদের জনগণ, এই জুলাই মাসে, জনগণের যে শক্তি, সেটা দিয়ে এই সকল বৈদেশিক শাসন, বৈদেশিক ইন্ধন, সবকিছুকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল।
বীথি: কিন্তু যে উইল ছিল জনগণের, এখন এক বছর হচ্ছে জুলাইয়ের, আপনি যে ইচ্ছের কথা বলছেন বা মানুষ যে আকাঙ্ক্ষা থেকে এরকম একটা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করলো, এক বছর পরে এসে আপনি, আপনার অভিজ্ঞতা কী বলে? সে আকাঙ্ক্ষা কি পূরণ হয়েছে? বাস্তবায়ন হয়েছে?
উমামা: না, এটা বলার অবশ্য খুবই কম সুযোগ আছে যে, আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন হয়েছে। কারণ, যদি আপনি দেখেন যে, জুলাই আগস্টের আগে তো আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো দীর্ঘদিন ধরে শেখ হাসিনাকে এখানে একটা ফ্যাসিস্ট সরকার ঘোষণা দিয়ে আন্দোলন করে যাচ্ছিল। আমি নিজেও ছাত্র ফেডারেশনের সাথে যুক্ত ছিলাম। এবং ২০২৩ সালে যখন নির্বাচন প্রায় কাছাকাছি চলে আসে, ওই সময় আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করছিলাম। তখন ফ্যাসিবাদ-বিরোধী ছাত্রঐক্য নামে আমরা একটা জোট গড়ে তুলি। একই সাথে আমাদের ন্যাশনাল পলিটিক্যাল পার্টি যারা, শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ ছাড়া, একটা বিশাল অংশের রাজনৈতিক দলগুলোও কিন্তু ঐক্যবদ্ধ হয়ে গেছিল যে, তারা এই নির্বাচনে পার্টিসিপেট করবে না। তো, এত বড় রাজনৈতিক ঐক্যবদ্ধতার পরও সাধারণ জনগণ রাস্তায় নামেনি। এটাই আসলে সিগনিফাই করে গত ১৭ বছরে মানুষ যে নিপীড়িত হয়েছে, সেটার পরেও তারা মুখ ফুটে কথা বলেনি, কারণ, তাদের কাছে আসলে রাজনৈতিক বিকল্প সত্যি (শক্তি) বলতে ছিল না। এবং তারা একই শাসন, জাস্ট এক আওয়ামীলীগ থেকে আরেক আওয়ামীলীগের হাতে পড়তে চাইতো না। এবং কেন এতটা সংগ্রাম করে তারা আওয়ামী লীগকে দেশ থেকে তাড়া করবে, যদি তাদের একই ধরনের শাসন ব্যবস্থা পুনরায় দেখতে হয়? তো, ২০২৩ সালে যে জনগণ নামেনি, সে জনগণ কিন্তু আবার ছাত্ররা যখন গুলি খেয়ে মারা যাচ্ছে, তখন কিন্তু সেই জনগণ নেমে গেছে। তার মানে, এই যে জনগণ, তারা কিন্তু শেখ হাসিনার পতন হোক, এটা দীর্ঘদিন ধরে চাচ্ছে। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর আন্ডারে তারা আসতে চাচ্ছিল না।
এটাই সিগনিফাই করে যে, শুধুমাত্র ক্ষমতার পরিবর্তনের জন্য আসলে কোনো মানুষ এখানে রাস্তায় নামেনি। মানুষ নেমেছিল এখানে একটা ব্যবস্থাগত পরিবর্তন দেখার জন্য।
সরকার দেখা গেছে, একটা গতানুগতিক ধারায় তারা দেশটাকে চালানোর চেষ্টা করেছে এবং যখনই সেই গতানুগতিক ধারায় দেশ চালানোর চেষ্টা করেছে, সাথে সাথেই সম্পূর্ণ পুরনো ব্যবস্থা আবার সরকারের উপর জেঁকে বসেছে। এটা তো খুবই পরিষ্কারভাবে দেখা যাচ্ছে যে, সরকার নানানভাবে সেই পুরনো যে আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থা, সেটার জালে আবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে এবং আমাদের সাধারণ জনগণের ভেতর থেকে যে একটা আকাঙ্ক্ষা ছিল, আমরা প্রত্যেকটা সেক্টরের রিফরমেশন দেখবো, প্রত্যেকটা সেক্টরকে আমরা ঢেলে সাজাতে দেখবো, সেই আকাঙ্ক্ষাটা আমরা এখনো পর্যন্ত বাস্তবায়ন দেখিনাই
বীথি: এর প্রধান কারণটা কি? বা আলাদা করে যদি বলতে হয়, তাহলে সরকারের ঠিক কোন জায়গাটাতে আপনি মনে করেন যে দুর্বলতা সবচেয়ে বেশি?
উমামা: একদম শুরুতে যদি বলি, সরকারের একটা দুর্বলতা হচ্ছে, সে আসলে রাজনৈতিক ঐকমত্য রক্ষা করতে পারেনি। পার্টির যে এজেন্ডা সেটাই এখানে সার্ভ হয়। সেই জায়গায় ৮ আগস্ট যে সরকারটি শপথ নিয়েছিল, তাদের আসার একটাই কারণ ছিল যে, এই মানুষগুলো এই সংস্কারগুলো করবে, কোনো প্রকার রাজনৈতিক প্রেশারকে পাত্তা না দিয়ে। কিন্তু আমরা দেখেছি যে, এখানে রাজনৈতিক দলগুলোই বরং সরকারের উপর নানাভাবে ভর করেছে। আবার ছাত্রদের মধ্যেও যদি দেখি, যেখানে আমাদের একটা দায়িত্ব ছিল সকলকে এক জোট করে রাখা, সকলকে এক জায়গায় নিয়ে আসা, সেখানে দেখা যাচ্ছে, ছাত্রদের মধ্যেও অনবরত একটা ইন্সটিগেটিং বক্তব্য দেওয়া, অনবরত সহযোগিতামূলক আচরণ বা দেশ নির্মাণের জন্য যে যে কাজগুলো করা উচিত, যে যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া উচিত, সেটার পরিবর্তে দেখা যাচ্ছে সেই একই আওয়ামী সিন্ড্রোমের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে যাওয়ার একটা প্রবণতা ছিল। আওয়ামী লীগ আসছে, বা…ইটস নট এবাউট আওয়ামী লীগ, মানে জাস্ট আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগের কিছু সুবিধাভোগী, এটার মধ্যেই আসলে আবদ্ধ হয়ে থাকার একটা প্রবণতা ছিল। যার কারণে দেখা গেছে, যেহেতু বিভিন্ন পক্ষে বিভিন্ন ইন্টারেস্ট এখানে কনফ্লিক্ট করেছে এবং সরকার তাদের মধ্যে সামঞ্জস্যটা এখনো পর্যন্ত রক্ষা করতে পারেনি, তার কারণে এই সংস্কার, আমরা যেটা আশা করেছিলাম, সেই সংস্কারের পথে অনেক ধরনের বাধা তৈরি হয়েছে। এবং আজকে তো আমরা দেখতেই পাচ্ছি, যখনই সরকার কোনো ভালো পদক্ষেপও নেওয়ার চেষ্টা করে, তখন জনগণের হ্যাঁ বা না কোনো ধরনের পদক্ষেপের কথা কিন্তু জনগণের পক্ষ থেকে শোনা যায় না। পলিটিক্যাল পার্টি তো তার জায়গা থেকে নির্বাচনটাকে সামনে রেখে আগায় এবং রাজনৈতিক দলগুলোর, সবসময় তার এজেন্ডার মধ্যে নির্বাচন একটা প্রধান এজেন্ডা হয় এবং সরকারের সাথে যখন রাজনৈতিক দলগুলো ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে