সাড়ে তিন দশকের অপেক্ষা শেষে রাকসু নির্বাচন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেমন উচ্ছ্বাস ছিল, প্রার্থীদের পক্ষ থেকে ছিল অনিয়মের অভিযোগও।

সাড়ে তিন দশকের অপেক্ষা শেষে  রাকসু নির্বাচন
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে ভোটদানের পর ভোটারদের আঙুলে অমোচনীয় কালি লাগিয়ে দিচ্ছেন নির্বাচন কর্মকর্তারা। ছবি: জীবন আহমেদ/নেত্র নিউজ

কিছু অনিয়মের অভিযোগের মধ্যেও উৎসবমুখর পরিবেশে দীর্ঘ ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত নয়টি ভবনের ১৭টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।

সকাল ৯টায় ভোটগ্রহণ শুরু হলেও শুরুতে ভোটার উপস্থিতি ছিল কম। তবে ১০টার পর থেকে কেন্দ্রে ভোটার বাড়তে থাকলে ১১টা নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়। শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের অনেকেই জীবনে প্রথমবারের মত ভোট দিয়েছেন এবং ভোট দিতে পেরে তারা উচ্ছ্বসিত। তবে বেলা বাড়তেই আসতে থাকে বেশ কিছু অনিয়মের অভিযোগ।

সকাল থেকেই বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন যে, ভোট দেওয়া শেষে ভোটারদের হাতে যে অমোচনীয় কালি দেওয়া হয় তা দুই ঘষাতেই উঠে যাচ্ছে। অভিযোগের জবাবে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক সেতাউর রহমান জানান, তারা দেশের বাজারের সর্বোচ্চ দামের কালির কলম কিনেছেন এবং ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা দেখে পরিচয় নিশ্চিত করে ভোট গ্রহণ করছেন।

ভোটদানের পর নারী ভোটাররা তাদের ব্যালট পেপার ব্যালট বাক্সে ফেলছেন। ছবি: জীবন আহমেদ/নেত্র নিউজ
স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের ভেতরে জমা হচ্ছে ব্যালট পেপার। রাকসু নির্বাচনে ভোটারদের হল সংসদ ও সিনেট প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য দুটি ব্যালট পেপার দেওয়া হয়। ছবি: জীবন আহমেদ/নেত্র নিউজ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে ভোট দেওয়ার পর একজন ভোটার তার ব্যালট পেপার ব্যালট বাক্সে ফেলছেন। ছবি: জীবন আহমেদ/নেত্র নিউজ

এদিকে “সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ” প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী তাসিন খান নির্বাচনে কারচুপির আশঙ্কা প্রকাশ করে জানান, সৈয়দ ইসমাঈল হোসেন সিরাজী ভবনে স্থাপিত কেন্দ্রের বুথের ভেতর ছাত্রশিবির-সমর্থিত প্যানেলের লিফলেট পাওয়া যাচ্ছে। একই অভিযোগ করেন রোকেয়া হল থেকে সহ-সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী শ্রাবন্তী প্রজ্ঞা ভট্টাচার্য। কেন্দ্রের পোলিং এজেন্টদের সাথে কথা বলে নেত্র নিউজ এই অভিযোগের সত্যটা পেয়েছে।

যদিও রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ ও প্রিজাইডিং অফিসার সাবিনা সুলতানা দাবি করেন, তিনি এই অভিযোগের কোন সত্যতা পাননি এবং তিনি সাংবাদিকদের কাছ থেকেই প্রথম এই অভিযোগ সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।

রাকসু নির্বাচনে ভোট দিতে আসা পুরুষ শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ সারি। ছবি: জীবন আহমেদ/নেত্র নিউজ

কিছুক্ষণ পর ছাত্রদল সমর্থিত “ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম” প্যানেলের সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন আবির অভিযোগ করেন, তাদের পোলিং এজেন্টদের ছবিসহ ভোটার তালিকা দেখতে বাধা দেওয়া হচ্ছে এবং কয়েকটি কেন্দ্রে ছাত্রশিবির-সমর্থিত প্যানেলের ব্যালট নম্বর সম্বলিত কাগজ পাওয়া গেছে, যা আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এই বিষয়ে শিবিরের প্রার্থীরা বলেন, দুই এক জায়গায় শিক্ষার্থীরা টোকেন নিয়ে হয়তো রেখে আসতে পারে, এটা ইস্যু করার মতো কিছু নয়।

এছাড়াও, ছাত্রশিবির-সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা দুপুর ২টায় এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশ করছে এবং ছাত্রদল ও আধিপত্যবিরোধী প্যানেল ভোটকেন্দ্রের একশ মিটারের মধ্যে প্রচার চালাচ্ছে। তারা প্রশাসনকে নিরপেক্ষ থাকার আহ্বান জানান।

ভোটকেন্দ্রের বাইরে নিরাপত্তার দায়িত্বে দুই নারী পুলিশ সদস্য। ছবি: জীবন আহমেদ/নেত্র নিউজ

তবে বড় ধরনের কোনো সহিংসতা বা ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ছাড়াই বিকাল ৪টার দিকে শেষ হয় রাকসু নির্বাচন। প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান, নির্বাচনে প্রায় ২৯ হাজার ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ২০ হাজারের কিছু বেশি ভোটার, যা মোট ভোটারের প্রায় ৭০ শতাংশ। ●

প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন অর্পন ধর।