শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রগুলোতে আদতে কী ঘটে?

রাষ্ট্রের আইনি দায়বদ্ধতা ও রাষ্ট্র-পরিচালিত তিনটি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের ভেতরকার বাস্তবতার মধ্যে যে প্রকট তফাত রয়েছে, তা স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে নেত্র নিউজের অনুসন্ধানে। এসব কেন্দ্রে পুনর্বাসনের নামে এমন অসংখ্য শিশুকে বন্দী করে রাখা হয়, যাদের বিরুদ্ধে কোনো দণ্ডাদেশ নেই, এমনকি যথাযথ অভিযোগপত্রও নেই।

শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রগুলোতে আদতে কী ঘটে?
অলঙ্করণ: সুবিনয় মুস্তফী ইরন

ছেলেটার কনুইয়ের ভাঁজে একটা ক্ষতচিহ্ন, প্রায় শুকিয়ে গেছে, তারপরও জানান দেয় চামড়ার চাইতেও গভীর এক জখমের কথা। রাকিবুলের বয়স ১১। একটা লাজুক, রোগা ছেলে, যার চোখ দুটো ইতস্তত আর কপালের ওপর আছড়ে পড়ছে ব্লিচ-করা চুল; কাদামাটিতে লেপ্টে আছে আঙুলগুলো। ২০২৫ সালের ২৩শে মে, সে তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশনের রেল-লাইনের ওপর দিয়ে চুপচাপ হেঁটে যাচ্ছিল, আর ঠিক তখন অন্য বাচ্চাগুলো তাকে দেখিয়ে দিয়ে বললো, “ওইযে, যে ‘সেন্টারে’ থাকত।”

রাকিবুলের মনে আছে যে টঙ্গীতে ময়লা কুড়ানোর সময় ওকে পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। তখন তার বয়স ছিল দশ বছর। তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ছিল না। কোনো মামলা নেই, কাগজপত্র নেই, আদালতের নির্দেশ নেই, কিচ্ছু নেই। তারপরও হুট করে তাকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে এক বছরের জন্য টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে আটকে রাখা হয়। টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র হলো বাংলাদেশ রাষ্ট্র-পরিচালিত কিশোর পুনর্বাসনা কেন্দ্রগুলোর একটি।  

যখন তার কাছে জানতে চাওয়া হয় যে, ভেতরে সে কোনো নির্যাতনের শিকার হয়েছিল কি না, তখন সে চুপচাপ শুধু মাথা নাড়ছিল। প্রথমবার হয়েছিল ক্লাস চলাকালীন। শিক্ষকের কথা না শোনার কারণে তাকে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে বেত দিয়ে মারা হয়। দ্বিতীয়বার ছিল আরো ভয়াবহ।

“ওরা গরম খুন্তি দিয়ে আমার বাম হাত পুড়িয়ে দিয়েছিল,” সে জানায়। তার অপরাধ, গোসলের পানির জন্য লাইন ভেঙে সামনে চলে যাওয়া। সেখানে পানি এতটাই বিরল একটা জিনিস যে, সবার ভাগে ঠিকমত জোটে না। “মাঝে-মাঝে শুধু কল পর্যন্ত পৌঁছানোর জন্যই আমাদের মধ্যে মারামারি লেগে যেত।” 

রাকিবুলের গল্পটা মোটেই ব্যতিক্রম কিছু নয়, বরং তা আমাদের সামনে একটা ছোট জানালা হাজির করে যার মধ্য দিয়ে আমরা এমন একটা ব্যবস্থার ভেতরে উঁকি দিতে পারি যেখানে ছোট ছোট বাচ্চাদের কোনোপ্রকার দণ্ডাদেশ বা অভিযোগ ছাড়াই পুনর্বাসনের নাম করে আটকে রাখা হয়। বাংলাদেশ রাষ্ট্র-পরিচালিত তিনটি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে (সিডিসি) বাচ্চা ছেলে-মেয়েরা একদম মৌলিক চাহিদাগুলো থেকে বঞ্চিত হয়, নিয়মিত সহিংসতা ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়। সাক্ষাৎকার, নথিপত্র আর প্রত্যক্ষ বিবরণের মধ্য দিয়ে নেত্র নিউজের অনুসন্ধান উন্মোচন করেছে, এই দেয়ালগুলোর ভেতরে পুনর্বাসন স্রেফ একটা কাগুজে কথার কথা। যদিও ২০১৩ সালের শিশু আইন স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে যে, রাষ্ট্রীয় আশ্রয়ে থাকা প্রতিটি শিশুর জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টি, চিকিৎসা-সেবা, শিক্ষা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা বাধ্যতামূলক। নেত্র নিউজের অনুসন্ধানে স্পষ্টভাবে উঠে আসে, রাষ্ট্রের আইনি অঙ্গীকার ও এইসব কিশোর পুনর্বাসন কেন্দ্রগুলোর ভেতরকার বাস্তবতার মধ্যে কী ভয়াবহ তফাত রয়ে গেছে।