কথা বলছিল, তাদের প্রধান এজেন্ডা থাকতে দেখা যেতো, নির্বাচন এবং সংস্কার। কতটুকু সংস্কার হলে নির্বাচন হতে পারবে, এই আলাপগুলো তাদের কাছে প্রধান হয়ে থাকতো। কিন্তু সরকার যদি জনগণের সাথে আস্থার সম্পর্কটা তৈরি করতে পারে, তাহলে দেখা যায় যে, এই রাজনৈতিক শক্তিগুলো সরকারকে ওভার পাওয়ার করতে পারে না। তবে এখানে আমার যেটা উপলব্ধি, সেটা হচ্ছে যে, একটা নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল অবশ্যই, তারা যেহেতু বাংলাদেশের বর্তমানে সবথেকে বড় রাজনৈতিক দল, তাদের একদম রুট লেভেল পর্যন্ত নেতাকর্মী ছড়িয়ে আছে, তাদের জন্য যেভাবে তাদের চেইন অফ কমান্ড স্টাবলিশ করা সম্ভব, তাদের বার্তা যত দ্রুত একদম লোকালিটি পর্যন্ত পৌঁছানো সম্ভব, সেটা কিন্তু আমাদের বর্তমান সরকারের পক্ষে সম্ভব ছিল না। তার ফলে দেখা গেছে, সরকার একটা রাজনৈতিক দলের যে দাবি দেওয়া, সেটার প্রতি এক ধরনের নমনীয় আচরণ করেছে আবার অন্যান্য যে বিভিন্ন ধরনের পলিটিক্যাল অর্গানাইজেশনগুলো আছে, তারা যে নিজেদের মধ্যে একটা যূথবদ্ধতার মধ্যে আসবে, তারা যে সংস্কার প্রশ্নে নিজেদের মধ্যে একটা যূথবদ্ধতার প্রশ্নে আসবে, সেই যূথবদ্ধতা এখানকার পরিবর্তনকামী রাজনৈতিক শক্তিগুলো শো করতে পারেনি, পাঁচ আগস্ট পরবর্তী সময়ে। যার একটা প্রভাব আমরা দেখেছি। সরকারকে তো দিন শেষে ব্যালেন্স করে চলতে হচ্ছে। একটা রাজনৈতিক শক্তি, যে একদম রুট লেভেল পর্যন্ত তার কাজ আছে, তারা দেখা যাচ্ছে, সব ধরনের দাবি-দাওয়া সরকারের উপর চাপিয়ে দিতে পারছে। আবার সরকার পাল্টা অন্যান্য শক্তিগুলোকে প্যাসিফাই করার জন্য তাদের যে বিভিন্ন ধরনের অন্যায্য দাবি-দাওয়া, সেগুলোকেও মাথা পেতে নিচ্ছে। সরকার তো এখানে অথরিটি হিসেবে থাকার কথা, সরকার তো সকলের উপরে একটা অথরিটি হিসেবে ফাংশন করার কথা এবং এই ফাংশনটা করার জন্য অবশ্যই তাকে পুলিশ রিফর্ম করতে হতো, তাকে আমলাতন্ত্রের একটা বড় ধরনের রিফর্মেশন মধ্যে যেতে হতো। কারণ দিন শেষে সাইনিং পাওয়াটা আমাদের উপদেষ্টাদের হাতে। এখন সরকার যেটা করে, তারা তো কোনো ধরনের রিফর্মেশনের ধারই ধারেনি।
বীথি: বলার চেষ্টা করেছেন কি না যে, এই এই রিফর্মেশনগুলো আমাদের দরকার বা আমরা ঠিক এই এই পরিবর্তনগুলো চাচ্ছিলাম, আমাদের আন্দোলন শেষ হবার পরে…
উমামা: পাঁচ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে তো অনেক ধরনের রিফরমেশনই আমাদের এখানে প্রধান এজেন্ডা ছিল। খুবই স্পষ্টভাবে বললে, পুলিশ, গণমাধ্যম এবং জনপ্রশাসন— এই তিনটা হচ্ছে একদমই রাষ্ট্রের বেসিক। আর সংবিধান, বিচার বিভাগ— এগুলো তো আছেই। কিন্তু সংবিধান আর বিচার বিভাগ তো এটা মাচ মোর হায়ার অথরিটির ব্যাপার, যেখানে আপনার লেজিসলেচারের সাথে পুরো জিনিসটা সম্পর্কিত। সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট ভালো হলেই ভালো কিছু হবে এটা বলার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু প্রথম ছয়-সাত-আট মাস একচুয়্যালি কাল-বিলম্ব হয়েছে সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট নিয়ে। আগে সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট আসুক এরপর আমরা দুনিয়ায় খুবই ভালো কিছু কিছু কাজ করবো। কিন্তু যেই সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট এসেছে, আজকে এটার রেজাল্ট কি? একটা ঐকমত্য কমিশন হয়েছে, যে ঐক্যমত কমিশনে লিটারেলি এখনো পর্যন্ত পুলিশ সংস্কার কমিশন ইনক্লুডেডই হয়নি। ঐকমত্য কমিশনের মধ্যে নারী সংস্কার কমিশনের আলাপ তো তারা ওখানে করেই না। কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ যেটা ছিল, পুলিশ সংস্কার কমিশন, সেটা নিয়ে ওখানে কোন ধরনের আলাপই হয় না।
৫ আগস্ট এর পরবর্তী সময়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা এসেছে— পুলিশকে একটি স্বাধীন বাহিনীতে পরিণত করা। যাতে এখানে সরকারের সরাসরি কোনো হস্তক্ষেপ বা রাষ্ট্রপ্রধানের সরাসরি হস্তক্ষেপ, তদবির বা বদলি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সরাসরি হস্তক্ষেপ যাতে এখানে কাজ করতে না পারে। এবং একটা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার কথা উঠেছিল। কিন্তু আপনি কি বর্তমানে এই আলাপগুলো দেখবেন যে, পুলিশকে সংস্কার করার যে আলাপগুলো ওই সময় উঠেছিল? না, কারণ, ঐকমত্য কমিশন পর্যন্ত পুলিশ সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট পৌঁছাতেই পারেনি। ঐকমত্য কমিশনে আছে কারা? এখানকার যারা বিভিন্ন ধরনের পলিটিক্যাল পার্টি। হয় খুবই ফেমাস পলিটিক্যাল পার্টি অথবা নাম না জানা পলিটিক্যাল পার্টি। তো, যেখানে পুরো রাজনৈতিক ব্যবস্থাটাই এক ধরনের সমস্যাজনক জায়গায় আছে এবং ২০২৪ সালের আগ পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলো দিনের পর দিন রাস্তায় মুভমেন্ট করার পরও জনগণ তাদের ডাকে নামেনি, ঠিক আজকে ঐকমত্য কমিশনের রিপোর্ট কিন্তু এই রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মতির ভিত্তিতে তৈরি হচ্ছে। তার মানে পুরো জনগণের মুভমেন্ট আমি গিয়ে এখানে রাজনৈতিক দলগুলোর হাতে তুলে দিচ্ছি। তো, এই যে পুরো কাজটা সরকার করেছে, তারা বুঝে করেছে নাকি না বুঝে করেছে, এটা আমি বলতে পারবো না। তবে অবশ্যই জনগণের যে শক্তি, জনগণের যে অভ্যুত্থানটা, তার প্রতি সরকার যথেষ্ট পরিমাণে সম্মান দেখাতে পারেনি, এই পুরো কার্যক্রমের মধ্যে দিয়ে, এটা আমি মনে করি। এবং ঐকমত্য কমিশনের মধ্যে দিয়েও যদি এরকম হতো; সরকার এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্তে এখনো পর্যন্ত আসতে পারেনি; ঐকমত্য কমিশনে যে বিলগুলো পাস হবে না, সে ধরনের সংশোধনীগুলো গণভোটে চলে যাবে এবং গণভোটে জনগণ রায় দেবে যে, কোনগুলো সংবিধান ইনক্লুডেড হবে আর কোনগুলো সংবিধানে ইনক্লুডেড হবে না। এই ধরনের কোনো ডিসিশনেও এখনো পর্যন্ত সরকার আসতে পারেনি। তার মানে যত ধরনের পথ জনগণকে ইনক্লুড করার জন্য ছিল, প্রত্যেকটা পথ আস্তে আস্তে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা যে বলছি, সরকার কি শুধুমাত্র একটা পলিটিক্যাল পার্টির কথা শুনছে বা সরকার কি এদেরকে ফেভার করছে? সরকার কি অমুককে ফেভার করছে? আরেকটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা, সরকার মবের হাতে দেশ তুলে দিয়েছে কি না? সরকার তো এখানে নানান ধরনের জটিলতা তৈরি করেছে, ইটস বিকজ, সরকার জনগণের যে পাওয়ার, জনগণের যে উইল, সেটাকে রিডই করতে পারে প্রপারলি।
সরকার কিছু গৎবাঁধা পদ্ধতি এখানে অবলম্বন করার চেষ্টা করেছে যে, একই পদ্ধতি ২০০৬-৭-এর যে ১/১১-এর সরকার ছিল, সে সময়েরই ফলো করা হয়েছে। তখনও সংস্কার কমিশন হয়েছে, লম্বা লম্বা রিপোর্ট হয়েছে, রিপোর্ট হওয়ার পর ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে একদম ১৫তম সংশোধনী করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার-ব্যবস্থাই বাতিল করে দিল।
সো, হোয়াটস দ্য রেজাল্ট? আমরা যদি একই দিকেই পৌঁছাই, এতগুলো মানুষ মারা যাওয়ার পরে? তার মানে তো সরকার পুরো ফ্রেমওয়ার্কটা রিডই করতে পারেনি প্রপারলি। আপনি যদি আমাকে স্পেসিফিক্যালি জিজ্ঞেস করেন যে, উমামা কেন এই ঘটনাটা ঘটলো? তাহলে আমি যেটা বলবো, সরকার আসলে তাদের দরজাগুলো বন্ধ করে দিয়েছিল আস্তে আস্তে। পাঁচ আগস্টের পরে অনেক ভালো সলিউশন এসেছিল, যেমন, প্রত্যেক উপদেষ্টা… যিনি ওখানে নিয়োগ পেয়েছেন… আমি একটা উদাহরণ দিতে পারি, যেমন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা, স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা নিয়ে উনার এক্সপার্টাইজ নেই। স্বাস্থ্য উপদেষ্টার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্রণালয়। কারণ, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা বাংলাদেশের সবথেকে লুক্রেটিভ বিজনেস গুলোর একটা। এখন স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা নিয়ে যদি কাজ করতে হয় এবং উপদেষ্টা যদি যথেষ্ট পরিমাণে ক্যাপেবল না হন, তাহলে এখানে কাজটা কী? যেহেতু একটা বিশাল অংশের মানুষ এই অভ্যুত্থানে পার্টিসিপেট করেছিল, উপদেষ্টাদের আন্ডারে এখানে একটা পরামর্শক কমিটি করা যেতো। এখানে ছাত্রও থাকতে পারতো, বিভিন্ন ধরনের পরামর্শক টিমগুলো থাকতে পারতো, বিভিন্ন মতপথের মানুষগুলো এখানে একত্রিত হতে পারতো। তাহলে যেটা হতো, সরকারের মধ্যে পলিটিক্যাল পার্টি ছাড়াও পরামর্শ দেওয়ার জন্য আরো অনেক মানুষ সরকার এখানে ইনক্লুড করতে পারতো। ফলশ্রুতিতে কী হতো? এখানে সরকার যেমন আমলাতন্ত্রের বাইরে গিয়েও তার পরামর্শ গ্রহণ করার জন্য এক ধরনের একটা কেবিনেট থাকতো, প্রত্যেকটা উপদেষ্টার আন্ডারে একটা কেবিনেট থাকতো। আবার পলিটিক্যাল পার্টিগুলোর সাথেও সরকার তখন একটা বার্গেনিংয়ের জায়গায় যেতে পারতো যে, হ্যাঁ, আমি তো ওই কমিটির সাথে কথা বলেছি, তারা তো আমাকে একটা সাজেশন করছে। কিন্তু ৫ আগস্টের পরে সরকার কী করেছে? যারা যারা সরকারকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছে, এটা বলবো সিভিল বডিগুলোর পক্ষ থেকে বা দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের প্লাটফর্মগুলোর পক্ষ থেকে বা সাধারণ ছাত্র-নাগরিকদের পক্ষ থেকেও। সেই প্রত্যেকটা ডোর আস্তে আস্তে সরকার ক্লোজ করে দিয়েছে। এবং যারাই সরকার নিয়ে কথা বলছে, যারাই রাস্তায় আন্দোলন করেছে, তাদেরকে এক ধরনের একটা শত্রুভাবাপন্নতার মধ্যে নিয়ে যাওয়া… ও আমার এগেইনেস্টে কথা বলছে, তাহলে সম্ভবত সে নানাভাবে আওয়ামী লীগের সাথে এফিলিয়েটেড ছিল। এই ধরনের ন্যারেটিভ সরকারের পক্ষ থেকে অনেক সময়ই জেনারেট করার চেষ্টা করা হয়েছে। বা ১৫ বছর তো চুপ ছিলো, এখন এসে এতো কথা বলছে কেন? ও বলবে না কেন? মানে এই যে, এই যে সরকার জনগণকে একটা এন্টাই জায়গায় নিয়ে গেছে, এবং জনগণকে যে এক ধরনের একটা দূরত্ব অনুভব করিয়েছে, এটার ফলে বর্তমানে এসে সরকারের যে পাওয়ার, সেটা আস্তে আস্তে নানাভাবে রাজনৈতিক দলের হাতে পুঞ্জিভূত হয়ে যাচ্ছে। এটা হচ্ছে আমার পার্টিকুলারলি, পুরো বিষয়টা নিয়ে অবজারভেশন, আর কি।
বীথি: আচ্ছা, আপনার কাছে এবার আমি জানতে চাই যে, জেনজি নিয়ে অনেক কথা শোনা যায়; বলা হয় যে, জেনজি অনেক প্রগতিশীল, অনেক মুক্তমনা, অনেক উদার, অনেক সহনশীল, অনেক শ্রদ্ধাশীল সকল মত-পথ বর্ণের মানুষের প্রতি। তারা বহুত্ববাদী একটা রাষ্ট্র কায়েম করতে চায়। এ ধরনের কথাবার্তা আমরা শুনেছি। কিন্তু এখন এই পর্যায়ে এসে আমরা দেখলাম যে, তরুণ নেতৃত্ব তৈরি হচ্ছে, নতুন একটা রাজনৈতিক দলও গঠিত হলো, সেখান থেকে কতটা মনে করেন যে, তরুণ রাজনৈতিক নেতৃত্ব তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বা এখন যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা আসলে কতখানি জনস্বার্থের বিষয়টা দেখে নেতৃত্বের জায়গাটায় যাচ্ছে?