ন্যূনতম যত্ন প্রদানে ব্যর্থতা

২০২৫ সালের ১৫ই জুন, দুপুরের কড়া রোদে হাতকড়া দিয়ে শক্ত করে কব্জি বাঁধা অবস্থায় ১৩ কি ১৪ বছর বয়সী দুইজন কিশোরকে টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়। তাদের সঙ্গে ছিল দুইজন পুলিশ সদস্য।

“একটি শিশুকে এভাবে হাতকড়া পরানো তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে বন্দী করার শামিল। এটি স্পষ্টতই একপ্রকার নির্যাতন এবং শিশুর মানসিক বিকাশ ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর ভয়ানক প্রভাব ফেলতে পারে,” বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও সাবেক চেয়ারম্যান খন্দকার ফারজানা রহমান। 

খন্দকার ফারজানা রহমান এখন ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয় শিকাগোতে তার পিএইচডি করছেন। বাংলাদেশের শিশু আইন ২০১৩’র প্রসঙ্গ টেনে তিনি বিশেষ জোর দিয়ে বলেন যে, আইন স্পষ্টভাবে বলছে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বা কোনোপ্রকার তত্ত্বাবধায়ক প্রতিষ্ঠান কোনো শিশুর ওপর হাতকড়া, দড়ি কিংবা কোনো ধরনের শারীরিক বাঁধন প্রয়োগ করতে পারবে না। “আন্তর্জাতিক আইনও শিশুদের প্রতি অমানবিক আচরণ কিংবা ইচ্ছামত শারীরিক দমনকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে।”

ছবি: জীবন আহমেদ/নেত্র নিউজ

হাতকড়া পরানো সেই দুইজন ছেলেকে সেদিন টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়। কেন্দ্রটির ধারণক্ষমতা যদিও ছিল ৩০০, তারপরও ৫২৭জন শিশু গাদাগাদি করে সেখানে থাকছিল। বাড়তি এতগুলো শিশু থাকলেও তাদের দেখভালের জন্য নিয়োজিত কর্মী মাত্র ২৫জন। অথচ এখানকার জন্য লিখিতভাবে বরাদ্দ কর্মীর সংখ্যা ৬৪জন।

অন্য একটি কেন্দ্রেও একইরকম ভিড়-গিজগিজে চিত্র ধরা পড়ে। ২০২৫ সালের ২৩শে জুন, যশোরের পুলেরহাটের শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের (বালক) তত্ত্বাবধায়কের অফিসে থাকা সিসি-টিভি মনিটরে দেখা যাচ্ছিল করিডোরের গুমোট আলোতে কয়েকজন কিশোর চুপচাপ এ-মাথা থেকে ও-মাথা হাঁটাহাঁটি করছে। কারো হাতে ছিল বালতি বা কাপড়চোপড়, সম্ভবত তারা গোসল করতে যাচ্ছিল। তাদের বয়সও আনুমানিক ১৩ অথবা ১৪। স্ক্রিনে তাদের দিকে খেয়াল রাখার মত কোনো কর্মী দেখা যায়নি।

কেন্দ্রটি পরিচালনার জন্য সরকারিভাবে যদিও ৪৯টি পদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে, অথচ কর্মরত আছে মাত্র ১৭জন। প্রধান তত্ত্বাবধায়ক মনজুরুল হাসানকে পরিচ্ছন্নতা ব্যবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জানান যে রুমগুলোর ভেতরে কোনো ওয়াশরুম নেই। প্রতিটি তলায় পাঁচ-ছয়টি যৌথ টয়লেট রয়েছে। প্রতিটি তলায় প্রায় ১০টি করে রুম, এবং প্রতিটি রুমে ৫ থেকে ৭জন শিশু থাকে।