উমামা: এটা সম্ভবত ৫ আগস্ট পরে তৈরি হওয়া একটা খুবই জনপ্রিয় পাবলিক ন্যারেটিভ যে, জেনজি ইজ গোইং টু সেভ দ্যা কান্ট্রি— এরকম একটা জায়গায়… এই জেনজিরাই বাংলাদেশ চেঞ্জ করবে। ইটস ইম্পর্টেন্ট, হ্যাঁ, জেনজি রা বা আমরা ছাত্ররা এখানে রাস্তায় নেমেছিলাম। তবে একটা জায়গা তো এখানে দেখতে হবে যে, ৫ আগস্টের আগে, এই যে ছাত্ররা, আমাদের একটা বড় অংশেরই কোনো ধরনের রাজনীতির সাথে সম্পর্ক সম্পর্ক ছিল না এবং রাজনীতি কীভাবে ফাংশন করে কীভাবে সরকার ফাংশন করে এই পুরো ব্যবস্থা সম্পর্কে আমাদের কোনো ধরনের আইডিয়া ছিল না। হয়তো আমি ডিল করতে করতে অনেক কিছু শিখেছি, অনেক ছাত্র ডিল করতে করতে অনেকগুলো এসপেক্টকে ঝতে শিখেছে। যেহেতু এজ এ হোল ১৭ বছর বাংলাদেশে ওই ধরনের কোনো রাজনৈতিক চর্চা ছিল না, তার কারণে আকাঙ্ক্ষা থাকলেও সেগুলোর রাজনৈতিক রূপায়ন আমরা এখনো পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছি না। এখন জেনজি কারা? মাদ্রাসার ছাত্র জেনজি না? সেও তো জেনজি। যে যাত্রাবাড়িতে, শনির আখাড়াতে যুদ্ধ করেছে, ৫ আগস্ট পুলিশের সাথে ফাইট করে মারা গেছে, সেও তো জেনজি। এই যে জেনজিরও যে একটা রূপায়ন, জেনজি বলতেই ঢাকার একটা আরবান ইংলিশ মিডিয়াম থেকে পড়ে আসছে, একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করে, ওকেই আমি জেনজি হিসেবে ধরবো, আর বাকি যে গ্রামে-মফস্বলে যে ছেলেটা আছে, তাকে তো আমি জেনজির কাতারে ফেলছি না। কিন্তু আপনি দেখেন, এই দুই জেনজি সমস্যা কিন্তু এক না। ঢাকার আরবান যে জেনজি, তার… এটা নিয়ে একচুয়ালি আমি একটা বইয়ের রেফারেন্সই দিতে পারি। খুব আমার খুবই ভালো লেগেছিলো বইটা। ইউপিএল থেকে বের হয়েছিল— মিলেনিয়াল জেনারেশন অফ বাংলাদেশ, কাজুও মিনামিডের একটা বই, আমি আমি পড়ে খুবই ইনসাইট পেয়েছিলাম। তো, উনি ওই বইটাতে দেখাচ্ছিলেন, আর কি যে, একই জেনারেশনের আমার একটা কমন অভিজ্ঞতা হচ্ছে, জুলাই আর আগস্টের গণভূত্থান… আমার সংকটগুলো কিন্তু এক না। ঢাকার যে আরবান, সে চাচ্ছে একটা হয়তোবা বেটার রোড, সে হয়তো একটু বেটার হায়ার এডুকেশনের সুযোগ চাচ্ছে। তারপর সে একটু বেটার গভর্নেন্স আছে, এই ধরনের আরো কিছু বিষয় আছে বা সরকার একটু উদার থাকুক সেগুলো তাদের এক ধরনের চাহিদার মধ্যে আছে।
কিন্তু আপনি আবার মাদ্রাসার মধ্যে যানম, মাদ্রাসার স্টুডেন্টদের একটা বড় সংকটের জায়গা কি হয়? তাদের যে কারিকুলাম, এখানে, ইভেন আলিয়া মাদ্রাসাগুলো বা কওমি মাদ্রাসাগুলো সেই কারিকুলামগুলো সরকার দ্বারা প্রপারলি স্বীকৃত হয় না এবং কওমি মাদ্রাসা থেকে যে লাখ লাখ স্টুডেন্ট, তারা যে পাশ করে বের হয়, তাদের কিন্তু কোনো ধরনের ফ্যাসিলিটিস বাংলাদেশে নেই। এবং অপ্রতিষ্ঠানিক যে জব, সেগুলো তাদেরকে করতে হয়।
একই জিনিস আলিয়া মাদ্রাসাতে দেখেন, আলিয়া মাদ্রাসা থেকে খুবই ভালো ভালো স্টুডেন্ট পড়াশোনা করে বের হয়। বুয়েটে পড়ে, ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। কিন্তু এটা কত শতাংশ স্টুডেন্ট? খুব বেশি না কিন্তু। ওখানকার বেশিরভাগ স্টুডেন্টকে দেখা যায় যে, পরবর্তী সময়ে তাদের এক ধরনের জব ক্রাইসিসের মধ্যে পড়তে হয়। বা তাদের একটা সোশ্যাল… মানে, মাদ্রাসা কেন্দ্রিক বা এই কেন্দ্রিক একটা জব সিস্টেমের মধ্যে ঢুকে যেতে হচ্ছে।
সো, এই যে ক্রাইসিসগুলো সবার আসলে একরকম না। আবার আপনি মফস্বলে যান, ওই ছেলেটার ক্রাইসিস কিন্তু একেবারেই ভিন্ন। তার ওখানে একটা ভালো ল্যাব নাই। সেখানে যে কেমিস্ট্রি পড়বে, কেমিস্ট্রির ভালো ল্যাব নাই। তারপর তাকে পড়ানোর জন্য একজন ভালো টিচার সেখানে নাই। তারপর দেখা যাচ্ছে, তার লাইফ গোলটা কী হবে, সেটার জন্য প্রপার কোনো গভর্নেন্স বা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ট্রেনিং তাদের জন্য নেই। এই ছেলেগুলোর একটা বড় অংশ, তারা মিডলইস্টে চলে যাচ্ছে। তারা দেখা যাচ্ছে, কুয়েতে, আরব আমিরাতে পড়াশোনা করতে চলে যায়। এবং বেশিরভাগ অংশ ঝরে পড়ে বা ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি পর্যন্ত আসে। হয় ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি পর্যন্ত আসে, না হয় তাদেরকে বিদেশ চলে যেতে হয়। এই যে একই জেনজির সংকটগুলো ভিন্ন ভিন্ন। এই যে সংকটগুলো ধরে কাজগুলো করার প্রয়োজনীয়তাটা আছে, সেই সংস্কারগুলোর আলাপটা আসবে কখন? আমি তার রূপায়নটা দেখবো কখন? যখন সরকার এই সংকটগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করবে, তখনই তো আমি জেনজি, আমি আমার ইউনিভার্সিটি নিয়ে কথা বলবো। তখনই তো একটা স্কুলের স্টুডেন্ট, সে তার স্কুলের সিস্টেমগুলো নিয়ে কথা বলবে। তাই না? এভাবেই তো… আসলে এটা তো একটা রেসিপ্রোকাল সিস্টেম। এখন সরকার একদম প্রথমে কী করেছে? সে সম্পূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে এখনো পর্যন্ত চুপ মেরে আছে। লিটারেলি সে কোনো ধরনের শিক্ষা সংস্থার কমিশন গঠন করেনি।
তো, আপনি যদি শিক্ষা সংস্থার কমিশন গঠন না করেন, তাহলে আপনি এত এত যে সমস্যা, স্টুডেন্টদেরকে ফেস করতে হয় ডেইলি বেসিসে, সেগুলো আপনি এড্রেস করবেন কীভাবে?
বীথি: পাঠ্যপুস্তক সংশোধন বা সংস্কার একটা কমিটি ছিল…। আচ্ছা, আমার কাছে মনে হয় একজন সংবাদকর্মী হিসেবে, আমার যে পর্যবেক্ষণ, সেটা হচ্ছে, জুলাইয়ে যেভাবে আমরা দেখেছি যে, মাদ্রাসা ছাত্র এবং ঢাকার নাগরিক এবং শহরের পরিবেশে বেড়ে ওঠা একজন জেনজি। তারা প্রত্যেকে যেভাবে নারী-পুরুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্দোলন করলো, একজন আরেকজনকে প্রটেক্ট করলো, একজন আরেকজনের ভালো-মন্দ দেখভাল করলো। এটা জুলাই আন্দোলন-পরবর্তী বাস্তবতা, একদম কিন্তু ভিন্ন। এবং আমরা দেখলাম নারীদেরকে… আপনি নিজেও সেই স্মিয়ার ক্যাম্পেইনিংয়ের সাবজেক্টেড হয়েছেন। সেখান থেকে জানতে চাই যে, কী এমন ঘটলো, আন্দোলনের সময় কীভাবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্দোলন হলো এবং আন্দোলন-পরবর্তী সময় নারীদেরকে কেন এভাবে আবার… নারী, তোমাদের কাজ শেষ, তোমরা ঘরে ফিরে যাও— এই ধরনের একটা ইন্টারপ্রিটেশন মানুষের ভেতরে দেখা গেল, ঠিক কেন?
উমামা: সবার উপরে এক ধরনের নির্বিচারে নির্যাতন-নিপীড়ন এখানে হয়েছে। তবে ৫ আগস্টের পরের প্রশ্নটা কিন্তু সম্পূর্ণ সরকার এবং সরকারের সাথে জড়িত যে ক্ষমতা কাঠামো, সেগুলোতে কে কতটুকু স্পেস করে নিতে পারছে, সেই প্রশ্নটা। এবং সেখানে আমরা দেখেছি যে, নারীরা যে স্মিয়ার ক্যাম্পেইনের শিকার হয়েছে, এজ এ হোল, প্রাথমিক দিকে এটা ছিল কিন্তু আওয়ামী লীগ দ্বারা। আমি একদম বলব যে, আওয়ামী লীগ এবং তাদের যে বট ফোর্সেসগুলো আছে, তারা আগস্ট মাসে মেয়েদেরকে টার্গেট করে সেখানে নানাভাবে বুলিং করতে থাকে। সোসাইটির মধ্যে তো এই ধরনের নারী-বিদ্বেষী উপাদান আছে।
দেখা যাচ্ছে, তারা হয়তো নারী রাজনীতিতে আসুক বা নারী খুব একটা ভোকাল হোক, এটা দেখা যাচ্ছে অনেক গোষ্ঠী আছে, রাজনৈতিক গোষ্ঠী আছে, তারা এটা চায় না। যখন দেখা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগ নারীদেরকে টার্গেট করছে, তখন কিন্তু ওই নারীদের পাশে এসে কোনো রাজনৈতিক গোষ্ঠী দাঁড়াচ্ছে না। এমনকি সরকারও কিন্তু নারীদের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছে না। আপনি যেমন জিজ্ঞেস করলেন, আমি কী কথা আসলে সরকারের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি।
আমি একটা কথা সবসময় বলব, ৫ আগস্টের পরে মেয়েদেরকে যেভাবে করে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হতে হয়েছে, যে পরিমাণ হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে, এই কথাটা আমি মনে হয় প্রচুর উপদেষ্টা বলি, প্রধান উপদেষ্টা বলি, প্রত্যেকের কাছে এই মেসেজগুলো পাঠিয়েছিলাম। প্রত্যেকের কাছে আমি এটা বলেছি যে, আপনারা তো সমস্যা হিসেবে এটাকে এড্রেস করেন। এ যে নারীরা ৫ আগস্ট পর্যন্ত এতটা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বের হয়ে এসেছে, সেই নারীদেরকে যদি আপনাদের ধরে রাখতে হয়, তাহলে সরকারের পক্ষ থেকে স্পেসটা করে দিতে হবে। অন্য কেউ স্পেসটা দেবে না। সরকার সেটা করেনি। সরকার ওই সমস্যাগুলোকে এড্রেসই করেনি। এখনো পর্যন্ত আমি দেখিনি যে, সরকার কোনো প্রেস ব্রিফিংয়ে কখনো বলেছে যে, সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছে আমাদের মেয়েরা, আমরা সেটা নিয়ে একটা প্রপার ব্যবস্থা গ্রহণ করবো বা সেটার এগেইনস্টে আমরা একটা ক্যাম্পেইন করবো। সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের কোনো উদ্যোগ, মিনিমাম একটা সাড়া-শব্দ পর্যন্ত আমরা দেখিনি। অপরদিকে আমাদের যে পলিটিক্যাল অর্গানাইজেশনগুলো, পলিটিক্যাল অর্গানাইজেশনগুলা তো প্রচণ্ড পুরুষতান্ত্রিক একটা রাজনৈতিক কাঠামোর মধ্যে বসবাস করে। ফলশ্রুতিতে যেটা হয়, যে নারীরা এখানে রাজনীতিতে এন্টার করতে চায়, সে পুরোপুরি নারীদেরকে কিছু পিক এন্ড চুজ… এবং দেখা যাচ্ছে জাস্ট কিছু নারীদেরকে সিম্বোলাইজ করে তাদেরকে পিক করে সকল নারীদের প্রতিনিধি হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করে। এবং সেই নারীকে দেখা যাচ্ছে, সে যখন রাজনীতি এন্টার করতে যাচ্ছে, তাকে যত ধরনের বাধা বিপত্তি হোক, যত ধরনের নোংরামি বা হেনস্থার শিকারই হতে হোক না কেন, এই নোংরামিগুলোকে নানাভাবে পলিটিক্যাল পার্টিগুলো জাস্টিফাই করে ফেলে।
যেমন, আমি বিএনপি করছি, অন্য একটা পলিটিক্যাল পার্টি আমার নামে আজেবাজে কথা ছড়াতে পারবে। আবার আরেকজন এনসিপি করে, ফিমেল হওয়ার কারণে তার নামে যা তা কথাবার্তা ছড়াতে পারে। এটা তো হচ্ছে, এজ এ হোল পলিটিক্যাল পার্টিগুলোর সিচুয়েশন। যেটা রাজনৈতিক কাঠামোটা পরিবর্তন না হওয়ার কারণে নারীদেরকে এই সিচুয়েশনটা ফেস করতে হচ্ছে এখনো পর্যন্ত। যেটা আগে ছিল, কিন্তু নারীরা যেহেতু এতটা ভোকাল ছিল না তাই আমাদের চোখে পড়েনি, যে ঘটনাগুলো আসলে এতটা ওয়াইডলি ঘটে। আমার অবজারভেশন হচ্ছে এই যে, সাধারণ নারীরা কিন্তু দূরে সরে যাওয়ার একটা বড় কারণ ছিল গণহারে সাইবার বুলিং এবং রাস্তাঘাটে যে মেয়েদেরকে হেনস্থা করা হয়েছে, সেই হেনস্থাগুলোর কোনো ধরনের বিহীত এখানে হয়নি। ধরেন, ৫ আগস্টের পরে ইভটিজিং প্রচুর বেড়ে গিয়েছিল। ঢাকা শহরে একটা মেয়ে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে, হুট করে তাকে জামাকাপড় নিয়ে একটা মন্তব্য করে দিল। তো, এই জায়গাগুলো তো আসলে দেখভাল করার দায়িত্ব মূলত, আমি মনে করি, সরকারের। সরকার যদি এগুলোকে এজ এ সমস্যা, এড্রেস না করে, তাহলে সোসাইটির মধ্যে ওই কনসার্নটা যে, আমার সরকার আমাকে নিয়ে ভাবছে। একজন নারী ওই সাহসটা আসলে করে উঠতে পারে না, যতই বলি না কেন। এবং যেহেতু সরকারের পক্ষ থেকে এক ধরনের একটা নীরবতা আমরা দেখেছি, এটার কারণে আমি মনে করি যে, বেশিরভাগ মেয়েই এখান থেকে নিজেদেরকে সরিয়ে নিয়েছে। যেমন উদাহরণ একটা দিতে পারি, গত মার্চ মাসে অর্ণবের ঘটনাটা, একজন নারীকে সে একটা ওড়না নিয়ে মন্তব্য করলো। অর্ণব লোকটা, উনি তো ঢাকা ইউনিভার্সিটি একজন স্টাফ। এবং যে মেয়েটাকে নিয়ে সে মন্তব্য করে সে মেয়েটা ঢাকা ইউনিভার্সিটি একজন শিক্ষার্থী। তার মানে, আমরা পুরো জিনিসটাকে ঢাকা ইউনিভার্সিটির ইন্টার্নাল একটা আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হিসেবেই দেখছি। আমরা প্রক্টরের অফিসে গিয়ে প্রক্টরের সাথে কথা বলেছি, তাকে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছি। প্রক্টর আমাদেরকে বলছেন যে, ওকে, তাহলে তাকে এই মুহূর্তের জন্য আপনারা শাহবাগ থানায় দেন। যদি তার কোনো এফিলিয়েশন থাকে, এই ধরনের কোনো সিন্ডিকেটের সাথে, যারা মেয়েদেরকে হেনস্তা করা… এ ধরনের অনেক সিন্ডিকেট থাকে, রাস্তাঘাটে মেয়েদেরকে হেনস্তা করা যাদের একটা হবি। আমরা বেসিক্যালি ওই জায়গাটা থেকে তাকে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করেছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে যেভাবে আমাদের উপর এবং আমাদের যে মেয়েটা প্রতিবাদটা করেছিল, সেই মেয়েটার উপর যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়া হয়েছে, আনবিলিভেবল। এবং এটার প্রতিক্রিয়া আমরা দেখছিলাম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। আমাদেরকে নানান ধরনের হুমকি-ধামকি, আজেবাজে কথা, আমাদের ফোন নাম্বার ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেটে। এবং নানাভাবে আমাদের কাছে টেক্সট মেসেজ আসছে, আজেবাজে মন্তব্য করা হচ্ছে।
বীথি: কেউ কখনো আপনার পাশে দাঁড়িয়েছে? উমামা ভেঙে পড়ো না, আমরা আছি বা আমরা এটাকে প্রতিহত করবো বা যেন এরকম আর না হয় সে ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবো— এরকম কোনো কিছু কখনো বলেছে?