কেবল এই সংখ্যাগুলোর দিকে তাকালেই যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের সংকটটা বোঝা যায়। ১৫০ শিশুর জন্য নির্মিত কেন্দ্রটিতে এখন রাখা হয়েছে ২৫৮জনকে, তাও ৩০ বছর পুরনো দুইটি ভবনে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের ২০২৫ সালের ১১ই জুলাইয়ে প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, খুলনা, বরিশাল ও রংপুর বিভাগের ৩২টি জেলার শিশু এখানে রয়েছে।  ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে গাজীপুর সদর উপজেলার কোনাবাড়িতে অবস্থিত মেয়েদের জন্য বরাদ্দ কোনাবাড়ি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রটি একমাত্র কেন্দ্র যা অতিরিক্ত ঘিঞ্জি নয়। ১১ জুলাইয়ের হিসাব অনুযায়ী, ১৫০জনের ধারণক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও ৮৮জন কিশোরী এখানে বাস করে। কর্মীর সংখ্যা এখানে ২৭, যেখানে সরকারের অনুমোদিত কর্মীর সংখ্যা হলো ৩১।

কেন্দ্রের বাইরের পরিস্থিতি অবশ্য একদমই আলাদা এক সংকটের দিকে নজর ফেরায়। কোনাবাড়ি  শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের এক দারোয়ানের ভাষ্য অনুযায়ী, সেখানে পাহারায় থাকে মাত্র ৩ জন, অথচ প্রয়োজন আছে ১৩জনের।

ক্ষমতানুক্রম ও নির্যাতনের ঘটনা 

বাংলাদেশের তিনটি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে ছাড়া পাওয়া অন্তত ১৬জন শিশুর সাক্ষাৎকারে একটি উদ্বেগজনক বাস্তবতা ধরা পড়েছে। যথাযথ তদারকি না থাকায় পুরনো বা দীর্ঘমেয়াদি বন্দীরা প্রায়ই নতুন বা অল্পবয়সীদের ওপর জোর খাটায়। সাক্ষ্য অনুযায়ী, ক্ষমতার এই অলিখিত স্তরবিন্যাস এক ধরনের জবরদস্তি, সহিংসতা ও দায়মুক্তির চক্রকে জিইয়ে রাখে। 

আকিবুল টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে এক বছর কাটিয়েছে। কয়েকজনের মধ্যে হাতাহাতির সময় একটা ছেলেকে ভুলক্রমে ছুরিকাঘাত করা হয়, আর সেখান থেকেই আকিবুলকে নিয়ে আটক করা হয়। যদিও অনেকগুলো ছেলেই এই ঘটনার সাথে জড়িত ছিল, তবু শুধু তাকেই গ্রেপ্তার করে দায়ী করা হয়। 

“[কেন্দ্রে] নতুন ছেলেদের ওরা প্রায়ই মারধর করত,” জানায় ১৭ বছর বয়সী আকিবুল, “আমরা অভিযোগ করতাম, কিন্তু কর্মীরা কখনো ওদের শাস্তি দিত না। যেন এক অলিখিত নিয়ম: নতুনদের কষ্ট পেতেই হবে।”

বন্দী শিশুদের অভিভাবকেরাও একই ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। “কর্মীরা শুধু মাথা নাড়ে আর বলে যে ব্যবস্থা নেবে,” বলেন ইতি আক্তার, যার কন্যা বর্তমানে কোনাবাড়ি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে আছে— “কিন্তু কিচ্ছু বদলায় না।” যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে কিছুদিন আগেই ছাড়া পাওয়া সজিব নিজের অভিজ্ঞতা জানায়। প্রথমে মোংলায় একটি নৌকায় তাকে পাওয়া যায়। চুরির অভিযোগে সন্দেহভাজন হলেও তার বয়স বিবেচনা করে তাকে তখন ছেড়ে দেওয়া হয়। দুই বছর পরে, ২০২৫ সালে সেই একই মামলা আবার সামনে আসে, এবং এবার তাকে “যথেষ্ট বড়” বিবেচনা করে আটক করা হয়। 