উমামা: না না, একদমই না। আমি তো কখনো একটা টেক্সট মেসেজও পাইনি যে, উই আর উইথ ইউ টাইপের কিছু। ফিমেলরা করে। ফরচুনেটলি, আমার খুব ভাল লাগে যে, মেয়েরা…আমি তো সুফিয়া কামাল হলে থাকি। আমার হলের যে মেয়েরা, তারা দেখা যাচ্ছে, ফিলটে দেখা হচ্ছে, সিঁড়িতে দেখা হচ্ছে, তারা বলে যে, তুমি যে এত কষ্ট করে, এত কিছু টলারেট করে এই জায়গায় আছো, আমার তোমাকে দেখে অনেক ভাল লাগে। এটা একটা ফর্ম, এইটা একটা ওয়ে অফ এটিচ্যুড— তুমি এক কিছুর শিকার হয়েও এই জায়গায় আছো। কিন্তু পুরুষরা, আমি দেখেছি, বেশির ভাগ সময় পুরুষরা, এটা যে একটা সমস্যা, এবং এটা যে নারীদেরকে একদমই ডিমোরালাইজ করে ফেলে, এই বিষয়টাকে রাজনৈতিক দলের যারা পুরুষরা আছেন, তারা সেটিকে এড্রেসই করতে চান না।
বীথি: আপনার কি কখনো মনে হয় যে আপনি প্রতারিত বোধ করছেন, যাদের সঙ্গে… আপনি নিশ্চয়ই তাদেরকে অনেক এডমায়ার করেন… আপনি নিশ্চয় দেখেন বা যখন আন্দোলনে একসঙ্গে ছিলেন, একসঙ্গে আপনারা অনেকদিন রাজপথে ছিলেন, তখন নিশ্চয়ই মনে করেননি যে, এ ধরনের পরিস্থিতি আসতে পারে এবং কেউ আপনার পাশে দাঁড়াবে না, তাই না? এখন যখন এসে অভিজ্ঞতাই হচ্ছে, তখন কী আপনার কখনো মনে হয় যে, আপনার কোনো সিদ্ধান্তে ভুল ছিল বা কাউকে আপনি বেশি বিশ্বাস করেছিলেন বা কোন আকাঙ্ক্ষা হয়তো আপনার মনে…
উমামা: এটা হচ্ছে বাস্তব কথা। কারণ ৫ আগস্টের আগে তো আমি জুলাই মাসে আন্দোলনের সাথে পুরোভাবে সম্পৃক্ত ছিলাম। তখনো কিন্তু এ ধরনের সিচুয়েশন আমাকে টুকটাক, মানে ইটস নট লাইক, বাট বুঝা যাচ্ছিল যে. ফিমেলরা এত বেশি ভোকাল হোক, ফিমেলরা লিডিং পজিশনে আসুক, সেটা আসলে এখানকার পুরুষ নেতৃত্ব, তারা তেমন একটা চাচ্ছিলো না। যার ফলাফল হিসেবে দেখা গেছে যে, ফিমেলরা আমরা মেয়েদেরকে আসলে হলগুলো থেকে নিয়ে আসছি, মেয়েদেরকে অর্গানাইজ করছি, নানা জেলা উপজেলায় কন্টাক্ট করে অর্গানাইজ করছি। কিন্তু যখন ডিসিশনটা নেওয়ার প্রয়োজন আসে, তখন নারীকে ওই স্পেসটা বা আমাদেরকে দেখা যাচ্ছে ওই স্পেসটা জুলাই থেকেই দিতে চাইতো না। বাট আমরা ক্রিয়েট করে নিয়েছিলাম। সময়ের প্রয়োজনে আমরা আমাদের রোলগুলো প্লে করেছি। তবে জুলাইয়ের পরে যখন, আগস্টের একদমই পরপর, যখন এখানে নানা ধরনের প্রোগ্রাম হচ্ছে, আমি এটেন্ড করতে যাচ্ছি… একবার একটা এরকম প্রতিবাদ সমাবেশে গিয়েছিলাম, বাট ওখানে গিয়ে আমার খুবই খারাপ অভিজ্ঞতা হয়। মানে কেউ গায়ে হাত দিচ্ছে বা এই ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছিল, সো আমার মনে হয় দশবার চিন্তা করতে হয়েছে যে, আসলেই এখানে কি নারীরা প্রটেক্টেড হবে কি না। নারীরা প্রটেক্টেড না বিধায় আমি ওখানে গিয়েছিলাম। আমি যেহেতু ছাত্র ফেডারেশন করে এসেছিলাম, তো ফেডারেশন করার কারণে আমার অভিজ্ঞতা কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল। আমার অভিজ্ঞতা, আমি যেহেতু বায়োকেমিস্ট্রিতে পড়েছি, আমার একটা ভালো একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড ছিল। আমি যে সাহস দেখিয়ে সবসময় সামনে আসতাম, আমি যে কথা বলতাম, এই জায়গাটাকে আমার ছাত্র সংগঠন সবসময় ভালোভাবে একনলেজ করেছিল এবং আমাকে সবসময় এজ এ লিডার হিসেবে ট্রিট করতো। নট লাইক আমি উমামা, একটা মেয়ে, এটা প্রধান হয়ে কখনো আসেনি। বরং আমি উমামা, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক অথবা সদস্য সচিব, এটাই দেখা যাচ্ছে একটা প্রধান সাবজেক্ট এবং আমি ওখানে এজ এ ব্যক্তি, অনেক বেশি রোল প্লে করার সুযোগ পেয়েছিলাম এবং আমাকে নেতৃত্ব হিসেবে স্টুডেন্টরা, আমার যারা সংগঠনের লোকজন আছে বা আমার আশপাশের লোকজন আছে সবাই কিন্তু আমাকে এজ এ নেতৃত্ব হিসেবেই তারা গ্রহণ করেছে। তবে ৫ আগস্টের পরে যেটা দেখেছি যে, সোসাইটির মধ্যে তো আসলে নারীকে নেতৃত্ব হিসেবে নেওয়ার যে মন-মানসিকতা সেটা এখনো পর্যন্ত তৈরি হয়নি। স্বাভাবিকভাবে আমি যখন আরো বড় স্পেসে আসছি তখন এখানে অনেক ধরনের পরিস্থিতি ডিল করতে হয়। আমি এত এক্সপেক্টেশন নিয়ে আসি নাই যে, আমাকে খুবই এক্সেপ্ট করা হবে এই ধরনের কোনো মন-মানসিকতা নিয়ে আমি আসিনি বরং আমি একটা ফাইট করবো এই এবং কথাগুলো বলে যাবো, এই মন-মানসিকতাটা আমার ছিল। আমি মনে করি না যে, আমি কোনো দিক থেকে প্রতারিত হয়েছি। তবে হ্যাঁ, সরকারের কাছ থেকে যে এক্সপেক্টেশনটা অবভিয়াসলি আমাদের ছিল এবং ছাত্ররা যেভাবে সরকারকে পুশ করবে, সংস্কার বলি বা দেশটা পরিবর্তনের দিকে পুশ করবে, এটা আমি যেভাবে এক্সপেক্ট করেছিলাম, ঘটনা ঠিক ওভাবে ঘটেনি এবং অনেকেই ব্যক্তিস্বার্থে এই কাজগুলো করতে চায়নি। মানে, আমি যদি এই পরিবর্তনের কথা বলি, তাহলে আমার কোনো একটা ব্যক্তিস্বার্থ এখানে ক্ষুণ্ণ হতে পারে। সো, এটা যেকোনো সংস্কারের ক্ষেত্রে আমি দেখেছি, এটা গণমাধ্যম সংস্কারের ক্ষেত্রেও দেখেছি, পুলিশের ক্ষেত্রেও দেখেছি, আওয়ামী লীগের বিচারের ক্ষেত্রে দেখেছি বা আমলাতন্ত্রের সংস্কারের ক্ষেত্রেও দেখেছি। অনেকেই আছেন, ইনক্লুডিং পলিটিক্যাল পার্টি, ইনক্লুডিং ছাত্র, যাদের ব্যক্তিগত সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার যে সুযোগটা তারা পাচ্ছে, ওইটা অনেকখানি নষ্ট হয়ে যেতে পারে বিধায় তারা আসলে অনেক কথা বলেননি। সো, এটাও কিছুটা পরিবেশটাকে হ্যাম্পার করেছে, আরকি। এই সংস্কারের পরিবেশটাকে নষ্ট করেছে।
বীথি: আচ্ছা। আন্দোলনের পরে আপনি কোনো কমিটিতে যাননি, এমনকি এনসিপিতেও আপনি যাননি। আপনি বরং আন্দোলনের ব্যানার নিয়ে থাকতে চেয়েছিলেন। পরবর্তীতে সেখান থেকেও দেখলাম আপনি চলে আসলেন। আপনার কি নিজস্ব কোনো রাজনৈতিক অভিলাষ আছে কি না যে, আপনি নিজেই একটা পলিটিক্যাল পার্টি খুলতে চান বা আপনি আবারো ফেডারেশনে গিয়ে ছাত্র ফেডারেশনের সঙ্গে রাজনীতি করতে চান বা সেক্ষেত্রে আপনার ছাত্রত্ব শেষ হয়ে গেলে আপনি সেখান থেকে বের হয়ে যাবেন। আপনার আসলে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি, রাজনৈতিক ক্যারিয়ার হিসেবে কী দেখছেন?