সে জানায়, কেন্দ্রের বড় ছেলেগুলো প্রায়ই ছোটদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করত। আর কোনোরকমের ঝামেলা হলে, আদিম যুগের অদ্ভুত সব পদ্ধতিতে তাদের শাস্তি দেওয়া হতো, যেমন জোর করে উঠ-বস করানো অথবা কান ধরে পুরো ভবন ঘোরানো।

এই যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রেই ২০২০ সালের ১৩ই আগস্ট বন্দী কিশোরদের দুইটি দলের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ ঘটে। সেই সংঘর্ষে তিনজন কিশোর নিহত এবং আরো ১২জন আহত হয় বলে জানা যায়।  

অপরাজেয় বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক, ওয়াহিদা বানু ইতিবাচক পদ্ধতিতে কর্মীদের শৃঙ্খলামূলক প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, “‘অবাধ্য’ হিসেবে চিহ্নিত শিশুদের দায়িত্বশীল কাজে যুক্ত করা ভালো ফল এনে দিতে পারে, যেমন অন্যদের পড়াশোনায় সাহায্য করা, পরিচ্ছন্নতাবিধিতে সহায়তা করা, কিংবা ছোট ছোট গ্রুপ কার্যক্রম পরিচালনা করার মত কাজ।”   

এছাড়াও তিনি বিদ্যমান সুরক্ষা আইন বাস্তবায়নে গাফেলতির বিষয়ে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেন। “বাংলাদেশে শারীরিক শাস্তি দেওয়া আইনত নিষিদ্ধ, কিন্তু খুব কম মানুষই এ আইন সম্পর্কে জানে, এবং এ ব্যাপারে সরকারি তদারকিও অত্যন্ত সীমিত।”

ছবি: জীবন আহমেদ/নেত্র নিউজ

স্বাস্থ্যসেবার বর্তমান দশা

ফোনে আকিবুলের কণ্ঠ স্থির ছিল, তবু ভেতরে লুকানো ছিল এক ধরনের ক্ষোভ। “পানির সংকট সবসময় লেগেই থাকত। আমাদের এখানে একটাই মাত্র কল ছিল, আর একবারে দশজন ছেলের গোসলের জন্য মাত্র ১৫ মিনিট সময় দেওয়া হতো। আমাদের চামড়ায় লাল লাল ফুসকুড়ি উঠে থাকত। সারাক্ষণ চুলকাতো।”

শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে বসবাস করা এক ডজন শিশু বলেছে যে, সেখানকার ভিড়-গিজগিজে পরিবেশ ও অপর্যাপ্ত গোসলখানার কারণে তারা বারবার চর্মরোগ ও ইনফেকশনের শিকার হয়েছে। 

শুধু এটুকুই নয়, কেন্দ্রগুলোর জন্য বরাদ্দকৃত বাজেট আরেকটি উদ্বেগের কারণ। যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের প্রধান তত্ত্বাবধায়ক মনজুরুল হাসান জানান, প্রতিটি শিশুর চিকিৎসার জন্য মাসিক বরাদ্দ মাত্র ১০০ টাকা। 

“কখনো কখনো বাচ্চারা মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে, কারো মাথায় চোট লাগে, কিন্তু এজন্য সরকারের কোনো জরুরি তহবিল নেই। আমাদেরকেই এসবের ব্যবস্থা করতে হয়। সত্যি বলতে, একশ টাকায় এখন তো এক পাতা প্যারাসিটামলও কেনা যায় না।”

সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, মোহাম্মদ সাইদুর রহমান খান বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বলেন, “জরুরি পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষ মিশ্র খাত বা অন্যান্য খাতের তহবিল থেকে টাকা নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। এভাবে ‘কোনোরকমে’ আমরা প্রয়োজনীয় সেবার ব্যবস্থা করি।” 

শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের কার্যক্রমের তদারকির দায়িত্বে রয়েছে সামাজিক কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সমাজসেবা অধিদপ্তর (ডিএসএস)। বিভাগীয় প্রতিক্রিয়া জানার জন্য নেত্র নিউজের অনুসন্ধানের ফলাফল মোহাম্মদ সাইদুর রহমান খানকে জানানো হয়েছিল, প্রতিবেদনে যা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে জানতে চাইলে প্রধান তত্ত্বাবধায়ক দাবি করেন যে, “সাইকোসোশ্যাল কাউন্সেলিং”-এর ব্যবস্থা রয়েছে। তবে সাবেক বন্দীদের অনেকে জানিয়েছে, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তাদেরকে কখনো কোনো ধরনের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয়নি, এমনকি এরকম কিছুর জন্য আহ্বানও করা হয়নি।

এছাড়া মনজুরুল হাসান জানান, প্রতিটি শিশুর জন্য মাসে ৪,০০০ টাকা বরাদ্দ থাকে খাবার ও সংশ্লিষ্ট খরচের জন্য। ভেঙে হিসাব করলে দেখা যায়, এই টাকা দিয়ে দিনে চার বেলা করে মাসে ১২৪ বেলার খাবার যোগাতে হয়, যাতে প্রতি বেলার জন্য মাত্র ৩৩.৩৩ টাকা থাকে। আবার রান্নার জ্বালানি বা মসলা বাদ দিলে প্রতি বেলার খাবারের জন্য মাত্র ২৫ টাকা থাকে।

“সকালে আমরা সাধারণত ভর্তা আর ভাত খেতাম। দুপুরে মাছ, আর রাতে বেশিরভাগ সময়ই থাকত শাক-সবজি,” মনে করে জানাল আকিবুল।

“খাবারের বাজেট সরকার থেকে নির্ধারিত হয়, আমরা নিজেদের মত তা বদলাতে পারি না। তবে বরাদ্দের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য আমরা সক্রিয়ভাবে কাজ করছি,” জানান সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ সাইদুর রহমান খান।

আবার অধিকাংশ বাসিন্দার বয়স নয় থেকে আঠারোর মধ্যে হলেও, শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রগুলোতে শিশুদের জন্য কেবল প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা এবং ন্যূনতম কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। 

“আমার মেয়ে মাদ্রাসায় সপ্তম শ্রেণিতে পড়ত,” বলেন ইতি আক্তারের মা, যার সন্তান আট মাসেরও বেশি সময় ধরে কোনাবাড়ি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে আটক রয়েছে। “কিন্তু কোনাবাড়িতে আসার পর থেকে ওর পড়াশোনা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।”

মহাপরিচালক খান ব্যাখ্যা করেন যে, আদালতের নির্দেশে শিশুদের খুব স্বল্প সময়ের জন্য এসব কেন্দ্রে রাখা হয়, যার কারণে দীর্ঘমেয়াদি শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়ে যায়। তিনি বলেন, “আমরা এর প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করি এবং ধীরে ধীরে এ ব্যাপারে সোচ্চার হচ্ছি।”

তিনি আরো জানান, বর্তমানে দুটি নতুন শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। রাজশাহী-বগুড়া-রংপুর অঞ্চলের জন্য জয়পুরহাটে একটি এবং চট্টগ্রামের রৌফাবাদে আরেকটি। 

কিন্তু বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলেছেন, যেখানে বিদ্যমান কেন্দ্রগুলোতেই শিশুদের যথাযথ যত্ন ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করা যাচ্ছে না, সেখানে এ-ধরনের প্রতিষ্ঠান আরো বাড়ানোর আসল উদ্দেশ্য কী? 

পারিবারিক সাক্ষাতের সুযোগ 

ঈদ-উল-আজহার দ্বিতীয়দিন সকালবেলা। টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের বাইরের রাস্তাগুলো অস্বাভাবিকরকমের নিশ্চুপ। কেন্দ্রের প্রধান দরজার বাইরে বসার বা বিশ্রাম নেওয়ার তেমন কোনো জায়গাই নেই।

দরজার সামনে উদ্বিগ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন এক দম্পতি। জামালপুর থেকে তারা এসেছেন তাদের ছেলে, আয়নালকে দেখতে। ব্যর্থতায়, ক্ষোভে হাত মুঠ করে রাখা বাবার বয়স চল্লিশের কোঠায়। কথা বলার সময় তার কণ্ঠে চাপা ক্রোধ ফুটে উঠছিল। “তারা আমাদেরকে ওর সাথে দেখা করতে দিচ্ছে না।”