উমামা: যেহেতু আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমি এসেছি, মানে আমার নিজের ক্যাম্পাসে ফেরত এসেছি। এতদিন যেভাবে ন্যাশনাল লেভেলে চিন্তা করতাম, এখন কিছুটা সেটা রিডিউস করে আমি ক্যাম্পাস এবং আহত শহীদ পরিবার, এগুলোর উপর আমি কিছুটা ফোকাস করছি। আর ভবিষ্যৎ অভিলাষের কথা যদি বলি, রাজনীতি তো আমি আগেও করতাম, রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে আমি আগেও এফিলিয়েটেড ছিলাম এবং শেখ হাসিনা পতনের আগেও আমার এই ধরনের প্ল্যানই ছিল যে, আমরা তো আসলে ফাইট করে যাওয়ার মানুষ এবং যে কোনো ধরনের প্রতিকূল পরিবেশে আমরা কথাটা বলে যাওয়া, জনগণের রিপ্রেজেন্টেশনটা যাতে পরিষ্কারভাবে থাকে, সেগুলো নিশ্চিত করা আসলে আমাদের দায়িত্ব। আমি এই রোলটা প্লে করে যেতে চাই, যেকোনো সময় যেকোনো মুহূর্তে হোক, যাতে আমি কথাগুলো বলে যেতে পারি এবং জনগণের রিপ্রেজেন্টেশনটা যাতে আমি পরিষ্কার করতে পারি। তবে হ্যাঁ, পলিটিক্যাল অর্গানাইজেশন করা বা পলিটিকসে একটিভ হওয়া, এই ব্যাপারে আমি অবশ্যই পজিটিভ, আজকে হোক, কালকে হোক, আমি অবশ্যই হবো।
বীথি: নিশ্চয়ই আপনার যারা দর্শক রয়েছেন বা আপনাকে যারা পছন্দ করেন, আপনাকে যারা প্রশংসা করেন, তারা নিশ্চয়ই খুশি হবেন। আমি একটু জানতে চাই যে, আপনি যেহেতু বললেন যে. আপনি রাজনৈতিক দল করবেন; আপনার কি এই মুহূর্তে মনে হয় যে, কোনো রাজনৈতিক নেতা, যার প্রতি ভরসা করা যায় বা যার প্রতি আস্থা রাখা যায়…
উমামা: না, আই উড নট নেম এনিওয়ান, আমি অনেককেই পছন্দ করি ব্যক্তিগতভাবে, যাদেরকে আমি ফলো করি, যাদের পরামর্শ আমি নিই। কিন্তু আই উড নট নেম…
বীথি: আমার প্রশ্নটা হচ্ছে, কাউকে কি আপনি রোল মডেল হিসেবে দেখেন কি না বা আইডল হিসেবে দেখেন কি না?
উমামা: বাংলাদেশের রাজনীতিতে যদি আপনি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, অবশ্যই মাওলানা ভাসানীকে আমি প্রচুর শ্রদ্ধা করি। ভাষানীর যে রাজনীতিক আবরিংগিং, তার যে একটা জার্নি এবং খুবই দৃঢ় একজন অকুণ্ঠচিত্ত মানুষ ছিলেন। আমি উনার বিষয়ে অনেক পড়াশোনা করেছিলাম এবং আমি যখন ছাত্র ফেডারেশন করতাম, ছাত্র ফেডারেশনের মওলানা ভাসানীর যে রাজনৈতিক ধারা, সে ধারাটাকে ওই সময় জনপ্রিয় করার চেষ্টা তারা করছিল। কারণ, অভবিয়াসলি যেহেতু শেখ মুজিবুর রহমান এন্ড অনলি শেখ মুজিবুর রহমান ওয়াজ অনলি দা সিম্বল এট দ্যাট মোমেন্ট, তখন আমরা ছাত্র ফেডারেশনের পক্ষ থেকে মওলানা ভাসানীর যে রাজনৈতিক ইডিওলজি, তার যে পুরো পঞ্চাশের দশক, ষাটের দশকজুড়ে তিনি যে সংগ্রাম করে গেছেন, সেটাই আমরা তুলে ধরার চেষ্টা করছিলাম। আমার এখনো পর্যন্ত এটাই মতামত যে, ভাসানী যেভাবে জনগণের কাছে যেতে পেরেছেন, যেভাবে জনগণের ভয়েস তিনি হয়ে উঠতে পেরেছিলেন, সেটা কোনো নেতার পক্ষে কখনোই সম্ভব হয়নি, সো, আমি অবশ্যই বলবো যে, এই বাংলাদেশের বাঙালি জাতীয়তাবাদের ধারার যত রাজনীতিবিদ এ পর্যন্ত এসেছেন, মওলানা ভাসানীর মত সৎ এবং তার মত করে জনগণকে আত্মিকভাবে অনুভব করতে পারার মত নেতা এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশে আসেননি।
বীথি: আপনার কি মনে হয় যে, ক্ষমতার বাইরে যখন মানুষ থাকে এবং ক্ষমতার ভেতরে যখন চলে যায়, তখন তাদের মধ্যে বেসিক কোনো পার্থক্য তৈরি হয় কি না। এবং সেই প্রসঙ্গে জানতে চাইবো যদি কখনো আপনি ক্ষমতার অংশ হন, তখন কি আজকের ক্ষমতার বাইরের উমামা এবং ক্ষমতার ভেতরের উমামার মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকবে?
উমামা: ক্ষমতার প্রশ্নটা তো আসলে দিন শেষে ব্যক্তি না, আমি নিজে অনেকবার এই কথাগুলো বলেছি যে, ক্ষমতা এমন একটা জিনিস, সেটা আসলে একটা বিশাল সুপার স্ট্রাকচার এবং ব্যক্তি সেখানে একটা শুধুমাত্র সিম্বল। ইভেন শেখ হাসিনা অ্যান্ড আওয়ামী লীগ যেটা করতে পেরেছিল, সেটা হচ্ছে, পুরো স্ট্রাকচার, এই যে আমলতান্ত্রিক ব্যবস্থা, এখানকার যে ইনস্টিটিউশনগুলো তারা আগে থেকেই এক ধরনের দলীয় নিয়োগ এবং দলীয় লেজুড়বৃত্তির একটা প্রভাব প্রত্যেকটা ইনস্টিটিউশনের মধ্যে থাকতো। আওয়ামীলীগ এবং শেখ হাসিনা যেটা করেছিল, প্রত্যেকটা ইনস্টিটিউশন, এই কাঠামোগুলোকে খুবই দুর্দান্তভাবে তারা ব্যবহার করে গেছে। এবং ভয়ঙ্করভাবে তারা ব্যবহার করে পুরো কাঠামোটাকে একটা ফ্যাসিবাদী কাঠামোতে রূপান্তরিত করেছিল। বাট এজ এ হোল, এই ক্ষমতা কাঠামোটাই তো ফ্যাসিস্ট। এটা তো ফ্যাসিস্টেরই জন্ম দেয়। আমরা ছাত্র ফেডারেশন যখন করতাম, তখন এই কথাটা বলেছি যে, বর্তমান ক্ষমতা কাঠামো যদি পরিবর্তন করা না যায়, আপনি যদি একটা ফেরেশতাকেও এখানে প্রধানমন্ত্রী করে দেন, কোনো লাভ হবে না। বরং কোশ্চেনটা আসলে এই কাঠামোটাকে করতে হবে এবং যদি জিজ্ঞেস করেন যে, আমি যদি ক্ষমতায় যেতাম তাহলে আমার কী আকাঙ্ক্ষা থাকতো? এবং আমি ভেবেছি অনেকবার যে, আসলে আমি কী করতে চাই? তাহলে অবশ্যই আমি বলবো যে, এই কাঠামোটা আগের মত রেখে ক্ষমতাকে সার্ভ করে যাওয়া আমার পক্ষে খুবই কঠিন। কারণ, আমি যে স্বপ্নটা দেখি, বাংলাদেশে একটা আমূল পরিবর্তনের স্বপ্ন, সেটা এই বর্তমান কাঠামোর মধ্যে সম্ভব না। সো, অবভিয়াসলি আমি যদি ক্ষমতায় আসার চিন্তা করি, তাহলে এই রাজনৈতিক কাঠামোটা পরিবর্তন করে আমি ক্ষমতাতে আসবো। সেই ধরনের একটা প্রতিশ্রুতি দিয়েই আমি আসতাম। আর যদি আমাকে কেউ জিজ্ঞেস করে যে, স্পেসিফিক্যালি কোনো বিষয়ে আমার অভিলাষ আছে কি না? কোন জায়গাটা আমি পরিবর্তন করতে চাই? তো, আমি খুবই প্রয়োজন মনে করি, বাংলাদেশের যে বর্তমান শিক্ষা-ব্যবস্থা আছে এবং বাংলাদেশের যে স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা— এই দুইটা হচ্ছে দেশের একদমই কোর এবং সবথেকে উপেক্ষিত দুইটা