নিকাবের আড়ালে কাঁদতে থাকা তার স্ত্রী ঝাপসা চোখে ছোট টিফিন ক্যারিয়ারটার দিকে তাকিয়ে রইলেন। “ভোররাতে ওর জন্য খাবার রান্না করে রেখেছি। রাত ৩টার সময় ঘর থেকে রওনা দিয়েছি, যাতে সময়মত এসে পৌঁছাতে পারি। এখন তারা বলছে যে ঈদের ছুটির কারণে নাকি ছেলের সাথে দেখা করা যাবে না।” 

কথাগুলো বলার সময় তার গলা আটকে আসছিল।

আয়নালের বাবা-মায়ের মত আরো অনেক অভিভাবক জানিয়েছেন যে, দূরদূরান্ত থেকে আসার পর তাদের গেট থেকেই ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এক তরুণ, বয়স বিশের কোঠায় হবে, কপাল থেকে ঘাম মুছতে মুছতে গেট থেকে বেরিয়ে এলো। মাত্রই সে তার ছোট ভাইকে দেখে এসেছে। “আমি এখানে বহুবার এসেছি। তারা আমাদেরকে খোলাখুলি কথা বলতে দেয় না। একজন দারোয়ান সারাটাক্ষণ কাছে দাঁড়িয়ে থাকে। কাজের কোনো কথাই ঠিকমত বলা যায় না। আমার মনে হয় ভেতরে ৭০০’র বেশি বাচ্চা থাকে।”

এদিকে, কোনাবাড়ি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের প্রবেশপথ শুরু হয় একটি ঢাল দিয়ে। পাশে ছোট্ট একটা ঘরে একজন স্টাফ দর্শনার্থীদের নাম লিখে রাখেন, গেট খোলেন, আর অননুমোদিত আসা-যাওয়ার দিকে নজর রাখেন। লম্বা পথ ধরে গেলে দুটি প্রধান ভবন দেখা যাবে— মেয়েদের থাকার জন্য একটি চারতলা ভবন, যার জানালার কাচ ভাঙা, আরেকটি ভবন স্টাফদের জন্য। গার্ডদের দেওয়া তথ্যমতে, সেখানে পরিবারের সদস্যদের প্রতি মাসে কেবল দুই দিন, ৭ এবং ২২ তারিখে সাক্ষাতের অনুমতি দেওয়া হয়।

এর ঠিক উলটো চিত্র দেখা যায় যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে। সেখানে বাচ্চারা প্রতিদিনই বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করতে পারে। জুন মাসের এক প্রচণ্ড গরম দুপুরে, গেট পর্যন্ত পৌঁছানোর অনেক আগেই কেন্দ্রটির গাফেলতির নজির চোখে পড়ল। প্রথম প্রবেশপথে দুইজন আনসার সদস্য ছোট হয়ে আসা ছায়ার নিচে বসে ছিলেন। তাদের একজন ধীরে-সুস্থে নাম লিখছিলেন পুরোনো খাতায়। সরু পথ হয়ে ভেতরের গেটে গিয়ে দর্শনার্থীরা খোলা আকাশের নিচে চোখ কুঁচকে অস্থায়ী ইটের বেঞ্চে বসে অপেক্ষা করছিলেন। অভিভাবকদের জন্য পাশে একটি মাত্র পানির বেসিন রাখা ছিল।

মহাপরিচালক সাইদুর রহমান খান এই অব্যবস্থাপনা স্বীকার করে জানান, জনবল সংকটই এর মূল কারণ। “অভিভাবকদের ঘন-ঘন সাক্ষাৎ কেন্দ্রের দৈনন্দিন কার্যক্রম ও রুটিন ব্যাহত করে।”

ছবি: জীবন আহমেদ/নেত্র নিউজ

কোনাবাড়ি: মূলত “প্রেমে-অন্ধ মেয়েদের” জন্য

২০২৫ সালের ১৫ই জুন, গনগনে সূর্যের নিচে গাজীপুরের কোনাবাড়ি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে বাবার হাত ধরে বেরিয়ে আসে ১৫ বছর বয়সী ফাতেমা। ৩ মাস ২২ দিন পর সে মুক্তি পায়, একটি শর্তে।

“আমি আর ওর সঙ্গে কথা বলব না,” ওয়াদা দিল সে— শুধু নিজের বাবা-মাকে নয়, কেন্দ্রের কর্মকর্তাদেরও। এখানে ‘ও’ হলো সেই ছেলে, যাকে ভালোবাসার সাহস করেছিল ফাতেমা।

ফাতেমার ঘটনাটি কোনো ব্যতিক্রম নয়। কোনাবাড়ি কেন্দ্র পরিণত হয়েছে এমন এক জায়গায়, যেখানে ভালোবাসার টানে বয়স, শ্রেণি, পরিবার ও রীতিনীতির অদৃশ্য সীমানা অতিক্রম করা মেয়েদের আটকে রাখা হয়। তাদের অনেককেই কোনো অপরাধের কারণে বন্দি করা হয়নি, বন্দি করা হয়েছে কেবল পরিবারের অসম্মতিতে প্রেমের সম্পর্কে জড়ানোর কারণে। ফাতেমার ক্ষেত্রে অপরাধটা ছিল অপ্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় পালিয়ে যাওয়া।

পরিবারগুলো, প্রায়শই পুলিশি সহায়তায়, যখন এসব মেয়েদের খুঁজে পায়, তখন তাদেরকে কোনাবাড়ি কেন্দ্রে রেখে আসে “পুনর্বাসন” ও “নিরাপত্তা”র নামে।

ফাতেমা নিশ্চিত করেছে যে, তার ফ্লোরের প্রায় সব মেয়েই একই কারণে সেখানে ছিল: প্রেমের সম্পর্ক। ভেতরে একে বলা হয় “লাভ কেস।”

আরেকজন বন্দী, ইতি, গত আট মাস ধরে কোনাবাড়িতে বন্দী। কোনো অপরাধ সে করেনি, শুধু একটা প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে যা কেউ মেনে নিচ্ছে না। তার মা দৃঢ় অথচ ক্লান্ত স্বরে বুঝিয়ে বললেন, “ও যদি ওয়াদা করে যে আর কোনোদিন ওই ছেলের কাছে ফিরবে না, তাহলেই আমরা ওকে ঘরে নেব।”

তৃতীয় আরেকটি মেয়ে, যার নাম গোপন রাখা হলো। চার মাস ধরে কোনাবাড়িতে আটক আছে, তার পরিবারের ভাষায় একটি “বিয়ের কেস”-এর কারণে। তার মা জানান, ১৭ বছর বয়সী মেয়েটি দাবি করে যে, সে বিবাহিত এবং নিজের স্বামীর সঙ্গে থাকতে চায়। কিন্তু আইনের দৃষ্টিতে সে এখনো অপ্রাপ্তবয়স্ক। তার পরিবার আশঙ্কা করছে, ১৮ বছর বয়স হলেই মেয়েটি নিজ মর্জিমত তাদের ছেড়ে চলে যাবে। “তাই এর বদলে তারা ওকে বন্দী করে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে,” বললেন তার মা।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সাইদুর রহমান খান জোর দিয়ে বললেন, রাষ্ট্র-চালিত আশ্রয়কেন্দ্রে কোনো শিশুকে ইচ্ছামত রাখা হয় না। “শুধু আদালতের নির্দেশেই শিশুদের এসব প্রতিষ্ঠানে রাখা হয়। অনেক সময় আদালত শিশুর কাছে জানতে চায়, সে কোথায় থাকতে চায়। যদি সে বাবা-মায়ের কাছে ফিরতে অস্বীকার করে এবং নিজের সঙ্গীকে বেছে নেয়, তবে বয়স ও চলমান মামলার কারণে আদালত সেটি অনুমোদন করতে পারে না। সেই অবস্থায় তাকে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয় তার সুরক্ষার জন্য।”

তবে বিশেষজ্ঞরা এ প্রথার নৈতিক ও আইনি প্রভাব নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। খন্দকার ফারজানা রহমান উল্লেখ করেন, আন্তর্জাতিক মান ও জাতীয় নীতিমালা উভয়ই অপরাধীদের সঙ্গে নিরপরাধ শিশুদের একই স্থানে রাখার বিষয়টি নিষিদ্ধ করেছে। “এটি সংশোধনমূলক নীতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন,” তিনি বলেন।