সিস্টেম। খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু সবথেকে উপেক্ষিত সিস্টেম। এবং আমি যদি কোনোদিন ক্ষমতায় আসি, আমি বাংলাদেশের শিক্ষা-ব্যবস্থা এবং বাংলাদেশের যে বর্তমান পাবলিক হেলথ সিস্টেম, সেটার একদম আমূল পরিবর্তন করতে চাই। বাকিগুলোর হয়তো এখনো পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ আইডিয়া আমার নেই, ধারণা আছে, কিন্তু স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা নিয়ে আমার পড়াশোনা আছে, স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা, সিস্টেমটা নিয়ে আমার পড়াশোনা আছে। সো, আই নো ভেরি ক্লিয়ারলি যে, এইভাবে আসলে একটা দেশ চলতে পারে না। আরেকটা কথা, সেটা হচ্ছে, বাংলাদেশে রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট… এটা কেউ বলে না, আই ডোন্ট নো হোয়াই… মানে কেউ বলে না যে, বাংলাদেশের আসলে গবেষণা খাতে ইনভেস্টমেন্ট করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ বর্তমান সময়ে এসে। কারণ আপনি দেখেন, অলরেডি ইউএসএ তাদের ফান্ডিংগুলো বন্ধ করে দিচ্ছে ধীরে ধীরে এবং বাংলাদেশের টুকটাক গবেষণা কার্যক্রম চালাতো যে প্রতিষ্ঠানগুলো, সেই প্রতিষ্ঠানগুলোতে ফান্ড আসা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাদের প্রচুর গবেষক ছাঁটাই হচ্ছেন, চাকরি থাকছে না। আমরা দেখেছি যে, বায়োকেমিস্ট্রি, মাইক্রোবায়োলজি থেকে যেসব স্টুডেন্ট পড়াশোনা করে, খুবই ব্রাইট স্টুডেন্ট তারা। দেখা যায়, এতদিন স্কলারশিপ নিয়ে তারা ইউএসএ চলে যেতো বা ইউরোপিয়ান কোনো দেশে চলে যেতো। অলরেডি ফান্ডিং কাট হওয়ার কারণে এইসব জায়গায় ইনভেস্টমেন্ট কমে গেছে এবং স্কলারশিপ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। চাকরি কমে গেছে। সামনের দিনে আমরা যদি নিজস্ব স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা এবং যদি নিজস্ব গবেষণা কাঠামোটাকে ডেভেলপ করতে না পারি, তাহলে আমরা অনেক ভুক্তভোগী হবো। আমি এই কথাটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অনেকবার বলেছি যে, রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট নিয়ে তাদের ভাবা উচিত, স্টেম রিসার্চের উপর অবশ্যই ফোকাস করা উচিত এবং এখনো পর্যন্ত সরকার… অনেক মৌলিক সমস্যা হয়তো বাংলাদেশে আছে, যেগুলো আসলে ডিল করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু আমার তো একটা রোডম্যাপ ক্রিয়েট করতে হবে, আমি কি বাংলাদেশ আসলে ভবিষ্যতে চাই? কিন্তু সরকার যেটা করছে, সে কিন্তু রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট নিয়ে একদম টু শব্দ করছে না। কিন্তু আপনি রিসার্চ নিয়ে যদি না ভাবেন, আপনি যদি এই দেশের জনগণকে নিজের দেশের জন্য প্রস্তুত করতে না পারেন, তাহলে তো ভবিষ্যতে আমরা বর্তমান যে ব্রেইন ড্রেইন দিচ্ছি, সেটাই আমরা কন্টিনিউড হতে দেখবো। সো, আমি এই জায়গাগুলোতে খুবই ডিটারমাইন্ড। আই হ্যাভ এ ভেরি ক্লিয়ার আইডিয়া। বাংলাদেশের রিসার্চ সিস্টেম নিয়ে, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা এবং বাংলাদেশের শিক্ষা-ব্যবস্থা. এগুলো নিয়ে আমার যথেষ্ট ক্লিয়ার আইডিয়া আছে। এবং আমাকে যদি বলা হয় যে, আপনি কী চেঞ্জ করতে চান, আমি এই তিনটা সিস্টেম নিয়ে কাজ করতে চাই। এন্ড আই এম ভেরি কিড এবাউট ইট।
বীথি: আমি এবার আপনাকে একটু আলাদা প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করতে চাই। কারণ এই প্রশ্নটা আমি শুনেছি বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে। ঢাকায় আমরা দেখেছি মৈত্রী যাত্রা হয়েছে, নারীরা তাদের প্রতি হওয়া যে অন্যায়-অবিচার এবং যে ধরনের নোংরা মন্তব্য ছুঁড়ে দেওয়া হচ্ছিল, সেগুলোর প্রতিবাদে। সেখানে কেন আপনাকে দেখা যায়নি?
উমামা: দেখা যায়নি এটার প্রধান কারণ হচ্ছে, আমার ফ্যামিলি সিচুয়েশন… আমার আব্বা হসপিটালাইজ ছিলেন। উনার হচ্ছে লাংস ইনফেকশন ছিল। তো হসপিটালাইজ হওয়ার কারণে… ওই মুহূর্তে একটা সাইন্স ফেস্টের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে। যখন আমার আব্বা হসপিটালাইজ হয়ে যান, তখন আমাদের ফ্যামিলির কিছু ক্রাইসিস তৈরি হয়। তখন ইমিডিয়েটলি আমার চট্টগ্রাম যেতে হয়েছিল। এবং মৈত্রী যাত্রা যারা আয়োজন করেছিল তাদের সাথে আমার কথা হয়। তখন আমি বলেছিলাম যে, আমার আব্বা খুব অসুস্থ, আমার চট্টগ্রামে যেতে হবে। সো, এখানে কোনো ম্যাটার অফ কনফ্লিক্ট নেই। যেহেতু বিগত দশ এগারো মাস ধরেই আমরা মাঠে আছি, আমাদের যে একটা পরিবার আছে, এটা আমাদের মাঝে মাঝে মনে হয় না। বাট এটা হয় যে, আমাদেরও ফ্যামিলির ভিন্ন সিচুয়েশন থাকে, যেগুলো আমাদেরকে আসলে ডিল করে যেতে হয়। আমার আব্বার কারণে আমি ওই সময় পারিনি, এটা নিয়ে উনাদের সাথে আমার কথা হয়েছিল।
বীথি: ধন্যবাদ আপনাকে, উমামা ফাতেমা, আমাদের সঙ্গে সময় দেওয়ার জন্য। এবং আপনার যে মতামত, আপনার অভিজ্ঞতা, আপনার পর্যবেক্ষণগুলো আমাদের মাধ্যমে দর্শকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য।
উমামা: নেত্র নিউজকেও অসংখ্য ধন্যবাদ, আজকে আমাকে এখানে কথা বলার সুযোগ দেওয়ার জন্য। বিশেষ করে ধন্যবাদ জানাতে চাই, যেহেতু আমরা মেইন স্ট্রিম মিডিয়াতে সাধারণত যেটা দেখি, কোনো ইনডেপথ কথা তারা শুনতে চায় না। খুবই সারফেস লেভেলের আলাপগুলো এবং চটুল আলাপেই তারা ইন্টারেস্টেড থাকে। নেত্র নিউজের এই আলোচনায় একচ্যুয়ালি আমি মনে করি যে, অনেকগুলো ছোট ছোট সমস্যা, আমি এখানে দেখাতে পেরেছি বা রাষ্ট্র কী, কেন, সরকারের বিষয়ে অনেকগুলো ইন-ডেপথ আলাপ করতে পেরেছি। আপনারা যে এই ধারার সাংবাদিকতাটা চর্চা করছেন, সেটার জন্য আপনাদের অভিনন্দন জানাই। আশা করি যে, ভবিষ্যতে এই ধারাটা আমরা দেখতে পাবো।●