তিনি ডিফারেনশিয়াল অ্যাসোসিয়েশন থিওরির উদাহরণ টানেন, যেখানে বলা হয়েছে সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে মানুষ অপরাধমূলক আচরণ শেখে। “অপরাধ না করা শিশুদের যদি অভিযুক্তদের সঙ্গে রাখা হয়, তবে এই ঝুঁকি থেকে যায় যে, সেই শিশুরা বিকৃত আচরণ আত্মীকৃত করে নেবে। এতে পুনর্বাসনের গোটা উদ্দেশ্যটাই বিফলে যায়।”

ফরজানা আরো উল্লেখ করেন, জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদের (সিআরসি) ৩৭(সি) অনুচ্ছেদের কথা, যেটি বাংলাদেশ ১৯৯১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়। এতে বলা হয়েছে, বয়স, লিঙ্গ ও অপরাধের ধরন অনুযায়ী হেফাজতে থাকা শিশুদের আলাদা রাখতেই হবে। “কোনাবাড়ির বর্তমান প্রথা সরাসরি সেই আন্তর্জাতিক অঙ্গীকারের লঙ্ঘন,” তিনি যোগ করেন।

ছবি: জীবন আহমেদ/নেত্র নিউজ

অমীমাংসিত মামলা ও আইনি জটিলতা

আইন অনুযায়ী কিশোর সংক্রান্ত সকল মামলা ৩৬০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করার নির্দেশ থাকলেও, কেন্দ্রগুলোতে আটক থাকা অনেক শিশু মাসের পর মাস, কখনো কখনো বছরের পর বছর ধরে আইনি প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতা ও প্রাতিষ্ঠানিক জটিলতার কারণে অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।

মোহাম্মদ মাইনুদ্দিন মোল্লার বয়স বর্তমানে ১৭। ২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা দায়ের করা হয়। মামলার কাগজপত্র অনুযায়ী, সে ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরীর সঙ্গে সম্পর্কে ছিল। জামিনে মুক্তি পাওয়ার আগে দুই বছর সে টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে কাটিয়েছে।

১৬ বছর বয়সী রুবেল হাসানও একই ধরনের অভিযোগের মুখোমুখি হয়। ২০২২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর দায়ের হওয়া মামলায় বলা হয়, সে ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে ছিল এবং তাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল। সেও মাসের পর মাস টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে কাটানোর পর জামিনে মুক্তি পায়।

কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যমতে, বর্তমানে টঙ্গীতে ৬৩জন শিশু রয়েছে, যাদের মামলা এক বছরের বেশি সময় ধরে অমীমাংসিত। যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে এমন ২৬টি মামলা রয়েছে, আর কোনাবাড়িতে রয়েছে পাঁচটি।

এই বিলম্ব প্রসঙ্গে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ সাইদুর রহমান খান বলেন, “আইনি প্রক্রিয়ার বিলম্ব মূলত আদালতের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে। প্রতিটি মামলার নিজস্ব আইনি সময়সীমা থাকে, যা বিচার বিভাগ দ্বারা নির্ধারিত হয়। তবে আমাদেরও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে, বিশেষ করে জনবল ঘাটতির কারণে। এ সমস্যা সমাধানে সরকার এখন ভার্চুয়াল শুনানি চালুর উদ্যোগ নিচ্ছে, যাতে শারীরিকভাবে হাজির থাকার প্রয়োজন কমে এবং আইনি প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হয়।”

নেত্র নিউজের অনুসন্ধানে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রগুলোর ভেতরকার প্রাতিষ্ঠানিক ব্যর্থতার চিত্র উঠে এসেছে; একইসাথে তা রাকিবুলের মতো শিশুদের দিকে মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তাও মনে করিয়ে দিচ্ছে। রাস্তায় বেড়ে ওঠা রাকিবুলকে নিয়মমাফিক কোনো অভিযোগ ছাড়াই দিনের পর দিন কেন্দ্রে বন্দী করে রাখা হয়েছিল এবং সেখানে সে মারধরেরও শিকার হয়।

তার কাছে যখন জানতে চাওয়া হয় রাস্তার জীবন ও কেন্দ্রের জীবনের মধ্যে কোনটাকে সে বেছে নেবে, তখন সে জবাব দেয়, “সব অত্যাচারের পরেও, কেন্দ্রটাই ভালো ছিল। অন্তত মাথার ওপর একটা ছাদ ছিল, আর পাতে খাবার ছিল।”●